ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের খবর ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার রাতে তিনি বলেন, “প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা হয়েছে সকাল ১০টার পর, এর আগে নয়।
“প্রকাশিত সংবাদে যা বলা হয়েছে, সব বানোয়াট।এটা আমলে নেওয়ার দরকার নাই।”
সকালে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষার ইংরেজি অংশের প্রশ্ন আগের রাতে ফাঁস হয়েছে বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
তবে উপাচার্য বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই।
“বরং আমরা এখন খুঁজছি দুষ্টু লোকদের।যারা রাতে পেয়েছে বলে দাবি করছে, তখন কেন তারা কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি? এটা কিন্তু আমাদের ক্ষতি করে, জাতির ক্ষতি করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে।”
পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে এই অভিযোগ কেন করা হয়নি সেই প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “আমি জানি যে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সময়ে প্রশ্ন আউট হয়ে গেছে, তখন শিক্ষার্থীরা পেয়ে গেছে। তখন তো প্রশ্ন আউট হয়েই গেছে।
“তবে তখন পর্যন্ত কেউ যখন প্রশ্ন তুলেনি, সুতরাং এটা আমলে নেওয়া যায় না।”
প্রশ্ন ফাঁসের খবরকে গুজব আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “সেটার উৎস খোঁজার চেষ্টা করতেছি।”
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রশ্ন ফাঁসের কোনো প্রশ্নই উঠে না। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসের ইতিহাস নেই। যদি কেউ বলে থাকে এরকম কোনো কিছু হয়েছে, তাহলে দেখা যাবে যে, বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় এখানে প্রশ্ন করার হয়, তাতে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নেই।”
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিট-এর ভর্তি পরীক্ষার ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সংবাদে দাবি করা হয়েছে যে, পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগের রাতেই প্রশ্নপত্র বা এর একাংশ ফাঁস হয়েছে। এই দাবি অসত্য ও বাস্তবসম্মত নয়।
সংবাদ প্রকাশে বিস্মিত ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন প্রণয়ন ও মুদ্রণ হয় তা এতোটাই গোপনীয়তার মধ্যে করা হয় যে, তাতে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’-এর কোনো সুযোগ নেই। কোনো কোনো গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী আগের রাতে তাদের কাছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পৌঁছে থাকলেও সে বিষয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা প্রশাসনকে অবহিত না করে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ হবার কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদ আকারে প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির পরিকল্পনার অভিযোগ আগের রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনকে আটক করা। তাদের কাছ থেকে জালিয়াতিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।
ওই দুজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকালে পরীক্ষা চলাকালে এক ভর্তি পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি জালিয়াতির মাধ্যমে কেন্দ্রে বসে প্রশ্নের উত্তর পেতে দুই লাখ টাকার চুক্তি করার কথা স্বীকার করেছেন।
ওই তিনজনকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।এর বাইরে পরীক্ষা চলাকালে জালিয়াতির অভিযোগে ১২ শিক্ষার্থীকে আটকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।