কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব চাইছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। অর্থাৎ যিনি প্রিন্সিপাল বা অধ্যক্ষ, তিনিই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হবেন। শনিবার (১৮ই ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে কলেজ শিক্ষকদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে এ দাবি জানানো হয়। এর সূত্র ধরে স্কুলের শিক্ষকরাও একই দাবি জানাতে পারেন।
সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’চারটি বাদে বাকি সবগুলোতে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধান অনুযায়ী এ জন্য নাম প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নাম যায় রাষ্ট্রপতির কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একই সঙ্গে উপাচার্য ও কোনো বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা শোনা যায় না।
তবে সম্প্রতি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষণীয়- নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য পদে নিয়োগ দিতে হবে, এমন দাবি জোরালো। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নিজেদের ছাত্র বা ছাত্রীকে নিয়োগ প্রদানে অগ্রাধিকার।
স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা কমিটিতে দুই ধরনের সদস্য থাকেন-মনোনীত ও নির্বাচিত। আর সভাপতির দায়িত্ব কে পাবেন, সেটা ঠিক করে দেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য। এই মনোনয়ন যাদের দেওয়া হয় তাদের কী যোগ্যতা থাকা উচিত? এটাই কাম্য যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান পদে দায়িত্ব পেতে হলে তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হতে হবে শিক্ষার প্রসার ও মান বাড়ানোর বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা। তার সততা, নৈতিকতা, শিক্ষার্থীদের সমস্যা উপলব্ধি- এসব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু বাস্তবে কতটি প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগদান করা হয়? স্কুল-কলেজের ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক ও কমর্চারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বই প্রদান- এসব দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে। ছাত্রীদের পড়ার জন্য বেতন দিতে হয় না। কিন্তু বেতন বাবদ ছাত্রীদের কাছ থেকে যে অর্থ স্কুলের পাওয়ার কথা তার পুরোটা সরকারি তহবিল থেকে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এসব বাবদ প্রতি বছর সরকার বিপুল ব্যয় করে। শিক্ষার যে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে তার পেছনে সরকারের এই বরাদ্দের অবদান অস্বীকার্য। কিন্তু দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা কয়েক হাজার স্কুল ও কলেজের কয়টিতে আয়-ব্যয়ের হিসাবের স্বচ্ছতা রয়েছে, সে প্রশ্ন স্বাভাবিক।
সন্দেহ নেই, অনেক কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যানেজিং কমিটির এমপি-মনোনীত সভাপতির দাপট-দৌরাত্ম্যের কাছে অসহায়। কিন্তু প্রিন্সিপালের হাতে সভাপতির দায়িত্ব এলেই কি এ সমস্যার সমাধান হবে? প্রকৃত শিক্ষানুরাগী গুণী ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব প্রদানে কেন তারা আগ্রহী নন? বাংলাদেশে অনেক প্রিন্সিপাল ছিলেন যারা পাঠদানেও যুক্ত থেকেছেন। একই সঙ্গে প্রিন্সিপাল ও ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব থাকলে পাঠদানের জন্য সময় মিলবে বলে মনে হয় না। কলেজ শিক্ষকদের দাবি থেকে ধারণা মেলে যে, তারা এখন আর পাঠদানের বিষয়টি ভাবছেন না। কেবলই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
আমাদের স্কুল-কলেজের সমস্যা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা আছে, শিক্ষকদের সমস্যা আছে। অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে গলদ আছে। শিক্ষামন্ত্রী কলেজ শিক্ষকদের সমাবেশে স্লোগানের মুখে পড়েছেন। মন্ত্রী যখন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন অনেক শিক্ষক তাদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এমন পরিস্থিতি বিব্রতকর। মন্ত্রীদেরও সমস্যা আছে। সংসদ সদস্যরা দেশের আইন প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত হন। শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের আইন প্রণয়নও তাদের দায়িত্ব। কিন্তু তাদের অনেকেরই আগ্রহ শিক্ষক নিয়োগের কর্তৃত্ব, ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান পদে নিজে থাকা কিংবা পছন্দের ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার কাজের খবরদারি ইত্যাদি বিষয়ে। শিক্ষামন্ত্রীকেও যে আইন প্রণেতাদের কাছে অসহায় থাকতে হয়!
সূত্র: সমকাল