প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রাথমিক শিক্ষকদের আর্তনাদ - দৈনিকশিক্ষা

প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রাথমিক শিক্ষকদের আর্তনাদ

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

Teacher-acction

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে শিক্ষকদের দুঃসহ যন্ত্রণার আর্তনাদ আপনার কাছে পৌঁছাবে কিনা জানিনা। আপনার শত ব্যস্ততার মাঝে যদি এ আহাজারি আপনার কাছে পৌঁছায় দেরি হলেও এর একটা সমাধান আশা করি।

টঙ্গীবাড়ি উপজেলা মুন্সীগঞ্জের তরুন প্রধান শিক্ষক শ্যাম প্রসাদ দাস প্রধান শিক্ষকদের মানসিক দুঃসহ যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির গেজেটের মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐ ঘোষণার বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। পরিতাপের বিষয় উক্ত ঘোষণার পর থেকে প্রধান শিক্ষকদের টাইম স্কেল বন্ধ রয়েছে।

যে সকল প্রধান শিক্ষাক ৫ হাজার ৫০০ টাকা গ্রেড ১৩ এবং ৫ হাজার ৯০০ টাকা গ্রেড-এ ছিলেন তারা ৬হাজার ৪০০ টাকা গ্রেড ১১ তে উন্নীত হয়েছেন। অন্যদিকে যারা ৮ হাজার অর্থ্যাৎ ১০ নম্বর গ্রেডে ছিলেন তারা সেখানেই আছেন।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পূর্ব থেকেই যারা ৬,৪০০ টাকা অর্থাৎ ১১ গ্রেডে অবস্থান করছিলেন এবং ইতোমধ্যে ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত ৮০০০ টাকা গ্রেড ১০ অর্থাৎ টাইম স্কেল প্রাপ্য হয়েছেন, তাদের তাদের টাইম স্কেল বন্ধ আছে। প্রধানমন্ত্রী যদি ঘোষণা নাও দিতেন, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত যাদের টাইম স্কেল পাওনা হয়েছে তারা ১০ নম্বর গ্রেডে অবস্থান করতেন। বাস্তবতা হলো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে উক্ত গ্রেডের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাকগণ লভবান হওয়ার দূরে থাক, প্রাপ্য ন্যায্য সুবিধাটুকু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়টা মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে কিনা জানা নেই।

সর্বশেষ ঘোষিত বেতন স্কেলে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত যাদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাওনা তারা সেগুলো পাবেন অথচ ভুক্তভোগী শিক্ষকগন সেটারও অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না।

ঢাকার মতিঝিল থানার শিক্ষক ও উদীয়মান লেখক রোকেয় বি সোনিয়া আক্ষেপ করে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর ৯০ ভাগ প্রধানশিক্ষক মাস্টার্স ও সহকারী শিক্ষকদের ৮০ ভাগ গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স। এত যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষকতা করা কি অভিশাপ। সকল শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় থাকার কাথা। অথচ রয়েছে থার্ড ক্লাস মর্যাদায়। শিক্ষক সমাজ লাঞ্ছিত হলেও এ লজ্জা পুরো জাতির।

সাফল্যমন্ডিত সুন্দর সোনার বাংলার ভবিষ্যৎ আমাদের আজকের প্রজন্ম। এই প্রজন্মেও মানুষ্যত্ব বিকাশে একজন শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। এক জন শিক্ষকরে কাছে তার নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার পাশাপাশি সমৃদ্ধ শিক্ষালব্ধ জ্ঞানই হতে পারে শ্রেষ্ট সম্পদ। কোমলমতি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পরম যতেœ পাঠদানের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অনার্স বা বি.এ.পাস উল্লেখ কারা আছে। পূর্বের নিয়োগ নীতি অনুযায়ী বিগত কয়েক বছর পূর্বে নিয়োগকৃত অসংখ্য সহকারী ও কর্তব্যনিষ্টার সাথে এখন পর্যন্ত কাজে নিয়োজিত আছেন।

শিক্ষকেরা বিভিন্ন সময়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষাণ ছাড়াও মার্কিং স্কিম এবং সিইনএত/ ডিপিইন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকতা পেশার জন্য কেবল এই প্রশিক্ষনগুলোই যথেষ্ট নয়। বিএড এবং এমএড প্রশিক্ষণেরও গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষক যারা এইচএসসি সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন তাদের এই প্রশিক্ষণ হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এইচএসসি যোগ্যতায় নিয়োগকৃত শিক্ষকগণ পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ে কর্তব্যের পর বি,এ/ অর্নাস ও মস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হলেও তাদের সার্ভিস বুকে শিক্ষকগত যোগ্যতা সংযোজন করা হচ্ছে না। বলা হয় তারা পরীক্ষার পূর্বে অনুমতি নেননি। কিন্তু অনুমতি চাইতে গেলে বলা হয় চাকরি করে বেতন পাবেন আবার পড়াশোনাও করবেন।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ যে, শিক্ষকেরা যদি বিদ্যালয়ে সফলভাবে কর্তব্য পালনের সময় ঠিক রেখে বিদ্যালয় কার্যক্রম বহিভূত সময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন তাহলে অসুবিধা কোথায়? তাছাড়া একজন শিক্ষক যদি তার দক্ষতা আর সমৃদ্ধির জন্য যেকোন সময়ই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক তার পাঠদান কার্যক্রম সাফল্যেও সাথে বাস্তবায়ন করতে পারবেন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবিস্কার বা কৌশলই পারে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল মেটাতে আর এসব বিষয়ে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই একজন শিক্ষককে প্রকৃত অর্থে যথেষ্ট জানতে হবে তাই শুধু চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একজন শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বা সার্টিফিকেট সার্ভিস বুকে লিপিবদ্ধ করতে পারবে না, এটা কেমন নীতিমালা?

বস্তুত একজন শিক্ষক স্বাভাবসিদ্ধভাবে অদম্য কৌশলী ও বিশদ জ্ঞানের অধিকারী হবেন। কিন্তু সেখানে সহকারী শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণে সীমাবদ্ধতা নিধারণ করে দেয়া হয়েছে সেখানে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ প্রয়োগ সেখানে আড়ষ্টতার স্বীকার হবেই। অথচ এ দেশের ভবিষ্যতের দিশারিদের গোড়া থেকেই যথেষ্ট নৈপুণ্যের সাথে পাঠদান করা উচিত। উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পর একজন শিক্ষক কেবল নিজেকে সমৃদ্ধ করবে তা নয় এটা তার মধ্যে নৈতিক অচরণ, মূল্যবোধ, সহানুভূতি, সামাজিকতা, ধর্মানুভূতি বিকাশের ক্ষেত্র উন্মোচন কারে, যা তিনি তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। এই অধিকতর জ্ঞান অর্জন কি মহাপাপ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। মূলত সারা বিশ্বে সবচেয়ে সম্মানিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকেই উল্লেখ করা হয়।

পূর্বে নিয়োগকৃত এসএসসি পাশ করা শিক্ষকগণ ও মানসম্মত পাঠদান করেছেন। তাই তো অজকের নতুন নীতিমালা বা চাকরির যোগ্যতায় কঠোর নীতিমালা প্রনীত হলে তা শিক্ষা ব্যবস্থায় কতটা সফলতা অর্জন করতে পারছে এটায় আজকের প্রশ্ন। যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের পারও অষ্ঠম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেহেতু শেখানোর কৌশলেও নিত্য নতুন প্রয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে অষ্ঠম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করায় শিক্ষকদের যথেষ্ঠ প্রশিক্ষণ ও পাঠসমৃদ্ধ জ্ঞানের প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দ্বার উন্মোচনে বিরাট বাধা হয়ে আছে নিয়োগপূর্ব নীতিমালা। শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বা এর প্রয়োগে পাঠদান কি দোষের?

আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে নিত্য নতুন পরিকল্পনা প্রহণ করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু, শিক্ষিত জাতি গঠনের হাতিয়ার শিক্ষকদের মেধা বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি কারা হচ্ছে। শিক্ষকদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের আন্তরিক হওয়ার পরিবর্তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আগামী প্রজন্মকে সীমিত জ্ঞান নিয়ে স্বপ্ন দেখার জন্য গড়ে তোলে। এ স্বপ্ন জাতিকে ঠেলে দেয় এক অমাবস্যার অন্ধকারের দিকে। প্রশিক্ষাণ বা উচ্চ শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। একজন শিক্ষক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ফলে হয়ে উঠতে পারেন বহুমুখী কৌশলের অধিকারী। কর্মকর্তাদের ভুলে ঢাকা শহরের খোদ মতিঝিল থানার ৫৬ জন শিক্ষক টাইমস্কেল পাওনা থেকে বঞ্চিত।

টাইমস্কেল, পদোন্নতি, নিয়োগ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের ব্যস্ততার কারণে শিক্ষকগণ সময়মত তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভিসি মহোদয়ের পরিবর্তে শিক্ষা বিভাগের যে কোন উর্ধ্বতন কমকর্তাকে এই দায়িত্ব দেয়া হলে শিক্ষকদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হত। দীর্ঘদিন থেকে এভাবে চলে আসলেও বিষয়টি মনে হয় দেখার কেউ নেই।

সরকারের সকল পর্যায়ে কর্মকর্তারা নতুন জাতীয় স্কেলে বকেয়া বেতনসহ প্রাথমিক শিক্ষকরা বেশির ভাগ উপজেলা নতুন স্কেলে বেতন পায়নি। বকেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। প্রাথমিকের সবকিছুতে বিলম্ব বা তালবাহানা যেন স্বাভাবিকের মতো হয়ে গেছে। এছাড়া প্রাথমিকের সহকারিদের বেতন বৈষম্য দূও করার কাজ ধীরগতিতে চলছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অর্থমন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রী সদয় থাকার পরও আশ্বাসের ২ বছর ফাইল চালাচালির দীর্ঘ সময় পর কোন জটে আটকে আছে।

যেহেতু প্রধানমন্ত্রীই সবশেষ আশা ভরসার স্থল, তাই তার কাছে প্রার্থনা উক্ত বিষয়টার দিকে একটু সুদৃষ্টি দিলে মনে হয় খুব তারাতরি এই শিক্ষকগণ তাদের প্রাপ্য সুবিধাটুকু পেতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কড়া নজরে রক্ষা পাবে প্রাথমিক শিক্ষকগণ। মুক্ত হবে শিক্ষকদের যন্ত্রণা আর শিক্ষকদের পাশাপাশি তাহলেই স্বস্তি পাবে শিক্ষার্থীরা।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010870933532715