টাঙ্গাইলের গোপালপুরের চাঁনপুর গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে পাশ্ববর্তী কামাক্ষাবাড়ি গ্রামের হারুন মেকারের বিরুদ্ধে। আর এঘটনায় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি অসহায় পরিবারটি।
সমাজপতিদের বিচারের রায়ে ধর্ষক ৪০হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঘটনাটি রফা করেছে। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধে টালবাহানা শুরু হলে সম্প্রতি বিষটি সংবাদকর্মীদের গোচরে আসে।
মেয়েটির মা জানায়, ওই ঘটনার পর থেকে অপরিচিত যে কোন পুরুষ মানুষ দেখলেই ভয়ে শিউরে উঠে প্রতিবন্ধী শিশুটি। বাড়ির অদূরে একটি মাঠ পাড়ি দিয়ে পাশের সাহাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তৃতীয় শ্রেণির গন্ডি পেরোতে পারেনি। তবে থেমে থাকেনি তার স্কুলে যাওয়া-আসা। অন্যদের তুলনায় বয়সে একটু বড় হলেও স্কুলে সহপাঠী ছোট ছোট শিশুদের সাথেই স্কুলে গিয়ে ক্লাস করার ফাঁকে ফাঁকে খেলা করতো।
তবে ওই ঘটনার পর থেকে স্কুলে আর না গেলে, ওঅজানা কারণে প্রতিদিনের হাজিরা খাতায় রয়েছে তার নাম ও উপস্থিতি। ধর্ষণের ঘটনা এবং স্কুলে উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি কর্মরত শিক্ষকরা। এচিত্র সারা এলাকা জুড়েই। ঘটনা সম্পর্কে সকলেই অবগত হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেননা। এদের মধ্যে দু’একজন যাও কথা বলেছেন তাও অজানা ভয়ে।
ঘটনার বিষয়ে মেয়েটির মা বলেন, মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে নানাভাবে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ঘটনার দিন (গত ২৪ সেপ্টেম্বর) তার বাবা বাড়ি ছিলো না। এ খবর জেনে বাড়িতে আসে পূর্বপরিচিত পার্শ্ববর্তী গ্রামের কামাক্ষাবাড়ি এলাকার মৃত সিরাজ মাষ্টারের লম্পট নরপিচাশ ছেলে হারুন মেকার (৫০)। মেয়েটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চান তিনি। প্রথমে আমি রাজি হইনি। অনেক জোরাজুরি ও মেয়েটির কোন ক্ষতি হবে না বলে অভয় দিলে রাজি হয়ে স্কুল থেকে এনে তার হাতে তুলে দেই। সে মেয়েটিকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে মুখে গামছা বেঁধে অত্যাচার করে।পরে মেয়েটি বাড়িতে এসে পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলে সব ঘটনা খুলে বলে।
সমাজপতিদের চাপের মুখে প্রথম দিকে ধর্ষণের বিষয়ে আমাদের মুখবন্ধ রাখতে বললেও, ধর্ষণের ঘটনাটি আর চাপা না থাকায় গত অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ তারা লোক দেখানো একটি গ্রাম্য সালিশ বসান। সালিশে হারুন মেকারের পাপের ঘটনা প্রমাণিত হলে তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। টাকা পরিশোধে টালবাহানা চললে বিষয়টি আরো আলোচিত হয়। পরে চলতি মাসের ৫ তারিখে ৪০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় সমাজপতিরা।
মেয়েটির বাবা বলেন, আমি বাড়ি ছিলামনা। বাড়ি এসে সব শুনে গ্রামের লোকজনদের জানাই এবং আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে তারা আমাকে তা না করতে দিয়ে বিচারের আশ্বাস দেয়। পরে অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে শালিসে বসে এই সিদ্ধান্ত হয়। সবাই আমাকে মেনে নিতে বলে আমি বাধ্য হয়ে তা মেনে নেই। শনিবার ওই টাকা আমি হাতে পাই ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় তারা।
কামাক্ষাবাড়ি গ্রামের অভিযুক্ত হারুন মেকারের বাড়িতে গিয়ে তার নাম ধরে ডাকলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পরে চতুর হারুন মেকার সাংবাদিক পরিচয় ও ক্যামেরা দেখে নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে সে হারুন মেকার নয় এবং তার নাম বৃন্ত বলে ঘরে তালা লাগিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হালিমুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। একটি বৃদ্ধলোক ওই মেয়েটির শরীরে হাত দিয়েছে এবং তা নিয়ে একটি ঝামেলা হলে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোনায়েম খানের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকায় তা সমাধান করা হয়েছে।
গায়ে হাত দিলে ৪০ হাজার টাকা কেন জরিমানা দিতে হবে ? জানতে চাইলে সে বিষয়ে কোন উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হলাম। এরমধ্যে যতোটুকু জেনেছি তারা আমাদের অগোচোরে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে ইউপি সদস্য মোনায়েম খানের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে আপোষ রফা করেছে। তিনি আরো বলেন, মেয়েটির পরিবার নিরীহ হওয়ার কারণে অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি। তদন্ত করে ওই পরিবারকে সব রকমের আইনি সহায়তা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুমুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের মাধ্যমে অবগত হলাম। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।