বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ এবং এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ বহু পুরনো হলেও এই প্রথম এ সংক্রান্ত একটি মামলার চার্জশিট দেয়া হল। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর মধ্য দিয়ে জাতির কোমর ভেঙে দেয়ার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হল।এ খবরেই বলা হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাধি নিরাময়ের লক্ষ্যে গত বছরের শেষের দিকে কাজ শুরু করে ডিবি। চারটি মামলা দায়ের করে এরই মধ্যে একটির চার্জশিট দাখিলের পাশাপাশি আরেকটি মামলার চার্জশিটও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমাদের দাবি হল, ভবিষ্যৎ শিক্ষিত জাতি গঠনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত সবাইকেই দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে অন্তত ১০টি স্কুল ও ৬টি কোচিং সেন্টারের জড়িত থাকার বিষয়টি খুঁজে পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নেপথ্যের রাঘব-বোয়ালদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ এটা সহজেই অনুমেয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং বিজি প্রেসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া কেবল স্কুল ও কোচিং সেন্টার সংশ্লিষ্টদের পক্ষে প্রশ্ন ফাঁসের মতো বড় ধরনের অনিয়ম করা সম্ভব নয়। ফলে প্রশ্ন ফাঁসের মতো গুরুতর ব্যাধির স্থায়ী নিরাময় করতে হলে নিন্ম-মধ্যম-উচ্চ সব স্তরেই নজরদারি ও অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি প্রদান জরুরি। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মনোবল গঠনের বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার। নকল ও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে ভালো রেজাল্টের ক্ষতিকর দিক ও শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছাত্রদের বোঝানো গেলে দুর্বল নৈতিকমানের ছাত্ররা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করাই যায়।
প্রশ্ন ফাঁস আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এখন আর ভর্তি পরীক্ষা ও পাবলিক পরীক্ষাতেই সীমাবদ্ধ নেই। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতেও অহরহ প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষা বাতিলই এর সর্বশেষ প্রমাণ। এতে শিক্ষিত যুবকদের হতাশা বাড়া ছাড়াও কর্তৃপক্ষের অর্থ এবং সময়ের অপচয় হচ্ছে। এটা সহজেই বোধগম্য, যে ছাত্ররা পাবলিক পরীক্ষায় ভালোভাবে না পড়ে নকল ও ফাঁস প্রশ্নে পাস করেছে, তারাই চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করার সুযোগ খুঁজবে। এই চক্র ভাঙতে হলে পাবলিক পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। সদিচ্ছা দিয়ে আমরা নকল রোধ করতে পেরেছি। প্রশ্ন ফাঁস রোধে উচ্চ মহলের সদিচ্ছা ও অপরাধীদের কঠোর সাজা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সৌজন্যে: যুগান্তর