পাঠ্যবইয়ে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ ও বর্তমান প্রেক্ষিত - দৈনিকশিক্ষা

পাঠ্যবইয়ে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ ও বর্তমান প্রেক্ষিত

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি  বর্তমান সময়ের শিক্ষকদের ও মনোতুষ্টি জোগায় বটে ।কবিতাটিতে বাদশাহ আলমগীর তার সন্তানককে দিয়ে শিক্ষকের প্রতি যখন যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন, তখন তাবত দুনিয়ার শিক্ষকগণ আত্ম সম্মানে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। ছোট বেলায় কবিতাটি বহুবার পড়েছি । যতবার পড়েছি, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধায় ততবার মাথা নুয়ে পড়েছে । সাথে  বাদশাহ আলমগীরের প্রতি ও শ্রদ্ধাবনত হয়েছি । কোন শিক্ষক যখন কবিতাটি পড়েন কিংবা পড়িয়ে থাকেন, তখন নিশ্চয় আত্ম সম্মানে তার মনটা ভরে ওঠে। সে এক অন্য রকম মানসিক তৃপ্তি বৈ কিছু নয় ।

কালের বিবর্তনে চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণায় নানা পরিবর্তন এসেছে । জীবন যাত্রা ও জীবনাচরণে আজ কতো ব্যবধান! দেশ-কাল-পাত্র ভেদে অবস্থার ভিন্নতা পরিলক্ষিত । কবির কবিতায় শিক্ষকের প্রতি যে সম্মান দেখানো হয়েছে , আজকালের বাস্তবতায় এর কতটুকু সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় ? আমাদের সমাজে এখন শিক্ষকদের মান মর্যাদায় বিরাট এক দূর্দিন । মুখে অনেকে বলেন, শিক্ষকদের কতই না সম্মান ! শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর !  সেদিন শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে জনৈক অশিক্ষক বক্তা কর্তৃক শিক্ষকদের জাতি গঠনের ‘নিপুন শিল্পী’ বলে আখ্যায়িত করতে শুনলাম। শুনতে ভালই লেগেছে । কিন্তু, যাদের এত সম্মান (!) সে সব শিক্ষকদের দিন অতিবাহিত হয় কীভাবে ?

আমাদের বাংলা ভাষায় যে কাউকে বিশেষায়িত করবার জন্য বিশেষণ পদের অবারিত ব্যবহার । শিক্ষকদের কেবল ভাষা দিয়ে পরিতুষ্ট করে রাখার ক্ষেত্রে সম্ভবতঃ আমরাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।পৃথিবীর অন্য সকল দেশে শিক্ষকদের উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করেই তবে তাদের প্রতি ভাষাগত সম্মান প্রদর্শন করা হয় । শিক্ষকের জন্য এ সম্মানই প্রকৃত সম্মান । আর আমাদের এখানে ? এখানে শিক্ষকদের জীবন মানের খবর নেই।কেবল ভাষাগত বিশেষণে বিশেষায়িত করা। কিন্তু, কেবল কথায় যে চিড়ে ভেজে না-সে কারো অজানা নয় । আমাদের শিক্ষকদের আজকাল অনেকেই ভাল চোখে দেখে না।মুখে মুখে শিক্ষকের গুণকীর্তন দু’ চারজনে করে বটে। সে কতটুকু বা আন্তরিকতা নিয়ে করে, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায় । এ দেশে কত শিক্ষক পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন কাটান, সে হিসেব কে জানে ? কেবল সালাম আর আদাবে পেট ভরে না।পাঁচশ’ টাকার নীচে কোন ডাক্তারের ভিজিট নেই।যে সব শিক্ষক চিকিৎসা ভাতা মাত্র পাঁচশ’ আর বাড়ি ভাড়া এক হাজার টাকা পান,তাদের মর্যাদাটুকু বাঁচে কী করে ? যারা ঈদ বোনাসের টাকা দিয়ে একটা খাঁসি ও কিনতে পারেন না, কবিতার শিক্ষাগুরুর মর্যাদা তাদের কতটুকু তৃপ্তি জোগাতে পারে ?

কবি কাজী কাদের নেওয়াজ বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নের কবি । মূলতঃ তিনিও একজন শিক্ষক ।এক শিক্ষকের কবি মন আরেক শিক্ষকের মর্যাদায় সঙ্গত কারণে উচ্ছসিত হয় । আর আজ থেকে প্রায় একশ’ বছর আগের বাস্তবতা এবং আজকের বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর ফারাক ।

গত কয়েকটা বছর কবি কাদের নেওয়াজের উল্লিখিত কবিতাটি আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল । শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার এ কোন অপকৌশল ছিল কীনা কে জানে?  এ নিয়ে দৈনিকশিক্ষায় অনেক লেখালেখি হয় । এ বছর পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে কবিতাটি পুনরায় সংযোজিত হওয়ায় অনেকেই একে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। অনেকে তাতে শিক্ষকের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবার আলামত মনে করে উচ্ছসিত হয়েছেন । কিন্তু,এ যে কাব্যের স্তুতি । এর বাস্তব প্রতিফলন প্রতিষ্ঠা করা আজ অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে ।

কেবল পাঠ্যবইয়ে ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ প্রতিষ্ঠা করলে কী হবে ? যে দেশে বছরের পর বছর শিক্ষকতা করে অনেকে বেতনটুকু পর্যন্ত পান না-অনেকে অপর্যাপ্ত বেতন পান-কেউ কেউ বৈশাখি ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হয়ে ও পান না-সে দেশের শিক্ষকরা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতা পড়ে কিংবা পড়িয়ে কতটুকু তুষ্ট হতে পারেন ? মোটেই নয় । তাই কেবল কবিতায় নয়, বাস্তবে ও শিক্ষকের মর্যাদা যথাযথ প্রতিষ্ঠা করা আজ একান্ত দরকার হয়ে ওঠেছে । অন্যথায় জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের মর্যাদা একদিন নিজেরাই হারিয়ে ফেলব ।

 

লেখক  :  অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ , কানাইঘাট , সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011709928512573