পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় দেশে স্থাপিত হবে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্ভাব্য উচ্চমানের এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রচলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। তাতে সবাই ভালো করার চেষ্টা করবে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান উন্নীত হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এমনটাই আশা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর ইতিমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার বিভিন্ন দিক নির্ধারণ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অধিদপ্তরের সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) সহায়তায় ‘পিপিপি সেল’ এই কাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে এ বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। পিপিপির আওতায় কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হবে এই কর্মশালায়।
মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পিপিপির আওতায় আবাসিক স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রথমে বিভাগীয় শহর ও পরে জেলা শহরে এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দেবে সরকার। মনিটরিংও করবে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ পরিচালনা হবে বেসরকারি খাতে। আরো কিছু খাতে সরকার ও বেসরকারি খাত ভাগাভাগি করে কাজ করবে।
অধিদপ্তরের পিপিপি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে মানসম্মত আবাসিক স্কুল নির্মাণ করা হলে শিক্ষা আরো যুগোপযোগী হবে। আমাদের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। বিশেষ করে কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউকে, ভারতসহ কয়েকটি দেশের মডেল আমরা অনুসরণ করছি। শুরুতে বিভাগীয় শহরগুলোয় আবাসিক স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর জেলা পর্যায়ে তা সম্প্রসারণ করা হবে। বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে এই ধারণাটাই যেহেতু নতুন, তাই কর্মশালার মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরব। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’
জানা যায়, দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে মাত্র পৌনে ৭০০। অন্যদিকে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন হলেও এখন সরকারই মূলত অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। এই স্তরে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই ব্যয় করে বাজেটের ৬৭ শতাংশ অর্থ। মূলত এসব কথা মাথায় রেখেই ব্যক্তি ও সরকারি উদ্যোগে স্কুল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পিপিপির আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলে প্রয়োজনে বেতন একটু বেশি নির্ধারণ করা হবে। তবে স্কুলের বাইরে প্রাইভেট বা কোচিং করানোর সুযোগ রাখা হবে না। এতে শিক্ষার্থীরা কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা পাবে। আর পিপিপির আওতায় পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাফল্য অর্জন করলে অন্যান্য স্কুলও শিক্ষার্থী হারানোর ভয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হবে।
পিপিপি সেলের কর্মকর্তারা জানান, পিপিপির আওতায় স্থাপন হতে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য সরকার ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি হবে। আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হবে।