শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ আট দফা দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসছিল তারা।
এ কারণে সেশনজটের প্রবল শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দাবি মানার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকালের নির্ধারিত সমাবেশে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণারও কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত আপসরফা হয়েছে। আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরছে।
একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে এই আন্দোলন শুরু হয়। গত ২৬ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে ২৭ অক্টোবর দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে।
পরদিন নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনে নামে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিনামার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পলাশী ও বকশীবাজার মোড়ে গেট নির্মাণ, অতিরিক্ত প্রহরী মোতায়েন, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা। তাদের কোনো দাবিই অযৌক্তিক নয়। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা না থাকলে তারা সেখানে যাবে কিভাবে? দাবি পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দিয়েছিল তারা। ওই সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল শিক্ষার্থীরা।
পাশাপাশি এটাও ঠিক, দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলে সেশনজটের শঙ্কাও দেখা দেয়। বুয়েটে প্রতি শিক্ষাবর্ষে দুটি টার্ম। এক টার্মে ১৪ সপ্তাহ ক্লাস ও ল্যাব। ক্লাস-ল্যাব শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ পর চূড়ান্ত পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গিয়ে এরই মধ্যে তিন সপ্তাহ ক্লাস বর্জন করেছে। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা ক্লাসে ফিরে যেতে রাজি হয়েছে। এটি স্বস্তির খবর। তবে যথেষ্ট সময় নষ্ট হওয়ায় বাকি ক্লাস ও ল্যাব শেষ করতে সবার ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।
সেশনজট দেখা দিলে কী সমস্যা হয়, কী বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তা অতীতে অনেকবার দেখা গেছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ এবার তেমনই এক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছিল। শিক্ষক-অভিভাবকদের যাঁরা আগের পরিস্থিতি পার করে এসেছেন, তাঁরা বুয়েটের চলমান পরিস্থিতিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এটাই স্বাভবিক। শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতা হয়েছে। আগামী শনিবার ক্লাসে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের সুনামের স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে এই সমঝোতা জরুরি ছিল। এখন কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে আশা করি।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ