পাঠ্যপুস্তকে ‘ও’ ওড়না ঢুকিয়ে কার স্বার্থসিদ্ধি করা হচ্ছে - Dainikshiksha

পাঠ্যপুস্তকে ‘ও’ ওড়না ঢুকিয়ে কার স্বার্থসিদ্ধি করা হচ্ছে

নাজমুল হক প্রধান |

পাকিস্তান আমলে আমাদের বাপ-দাদারা একটি স্বপ্ন দেখেছিল। গোলাপ ফুলের বাগান হবে পাকিস্তান। সেটি হবে মুসলমানদের আবাসভূমি, সেখানে শুধু মুসলমানরা থাকবে। সাম্প্রদায়িকতা তৈরি হলো, পাকিস্তান সৃষ্টি হলো। পাকিস্তান হওয়ার পর বোঝা গেল এটা গোলাপ ফুলের বাগান হয়নি, এটা ধুতরার বাগান হয়েছে, নেশার বাগান করা হয়েছে। ধর্মটাকে পুঁজি করে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঠিক সেই সময় একটি দেশের স্বপ্ন দেখা হলো যেই দেশটির নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আজকে বলতে দ্বিধা নেই এই ভাবাদর্শের অভাবে এতো উন্নয়নমূলক কাজ করার পরও আমরা নিজেরা নিজেরাই হোঁচট খাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশটাকে ফুলের বাগানের মতো তৈরি করতে চাই। সারা বিশ্বের বাঙালিদের একটাই দেশ। যখন দেশের প্রাচীর ছিল না তখন সেই গানের মতো বলি ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা’। সেই সেরা দেশটাতে আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকার পরও দেখি আমাদের নেতৃত্বে সাঁওতালদের উপর আক্রমণ করা হয়।

ভাবাদর্শের অভাবে অথবা ঠিকভাবে অনুধাবন না করার কারণে আমরা দেখি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আইন দ্বারা তা নিবারণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আইন দিয়ে তো আর রাজনীতি হয় না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করার যে স্বপ্ন সেটি তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের পরিষ্কার থাকতে হবে। যদি পরিষ্কার না থাকি তবে আমাদের পদে পদে ভুল হবে, ধোকায় পড়বো এবং এই ধোকাই আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি উন্নয়নের সবিস্তার তুলে ধরেছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্টায় গ্রামে-গঞ্জে লাখ লাখ পাঠ্যপুস্তক চলে গেছে। মাননীয় স্পিকার, সেই বইয়ে বিভ্রান্তি কি কেউ লক্ষ্য করেছে? বাংলা ভাষা পৃথিবীর ৬-৭টি ভাষার মধ্যে অন্যতম একটি সমৃদ্ধ ভাষা। আমাদের এই উন্নত ভাষার গুণ হলো এই ভাষায় তৎসম, তদ্ভব, আরবি, ফারসি, উর্দু, ইংরেজি বিভিন্ন ভাষার শব্দ এসেছে। সেই ভাষায় সাহিত্য, কবিতা যদি লেখা হয় তাতে কোন সমস্যা হয় না।

আমাদের দেশে কেউ মারা গেল আমরা বলি ওই লোকটি মারা গেছে বা মৃত্যুবরণ করেছে। আমরা কেউ ইন্তেকাল বলি না। পাকিস্তানিরা এটাকে বহুভাবে প্রচলন করার চেষ্টা করেছে কিন্তু হয়নি। আমাদের ধর্মের উৎপত্তিস্থল সৌদি আরবে। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) আমাদের আখেরি জামানার নবী। তিনি রসুল। আহলে কিতাব তাঁর উপর নাজিল হয়েছে। আরবে নামাজকে সালাত বলা হয়। পার্সিয়ানরা খোদা বলতো, সেই সময় আল্লাহও ছিল। পার্সিয়ানরা সেই সময় নামাজ বলতো। গতবার বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয়ে গেল ‘আল্লাহ হাফেজ’। ‘খোদা হাফেজ’ বলা যাবে না।

মহানবী (স.) যখন হুদায়বিয়ার সন্ধি করেন তখন তিনি লিখিয়ে ছিলেন ‘বিস্মিল্লাহির রহমানির রহিম’। বিধর্মীরা বললো আমরা ‘বিস্মিল্লাহির রহমানির রহিম’ মানি না। নবী বললেন তোমরা কি মানো? তারা বললো আমরা ‘বিস্মিল্লাকা আল্লাহুম্মা’ মানি। আল্লাহ আগে থেকেই ছিল। নবী বললেন তাই লেখো। ‘বিসমিল্লাকা আল্লাহুম্মা’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু করলাম।

মোঃ নাজমুল হক প্রধান (পূর্ব হতে): আজকে এখানটায় ‘সালাত’ নামে যে শব্দ পাঠ্যপুস্তকে ঢুকানো হয়েছে- এই সালাতের সঙ্গে বাংলাদেশের লোকেরা সম্পর্ক নেই। যারা আরবি বোঝেন তারা জানেন, ‘সালাত’ মানে নামাজ এবং ‘নামাজ’ ফার্সি শব্দ-এটা বাংলায় গ্রহণীয়। আজকে পাঠ্যপুস্তকে বিভ্রান্তিকর এই সমস্ত জিনিস ঢুকিয়ে, কার স্বার্থসিদ্ধি করার চেষ্টা করা হচ্ছে? আমরা জানি, সার্বজনীন যে-কোন বিষয় পাঠ্যপুস্তকে ঢুকালে তা সবার কাছে গ্রহণীয় হয়।

আমরা ছোটকালে পড়েছি যে, ও-তে ওল, ঔ-তে ঔষধ। আজকে ও-তে ওড়না ঢুকানো হয়েছে। কেন ঢুকনো হয়েছো, আমরা জানি না। আজকে আমি পরিষ্কার বলতে চাই, বাংলা ভাষাকে এত দুর্বল ভাবার কারণ নেই। কারণ, বাঙালি আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি-ধর্মের প্রশ্নে সমস্ত ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা বজায় রেখেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং সেই চেতনায় এই দেশটাকে ফুলের বাগান বানাতে চাই।

আমরা জানি, ১৯৭৫ সালের পরে বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী গোলাপ ফুলের বাগান করতে চেয়েছিল। খালেদা জিয়া জামায়াতও সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে সারেন্ডার করে আজকে তালেবানের বাগান বানাতে চায়, আর পাঠ্যপুস্তকে এসব শব্দ সন্নিবেশ করে বেগম খালেদা জিয়ার তালেবানের বাগান বানাতে সহায়তা করছেন। আমি বলবো- আজকে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আবশ্যিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার জন্য আমাদের যে-পরিমাণ দৃঢ়তা দরকার, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যে সেই দৃঢ়তা আছে। আমরা যদি সেই পরিমাণ দৃঢ়তা না দেখাই তাহলে আমার বিশ্বাস, মাঝপথে ষড়যন্ত্রের কাছে মাথানত করে দেবো।

মাননীয় স্পিকার, আমি জানি, মালি যেমন বাগান থেকে আগাছা পরিষ্কার করে বাগানটাকে সুন্দর ও উপভোগ্য করে; বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এত সংকটের পরেও সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদকে নির্মূল করে বাংলাদেশটাকে সুন্দর ও সুষ্ঠু করার জন্য এবং উন্নত দেশ গড়ার জন্য মালির ভূমিকা পালন করছেন।

আমরা যাঁরা সংসদ-সদস্য আছি, নির্বাচিত প্রতিনিধি আছি, যারা মাঠেঘাটে জনগণের জন্য জরুরি কাজ করি, আমরা জানি এই দেশটাকে সুন্দর সুষ্ঠু করতে হলে, বিশ্বের দরবারে বাংলা নামে একটাই দেশ, সকল বাঙালিদের কাছে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটা আধুনিক রাষ্ট্র হচ্ছে। তার প্রমাণ তো আজকে কিছুক্ষণ আগে মাননীয় সংসদ-সদস্য বিধৃত করেছেন। ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে আমাদের এই দেশ বিশ্বের ২৯তম উন্নত দেশে পরিণত হবে- সেই সময় আজকের এই বিভ্রান্তি আমাদেরকে চোরাবালিতে ঠেলে দিবে।

মাননীয় স্পিকার, যার কারণে আমি মনে করছি, দেশটাকে সত্যিকারভাবে মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী যে-কাজটা চলছে, আমার বিশ্বাস-সেই কাজটা করার জন্য আমাদের আরেকটু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর শাণিত খাপখোলা তরবারির মতো দাঁড়ানো উচিত। আমাদের বিভ্রান্তি আছে, আমাদের সমস্যা আছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক- এত সমস্যা মোকাবিলা করে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।

মাননীয় স্পিকার, আমরা কী জানি না বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করেননি, তারা কী চেয়েছিল? আমাদের নেত্রী চেয়েছিল, জনগণের অস্ত্র ভোট, আর সেই ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করবে। অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির জন্ম যে-জায়গায়, তিনি মনে করেছিলেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ওনার স্বামীর মতো কেউ এসে বলবেন-‘আস্সালামু আলাইকুম, দেশবাসী, বিস্মিল্লাহির রহ্মানির রহিম’।

বাংলাদেশে সেই ঘটনা ঘটেনি। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, কোন জেনারেল যদি রাজনীতিতে আসার অপচেষ্টা চালান- এখনো সময় আছে, সেই দলগুলোর ভুল শুধরিয়ে ক্ষমা চেয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিচরণ করা উচিত। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, যে-সমস্ত জেনারেলগণ আছেন, তারা যদি সেই জেনারেলদের পরিত্যক্ত অথবা তাদের ভুল ক্ষমতা দখল স্বীকার না করেন তাহলে আবারো বাংলাদেশের রাজনীতি ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়তে পারে।

মাননীয় স্পিকার, সেই কারণে আপনার মাধ্যমে মাননীয় সংসদ-সদস্যবৃন্দ এবং দেশবাসীর কাছে আমি এটাই আহ্বান করছি, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অপরাপর যে-শক্তি আছে, তারা বিভ্রান্তিতে আছে, সমস্যায় আছে। এখনো বুঝতে পারেন না, তারা তুলনা করার চেষ্টা করেন ‘জিয়া না-মুজিব’, ‘মুজিব-না-জিয়া’। আমি সেই সমস্ত বামপন্থি বিভ্রান্ত বন্ধুদের বলবো-আর সময় নেই।

এখনো বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সখ্য ছাড়েনি, এখনো গাটছাড়া বেঁধে আছে। সেই কারণে আসুন, যেমন করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘৬৯, ‘৭০, ‘৭১-এ; যেমন করে বঙ্গবন্ধু কন্যার নতৃত্বে ২০১৪ সালের নির্বাচনে-ঠিক তেমন করে সামনে নির্বাচনের লড়াইয়ে এবং সমস্ত কিছুতেই আমরা চূড়ান্তভাবে তাদের পরাস্ত করতে চাই।

 

[নাজমুল হক প্রধান, এমপি: ০৯-০২-২০১৭ তারিখে জাতীয় সংসদ-প্রদত্ত বক্তব্যের অংশ]

সূত্র: দৈনিক সংবাদ

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073089599609375