পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে বদলি আতংকে সাবেক এপিএসপন্থীরা! - দৈনিকশিক্ষা

পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে বদলি আতংকে সাবেক এপিএসপন্থীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শুদ্ধ বাংলা লিখতে, বলতে কিংবা ভুল সংশোধন করার দক্ষতা না থাকলেও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বড় পদে বদলিভিত্তিক পদায়ন পাওয়া যায়। আর সেজন্য একমাত্র যোগ্যতা সাবেক এপিএসকে ভেট দেয়া।সাবেক এপিএসকে ভেট ও ভোট দিলেই হলো। আরেকটি যোগ্যতা হলো বড় কোনো আমলা বা রাজনীতিবিদের আত্মীয়-স্বজন যাকে ঢাকায় পদায়ন দিতে হবে।

সরকার উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, বড় ধরণের বদলি ও পরিবর্তন আসছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে। বদলি আতংকে রয়েছে সাবেক এপিএসপন্থীরা।

জানা যায়, গত ৯ বছরের মধ্যে ছয়বারই বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটি নিয়ে শোরগোল হয়েছে। সর্বশেষ এবারের পাঠ্যবইয়ে কবিতা বিকৃত করা, উপদেশ বাণী লেখায় ত্রুটি, বঙ্গবন্ধুর মায়ের নাম ভুলসহ নানা ধরনের ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে।

জানা যায়, শিক্ষাজীবনে শিবির-ছাত্রদল, অযোগ্য ও দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িতদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে যাতে সংস্থাটির শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার নাম আছে। তদন্ত ও পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর আরও সাময়িক বরখাস্ত এবং ওএসডি করার মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

২০১০ খ্রিস্টা্বদ থেকে সরকার মাধ্যমিক পর্যায়েও বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। এরপর থেকে এই সংস্থায় বছরে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার টেন্ডার করছে। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের একটি অংশ বই ও শিক্ষাক্রম রচনার চেয়ে মুদ্রণ কাজের দিকে বেশি মনোযোগী। তাই বই ও শিক্ষাক্রমের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকছে। অনেকটা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কর্মকর্তারা। কেউ কেউ সাবেটাজ করছেন বলেও আলোচনা হচ্ছে। যে কারণে বড় ধরণের ভুলত্রুটি  হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এনসিটিবিতে দায়বদ্ধতা ও মনিটরিংয়ের ঘাটতি আছে। এই সংস্থার প্রধান কাজ কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক রচনা। মুদ্রণ কাজ বাড়তি যোগ হয়েছে। এর পেছনেই অনেকে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন। সরকারের উচিত হবে, কারিকুলাম ও পাঠ্যবইয়ের এবং মুদ্রণ কাজ আলাদা করা। অন্যথায় এসব ভুলভ্রান্তি হতেই থাকবে।

এবারের পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য এখন পর্যন্ত একজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দু’জনকে ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডি করা একজন হলেন লানা হুমায়রা খান। তিনি অর্থনীতির শিক্ষক হলেও নিয়োগ পেয়েছেন বাংলার বিশেষজ্ঞ হিসেবে। শুধু তিনিই নন, এনসিটিবির ২৬০ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৬৩ জন প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া। এদের অনেকেই এক বিষয়ের শিক্ষক হলেও নিয়োগ পেয়েছেন অন্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে।

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, এখানে নিযুক্ত অনেকেই বিষয়ভিত্তিক পদে আসীন নন। আমাদের প্রধান কাজ দুটি- কারিকুলাম ও বই রচনা এবং সম্পাদনা। বই রচনা করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা রচয়িতা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। বই সম্পাদনার জন্যও আমরা আউটসোর্সিং করে থাকি। আমাদের কর্মকর্তারাও সম্পাদনা করে থাকেন। আসলে প্রাথমিক স্তরের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক বা কর্মকর্তার প্রয়োজন পড়ে না। কাজ করতে করতে অনেকে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, এবারের তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাও বিকৃত করে ছাপা হয়েছে। এই কবিতা যাচাইয়ের দায়িত্ব ছিল শিক্ষা কর্মকর্তা ড. নাসিমা বেগমের (বাংলার বিশেষজ্ঞ)। কিন্তু তিনিও তো ভুল করলেন।

এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান গাজী মো: আহসানুল কবীর দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, একসময় এনসিটিবিতে সাক্ষাৎকার নিয়ে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হতো। এখন শুধু ঢাকায় রাখার জন্য পদায়ন করা হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের এনসিটিবিতে নিয়োগ করা হলে পাঠ্যবইয়ে এ ধরনের ভুল এড়ানো যেত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক সাবেক এপিএসর সিন্ডিকেট এনসিটিবি নিয়ন্ত্রণ করছেন। বর্তমানে প্রেষণে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের মোট ৬৩ জন কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। ঢাকায় থাকতে এদের মধ্যে ২১ জনই অপেক্ষাকৃত নিচের পদে কর্মরত। এমন ঘটনাও আছে, এদের কাউকে বদলি করা হলে পরদিনই ঢাকায় ফিরে আসেন। কয়েক মাস আগে উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আ. মজিদকে ঢাকার বাইরে বদলি করে পরদিনই ফিরিয়ে আনা হয়। কেলেংকারির দায়ে ওএসডি করা প্রীতিশ কুমার সরকারকে ২০১৩ সালে বদলি করলে একই কায়দায় পরদিন ফিরে আসেন। এর বাইরে অসংখ্য কর্মকর্তা আছেন বছরের পর বছর এনসিটিবিতে।  ইমরুল কীভাবে বোর্ডের সচিব এই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071871280670166