পেনশনের টাকা মিলবে কবে - Dainikshiksha

পেনশনের টাকা মিলবে কবে

আবু কাওসার |

ঢাকার ওয়ারির শিক্ষক আমিনুর রহমান। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে অবসরে গেছেন তিনি। ওই বছরেই এককালীন পেনশনের টাকা পেতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পাননি গত চার বছরেও। কবে পাবেন, তাও জানেন না। ব্যনাবেসইসের একজন কর্মচারী তার কাছে ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। বলেছিলেন ত্রিশ হাজার টাকা দিলে অবসর বোর্ডের কর্মচারীদের মাধ্যমে আগেভাগেই পুরো টাকাটা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু রাজি হননি আমিনুর রহমান। বোর্ড অফিসে ধরনা দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত এখন।  অবসরে যাওয়া তার মতো হাজার হাজার শিক্ষক অপেক্ষা করছেন পেনশনের টাকা পাওয়ার। এমন বাস্তবতায়, মান্থলি পে-অর্ডারভুক্ত (এমপিও) শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ার পর যাতে দ্রুত দেড় বছরের মধ্যেই আর্থিক সুবিধা পান, সে জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ জন্য নতুন বাজেটে (২০১৭-১৮) ১০০ কোটি টাকা পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর-উত্তর আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ অর্থের দরকার, সে তুলনায় এ বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ঘাটতি আছে। আগামীতে তাই আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে, তারা অবসরে যাওয়ার দেড় বছরের মধ্যেই আর্থিক সুবিধা পাবেন।’ বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর পেনশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগে। এ ছাড়াও রয়েছে পদে পদে দুর্নীতি।

পেনশনের টাকার দুই উৎস :বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের টাকা দুই উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, কল্যাণ ট্রাস্টে জমা রাখা বিনিয়োগযোগ্য অর্জিত মুনাফা থেকে আয়; অপরটি, শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে ট্রাস্টে জমা রাখা অংশ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্টে ৫৮৯ কোটি টাকা জমা আছে। জমা থাকা এ অর্থ সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখান থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের আয় আসে। এদিকে, আগে শিক্ষকদের ‘মূল বেতনের’ ৬ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হতো। বর্তমানে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাড়তি অর্থ ট্রাস্টে জমা হবে এবং তহবিলের অঙ্ক বাড়বে। এতে আয় বাড়লে অবসরে গেলে আরও বেশি শিক্ষককে আর্থিক সুবিধা দেওয়া যাবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক মান্থলি পে-অর্ডার (এমপিও) বেতন-ভাতা পান।

এর আগে মূলত কল্যাণ ট্রাস্ট এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া টাকা দিয়েই তাদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পূরণ করা হতো। তবে চলতি অর্থবছরে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বেড়েছে। সরকার চাচ্ছে, ট্রাস্টে তারা আরও বেশি অবদান রাখুক। ওই টাকা তো শিক্ষকদের কল্যাণেই ব্যবহার হবে। এ জন্যই বেতন থেকে অতিরিক্ত টাকা কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ বর্তমানে প্রতি মাসে সারাদেশে পাঁচ শতাধিক বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি থেকে অবসরে যান। তাদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ৩৬ কোটি টাকা। অথচ, কল্যাণ ট্রাস্ট এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে কেটে নেওয়াসহ মোট আয় ১৮ কোটি টাকা। সৃষ্ট ঘাটতি মেটাতে এবারের বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়ায় এ খাতে আয় বাড়বে। ঘাটতি কমবে। অডিট আপত্তিসহ কোনো জটিলতা না থাকলে বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার সর্বোচ্চ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই পেনশন পান। এ জন্য প্রতি বছর বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়। জানা গেছে, গেল অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বাবদ ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশন বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ১০০ কোটি টাকা। যদিও চাহিদা এর চেয়ে বেশি। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় জমা পড়া আবেদনের তুলনায় পেনশন পাচ্ছেন খুব কমই। ফলে অনিষ্পন্ন আবেদন জমতে জমতে বর্তমানে তা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কবে এসব আবেদন নিষ্পত্তি হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশন বাবদ ঘাটতি হতো বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। বর্তমানে এ ঘাটতি কমে ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আগামী বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। তখন কোনো ঘাটতি থাকবে না। ফলে অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। বর্তমানে একজন সরকারি চাকরিজীবী অবসরে যাওয়ার পর তার প্রাপ্য মোট পেনশনের অর্ধেক তুলতে পারেন। বাকিটা মাসে মাসে পাবেন। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.028742074966431