প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধার দুইজন শিক্ষক। ওই দুই জেলার দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা আইনে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, সারা দেশে ৯টি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পর এমপিও হচ্ছে। আর সেই আঞ্চলিক অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা, প্রতারক চক্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের যোগসাজশে চলছে এ প্রতারণা। তারা মাউশির একজন পরিচালকের নাম ও স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া চিঠি ইস্যু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি কোনো জটিলতা ছাড়া এমপিও সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো চিঠি মাউশি ইস্যু করে না।
গত বছর ৫ই জুন মাউশি থেকে রংপুর আঞ্চলিক অফিসের ডিডি বরাবর একটি ঠিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কে কৈ কাশদহ দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোছা. শামসুন্নাহার বেগম এমপিওভুক্তির জন্য গত ১৫ই এপ্রিল আবেদন করেছেন। গত ১২ই আগস্ট স্থানীয় সংসদ সদস্য একটি ডিমান্ড লেটার (ডিও) দিয়েছেন। যার স্মারক নং-১০০৪২। এই প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্যতা না থাকায় এমপিও দেয়া সম্ভব না হলেও বর্তমানের প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক প্রাপ্যতা থাকায় এমপিওভুক্তি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হলো। এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক অফিস, মাদরাসা সুপারিনটেনডেন্ট ও আবেদনকারী শিক্ষককে। পুরো চিঠির একটি স্মারক নম্বর দেয়া হয়, যার নং ৪/জি ২৯২১/২০১৬/৫৩৭৩/৪।
মাউশি পরিচালকের চিঠি দেখে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসার তা আঞ্চলিক অফিসে ফরওয়ার্ড করে দেন। চিঠিটি আঞ্চলিক অফিসের ডিডি রফিকুল ইসলাম হাতে পেয়ে তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় উচ্চতর তদন্তের জন্য মাউশিতে ফেরত পাঠান। মাউশি যাচাই-বাচাই করে চিঠির স্মারক নং থেকে শুরু করে চিঠির খাম পর্যন্ত ভুয়া বলে প্রমাণ পায়। পুরো বিষয়ের বক্তব্য জানতে ওই মাদরাসা প্রধান সুপারিনটেনডেন্টকে একাধিক বার পত্র দিয়ে মাউশিতে আনতে পারেনি। গতকাল বক্তব্য দেয়ার জন্য ওই মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আহমেদ আলীকে পাঠান তিনি। কিন্তু এর সঙ্গে তার ন্যূনতম কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে আহমেদ আলী বলেন, আমি কেন এ কাজ করতে যাবো। এটা করলে প্রধান শিক্ষক করবেন। মাউশি ডেকেছেন তাই এসেছি। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক অসুস্থ তাই আমাকে আসতে বলেছেন।
জানা যায়, চিঠিতে মাউশির ওই পরিচালককে তদন্ত কর্মকর্তা দেখানো হয়েছে। তবে তিনি যদি তদন্ত কর্মকর্তা হন তাহলে তার নামে চিঠি ইস্যু হওয়ার কথা নয়। কারণ তদন্ত কর্মকর্তা কোনো চিঠি ইস্যু করে না। তিনি কেবল তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। মূলত এ বিষয়টি দেখার পরই ডিডি বুঝে ফেলেন। এটা জানার জন্য প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিলে তিনি কখনও মেয়ের বিয়ে, কখনও নিজে অসুস্থ বলে সাড়া দিচ্ছেন না। আগামী ৫ই মার্চ তার আসার চূড়ান্ত বলে চিঠি দিচ্ছি। ওই দিন না আসলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই ধরণের চিঠি দিয়ে প্রতারণা করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিশামত উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক স্তরের কয়েকজন শিক্ষক। তাদের সহযোগিতা করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ নাথ বর্মণ। একই কিসিমের চিঠি পেয়ে রংপুর আঞ্চলিক অফিসে ডিডি ধরে ফেলেন। মাউশিতে শুনানির জন্য তাদের একাধিকবার ডেকে আনা যায়নি। প্রধান শিক্ষক মোবাইল নম্বর পর্যন্ত পরিবর্তন করে ফেলেছেন বলে জানান রংপুর আঞ্চলিক অফিসেরেএকজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, তার বক্তব্য জানার জন্য ডেকে পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। কিছু দিন ধরে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের প্রতারণার প্রমাণ আমি মাউশিতে দিয়েছি। সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এসময় তিনি আরও আশংকা প্রকাশ করে বলেন তাদের এমপিও তো প্রায় হয়েই গিয়েছিল।