এনসিটিবি প্রকাশিত পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি ও সাম্প্রদায়িকীকরণের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল প্রকাশিত সংবাদের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঠ্যবইয়ের ভুলের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি।
এরপর ৫ মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি বা প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ক্ষোভও প্রকাশ করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবিকে বারবার তাগাদা দিলেও এর কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
চলতি শিক্ষাবর্ষে এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত পাঠ্যবইয়ের ভুল ও সাম্প্রদায়িকীকরণের ঘটনায় দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। পাঠ্যবইয়ের ভুল সংশোধন করে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার দাবি ওঠে। পাশাপাশি এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে জনমত তৈরি হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য দায়ীদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
সরকার ইতোমধ্যে পাঠ্যবইয়ের ত্রুটি সংশোধনে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু পাঠ্যবই সাম্প্রদায়িকীকরণের সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করা বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, একজন ডিজাইনারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণের নেপথ্যের কারিগরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন।
এসসিটিবির দু-একজন কর্মকর্তা বা একজন ডিজাইনার তো আর হেফাজতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেনি। হেফাজতে ইসলামের সরবরাহ করা তালিকা ধরে ধরে যেভাবে পাঠ্যপুস্তকে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে তাতে বোঝা যায়, নীতিনির্ধারণীর কোন স্তরের ব্যক্তি বা ব্যক্তিগুলো এর সঙ্গে জড়িত। আমরা এ চক্রটিরই সন্ধান চাই এবং দেখতে চাই যে, চিহ্নিত চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মনে হচ্ছে না যে তারা এ কাজে আগ্রহী। আর এ কারণেই উল্লিখিত সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখছে না। এনসিটিবির দু-একজন কর্মকর্তাকে বদলির নামে তারা বিক্ষুব্ধ মানুষের আইওয়াশ করেছে মাত্র।
পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ বা হেফাজতীকরণের অপচেষ্টাকে আমরা সুদূরপ্রসারী একটি চক্রান্ত বলেই মনে করি। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অসাম্প্রদায়িক শক্তি বলে দাবি করে।
অথচ তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থানের অনেক ফোঁকর তৈরি হয়েছে। এটা উদ্বেগজনক। এরচে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, কে বা কারা এ ফোঁকর তৈরি করছে সেটা খুঁজে দেখা বা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন আগ্রহ বর্তমান সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা পড়লে সরকারের ভূমিকা আরও বিতর্কিত হবে। তখন কেউ যদি বলে যে, জ্ঞাতসারেই সরকার পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত পরিবর্তন এনেছিল তখন তাকে দোষ দেয়া যাবে না। সরকার যদি পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ প্রশ্নে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে চায় তাহলে সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করুক এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিক।