প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সরকারি আদেশ জারিতে বাঁধা কোথায়? - দৈনিকশিক্ষা

প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সরকারি আদেশ জারিতে বাঁধা কোথায়?

জহুরুল ইসলাম |

বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু, শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকিকরণ হ্রাস ও জাতীয় শিক্ষানীতি’ ২০১০ এর সফল বাস্তবায়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যার স্বীকৃতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন। শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাকে সকল সাধারণ জনগণের হাতের নাগালের মধ্যে আনার জন্য ইতিমধ্যে যে সমস্ত উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ নেই সেই সমস্ত উপজেলায় ১টি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঐতিহাসিক, যুগোপযোগী ও সাহসিকতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাস্তাবায়নের দাঁড়প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন। ইতিমধ্যে প্রাথমিক তালিকায় থাকা ২৯৯টি কলেজের মধ্যে ২৮৩টি কলেজ দানপত্র দলিল (Deed of Gift) সম্পন্ন করেছে। তাও প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হতে চলছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সরকারি আদেশ জারি হচ্ছে না। চলছে রশি টানাটানি, চলছে দীর্ঘ-সূত্রিতার কর্মকাণ্ড, চলছে ষড়যন্ত্র।

একদিকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও প্রশাসন ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা ও তার সাথে জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় থাকা কলেজ সমূহের স্বার্থান্বেষী মহল অপর দিকে সাধারণ শিক্ষকগণ। প্রথম পক্ষ চাচ্ছে আত্তীকরণ বিধি প্রণয়ন করে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আদেশ জারি হোক আর ২য় পক্ষ চাচ্ছেন জাতীয়করণের আদেশ জারি আগে হোক এবং আত্তীকরণ বিধি পরে হোক। যেহেতু জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাগণ সেহেতু তাদের সাথে জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় থাকা কলেজসমূহের স্বার্থান্বেষী মহল যোগ হওয়ায় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আদেশ জারিতে যে দীর্ঘ সূত্রিতার জন্ম হচ্ছে এতে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্রমেই সন্দেহ দানা বেধেঁ উঠছে। আসলেই কি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আদেশ জারির ক্ষেত্রে আত্তীকরণ বিধিমালার কি কোন সম্পর্ক আছে? এ প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই সেপ্টেম্বর যে ১২টি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ জাতীয়করণের আদেশ জারী হলো কিভাবে? আর উক্ত প্রশ্নটির উত্তর যদি না হয় তবে দানপত্র দলিল সম্পন্ন করা প্রতিষ্ঠানসমূহের জাতীয়করণের আদেশ জারীতে অহেতুক বিলম্ব কেন? এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব কে দেবে?

জাতীয়করণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত শিক্ষা  মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন দেশের জনগণের স্বার্থে সরকার প্রতিষ্ঠান সরকারি করছে, শিক্ষকদের স্বার্থে নয়। তাহলে শিক্ষকরা কি জনগণের অংশ নয়? আবার বলে এটা সরকারের সিদ্ধান্ত, উধ্বর্তন মহল সিদ্ধান্ত দিবে আমরা তা বাস্তবায়ন করব। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরকে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যে সরকার দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্বে আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তার অধীনন্থ অধিদপ্তর। সরকার কি বার বার সিদ্ধান্ত দেবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীতো জাতীয়করণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েই দিয়েছেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহ কেন অহেতুক বিলম্ব করছে? ১৯ তলায় গম্ভীর মুখে আরও বলেন জাতীয়করণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনারা জানতে আসছেন কেন? অথচ তারা আবার সদ্য জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় থাকা অধ্যক্ষদের সাথে গোপন আঁতাত করে যাচ্ছেন এবং গোপন বৈঠকও করে যাচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ কি দাড়ায় ?এসব অবস্থাকে সাধারণ পাঠক কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

১৯৭৮ সাল থেকে বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণ শুরু হয় এবং ১৯৮১ সালে প্রণীত আত্তিকরণ বিধি অনুসারে তৎসময়ের শিক্ষক কর্মচারীগণ আত্তীকৃত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণীত হয়। এই বিধিকে কার্যকর না  করে আইন মন্ত্রনালয়, সংস্থাপন মন্ত্রনালয় ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতামত গ্রহণ না করে বিসিএস শিক্ষা সমিতির তৎকালিন সভাপতির যোগসাজসে ২০০০ সালে আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণয়ন করিয়ে নেয়।

এই বিধিমালায় পূর্বে বেসকারী আমলে কর্মরত অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক, ও প্রভাষকদের সকলেকেই প্রভাষক হিসেবে আত্তীকরণ করা হয়। কিন্তু পূর্বের ১৯৮১ ও ১৯৯৮ সালের বিধিতে এরূপটি ছিল না। কার্যকরী চাকুরীকাল ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করলেও জৈষ্ঠতা নির্ধারণ ও পদোন্নতিতে কার্যকরী চাকরিকালকে গণনা/বিবেচনা করা হয়নি। এসব অসংগতি ও বৈষম্য থাকার পরও সদ্য জাতীয়করণের চূড়ান্ত তালিকায় থাকা ২৮৫টি কলেজকে যখন সরকার জাতীয়করণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাচ্ছে ঠিক তখনই বিসিএস শিক্ষা সমিতির একাংশ ও সদ্য জাতীয়করণ কলেজসমুহের স্বার্থান্বেষী মহল এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে নন-ক্যাডার করার পাঁয়তারা করছে। এরূপ পরিস্থিতিতে ২৮৩টি কলেজের শিক্ষকগণ তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সরকারিকরণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) গঠন করেছেন। সকশিস সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করছে:
১.    অনতিবিলম্বে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা।
২.    বেসরকারি আমলে সরকারী বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত (পাস কোর্স ও ৩য় শ্রেণি/বিভাগ প্রাপ্ত) ও নন-এমপিওভুক্ত (ডিগ্রি স্তরের ৩য় শিক্ষক, অর্নাস ও মাস্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত) সকল শিক্ষককে  শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তকরণ।
৩.    প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের আদেশ জারির দিন থেকে চাকুরি স্থায়ীকৃত শিক্ষকদেরকে চাকুরি নিয়মিতকরণ।
৪.    চাকুরিতে যোগদানের দিন থেকে অভিজ্ঞতা  গণনা করে কার্যকরী চাকুরিকাল নির্ধারণ।
৫.    জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধি ২০০০ অধিকতর সংশোধন পূর্বক শিক্ষক বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন।

বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে আত্তীকরণ বিধি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত জানতে পারছি। যাতে দেখা যাচ্ছে জাতীয়করণের চল্লিশ বছরের ইতিহাস এক কলমের খোঁচাতেই ভেস্তে যেতে বসেছে। এই চল্লিশ বছরের ইতিহাস ও উচ্চ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে প্রণীত বিধি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উপহার বেসরকারী শিক্ষক সমাজকে দিতে চেয়েছিল তা আর উপহার হিসেবে না থেকে উপহাস হিসেবে মূল্যায়িত হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আগে ছিল বেসরকারী আর এখন হচ্ছে নন ক্যাডার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারকে যারা উপহাসে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে তাদেরকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন, আসলে এরা কারা? এরা কি চায়?

এসব প্রশ্নের উত্তরে আমার মনে হয় এরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক, যুগোপযোগী ও সাহসীকতাপূর্ণ সিদ্ধান্তের ফসল ঘরে তুলতে দিবে না। এর বিরূপ প্রভাব যেন সাধারণ মানুষের মধে পড়ে তার জন্য জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার কাজের সাথে জড়িতরা পাঁয়তারা চালাচ্ছে। জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তারা জিও জারিতে বিলম্ব করছে আর জাতীয়করণের সুফল থেকে সাধারণ জনগণকে বঞ্চিত করছে। কলেজ সরকারি করার ঘোষণা এসেছে আর দানপত্র দলিল করা হয়েছে কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেসরকারী আমলে ধার্য্যকৃত টাকাই গ্রহণ করা হচ্ছে। তাছাড়া চূড়ান্ত তালিকায় থাকা এবং দানপত্র দলিল সম্পন্নকরা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অন্য প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ চেয়ে মামলা করছে। যতই দিন যাচ্ছে জিও না হওয়ায় নানামুখী ষড়যন্ত্র ও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে, মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের কতিপয় অতি উৎসাহি সদস্য তাঁদের নিজ নিজ ফেইসবুক (মো. মাঈন উদ্দিন,আইডি নম্বর ২৫৮৭৯, প্রভাষক, বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ, Rashid Ahmed Talukder, Farhana Bilquis, Aklima Akter, Haque, Azad Khan,) আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে  হেয় প্রতিপন্ন করে অশ্লীল ভাষায় আপত্তিকর মন্তব্য Post দিচ্ছে। এইসব অতি উৎসাহি সদস্যরা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নব্য আত্তীকরণ প্রতিরোধ  কমিটি গঠন করে Mohsin Kabir এর নেতৃত্বে ফেইসবুকে একটি Close Group তৈরি করেছে।

প্রজাতন্ত্রের এসব কর্মচারিরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক, যুগোপযোগী ও সাহসিকতাপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিভাবে অবস্থান নিচ্ছে এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাঁধার সৃষ্টি করছে? এছাডাও শিক্ষা ক্যাডারের একদল অতি উৎসাহি সদস্যরা Md. Abdul Haque, মো. মাঈন উদ্দিন, Aklima Akter, Ujjal Ray,Suriya Parvin -দের নেতৃত্বে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি গঠণ করে ফেইসবুকে আরেকটি Close Group তৈরি করে সারাদেশ থেকে চাঁদা তুলে জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় বাঁধা  দিচ্ছে, যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হয় এবং সুফল বর্তমান সরকার যেন না পায়। পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন-এ প্রকাশিত সংবাদ থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে, জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় থাকা কলেজসমূহের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মহোদয়রা  একটি মহলের সাথে গোপন বৈঠক করে যাচ্ছে এবং কি অবৈধ লেনদেনও নাকি করে যাচ্ছে। এই সব কর্মকান্ড সবই জিও জারিকে বিলম্বিত করার কৌশল। কারণ, অধ্যক্ষরাও চান না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয়করণের সুফল পান এবং এর প্রভাব যেন সামনের নির্বাচনে পড়ে। এসব ঘটনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাখে। তাই এসব নানামুখি ষড়যন্ত্র ও পাঁয়তারার অবসানের জন্য দানপত্র দলিল সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সরকারি আদেশ জারি সময়ের দাবী।

জহুরুল ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক, মধুপুর কলেজ, মধুপুর, টাঙ্গাইল।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034079551696777