প্রস্তাবিত উচ্চশিক্ষা কমিশন কতদূর? - Dainikshiksha

প্রস্তাবিত উচ্চশিক্ষা কমিশন কতদূর?

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান |

দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল, সময়োপযোগী করা এবং মানসম্মত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। একটি দেশ কতটা উন্নত, কতটা অগ্রসর তা বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফলে এগিয়ে যাওয়ার এ সময়ে দেশের মঙ্গলের জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে হবে। নিন্দুকের নিন্দা-সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে টেকসই উন্নয়নের জন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের জন্য উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩ মে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, উৎকর্ষ সাধন এবং বিস্তৃতির লক্ষ্যে ইউজিসিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা কমিশন আইন-২০১২-এর খসড়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের মন্তব্যসহ মতামত দেয় ইউজিসি। ২০১৩ সালের ১০ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। নীতিগত অনুমোদনের জন্য খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপিত হলে সেটিকে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তরের বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

প্রশ্ন হল, অধীনস্থতা আর স্বায়ত্তশাসন একসঙ্গে চলতে পারে কি? যা হোক, তখন ইউজিসি বলেছিল, এ খসড়ায় কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা হয়নি। উচ্চশিক্ষা কমিশন আইনের সর্বশেষ খসড়ায় বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেই কাজ করবে। কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবের পদমর্যাদা সরকারই নির্ধারণ করবে। সরকারের অনুমোদনক্রমেই কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ইউজিসির তৈরি খসড়ায় বলা হয়েছিল কমিশন হবে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে। স্বাধীনভাবে এ কমিশন যে কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান একজন পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন, পাঁচ সদস্য প্রতিমন্ত্রীর এবং কমিশনের সচিব সরকারের সচিবের মর্যাদা পাবেন। দেশের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নাম পরিবর্তন ও এর প্রশাসনিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ গঠন করার প্রস্তাব দিয়ে একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়াও হয়েছিল। উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের পর এটি পুরোপুরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতামুক্ত হবে। ফলে এটি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে। মন্ত্রণালয়ের একটি উইংয়ের মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব নয় বলে কমিশন মনে করে। কমিশন যে খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল, তা সংশোধন করে ১৩টি স্থানে ‘সরকারের অনুমোদনক্রমে’ শব্দ দুটি যোগ করা হয়েছে। ফলে কমিশনের যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। বর্তমানে ইউজিসি নিজস্ব পদ সৃষ্টি, যোগ্যতা নির্ধারণ ও নিয়োগ- সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে; কিন্তু কমিশন গঠনের পর সে ক্ষমতাও থাকবে না। সিলেবাস কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও তাদের সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। তখন উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ হবে আরও ভয়াবহ। ভেঙে পড়বে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার অবকাঠামো।

পূর্ণমন্ত্রীর কিংবা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার বিষয় এটি নয়। বিষয়টি উচ্চশিক্ষার উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত রেখে এবং স্বশাসন অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ স্বাধীন উচ্চশিক্ষা কমিশনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন যে কতটা সময়োপযোগী, তা নতুন করে বলার দরকার নেই। দেশের বাইরে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছেন, তারা হয়তো বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবেন, তুলনা করেন এবং হতাশ হন। সেটা স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত এ কারণে যে, দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খুব একটা এগিয়ে নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি, গবেষণায় মনোযোগের চেয়ে ভোট, সরকারি লোভনীয় পদ, ক্ষমতালাভ ও ক্ষমতা উপভোগ করার ঘোড়দৌড় দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে; কিন্তু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে, সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে।

দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতদূর এগোলো, তারও একটা পরীক্ষা নেয়া দরকার। প্রশ্ন হল আমরা এগিয়ে যাচ্ছি না পিছিয়ে পড়ছি তার মূল্যায়ন কে করবে? বাংলাদেশে নতুন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ যে প্রফেসর ছাড়াই চলছে, তার ক্ষতির দিকটা কে দেখবে? পুরনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর রয়েছেন অনেক, যাদের লিঁয়েন বা ডেপুটেশনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কিছু সময়ের জন্য এনে ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণ সাধনে তাদের মতামত, উপদেশ নেয়া যেতে পারে। অবসর নিয়েছেন এমন অনেক সম্ভাবনাময় অধ্যাপক আছেন যাদের আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে, মেডিকেল কলেজগুলোকে প্রাণোচ্ছল করে তোলা যায় জ্ঞানভিত্তিক মেধাবিকাশের পথ সুগম করে দিয়ে। জ্ঞান-গরিমায় প্রথিতযশা অধ্যাপক ছাড়া উচ্চশিক্ষা কল্পনা করা যায়? উচ্চমানের গবেষণা, একাডেমিক কিংবা উন্নয়নমূলক প্রবন্ধ বা পুস্তক প্রকাশে অনীহা অনেক শিক্ষকের রয়েছে। কারণ বাইরের বিশ্বের মতো গবেষণা, প্রবন্ধ বা পুস্তকের উপযোগিতা আমাদের দেশে চাকরিজীবনে খুব বেশি প্রভাব রাখে না। সময় হলে পদোন্নতি মিলে যায়। বড় বড় পদ-পদবি পেতে বৈশ্বিক মানের গবেষণা, প্রবন্ধ বা পুস্তকের প্রয়োজন পড়ে না।

আমলাতন্ত্র গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার অনবদ্য অংশ। তাই বলে সবকিছুতে আমলাতন্ত্র চলে কি? মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় ইউজিসি অনেক কাজই স্বাধীনভাবে, নিজস্ব পরিকল্পনামতো করতে পারে না বলে ইউজিসি তার লক্ষ্য অর্জনে শতভাগ সফলও হতে পারে না। যোগসূত্র থাকা হয়তো প্রয়োজন, তাই বলে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা নয়। উচ্চশিক্ষার পথ সুগম ও বিকশিত করার জন্য এখন প্রয়োজন আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাবহীন সম্পূর্ণ পৃথক এবং স্বাধীন উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন। স্বায়ত্তশাসন আর আমলাতান্ত্রিক শৃঙ্খল একসঙ্গে চলতে পারে না। আবার মন্ত্রণালয়ের মতোই ক্ষমতাসম্পন্ন ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ও যেমন কাম্য নয়, তেমনি কমিশনের চেয়ারম্যান পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতাও ঠিক নয়।

একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র থাকাটা অবশ্যই দরকার। সেটা থাকতেও হবে, তবে তা যেন শৃঙ্খলাবদ্ধ না হয়। স্বায়ত্তশাসিত উচ্চশিক্ষা কমিশন তার সব কাজের অনুলিপি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে পারে। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে, সরকারের আপত্তি থাকলে, মূল উদ্দেশ্য ভূলুণ্ঠিত হলে, আপত্তি থাকলে মন্ত্রণালয় অবশ্যই উচ্চশিক্ষা কমিশনকে জানাবে। উচ্চশিক্ষা কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উচ্চশিক্ষা কমিশন একই সুতায় গাঁথা হতে হবে। কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। যার কাজ সে করবে। এ নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। উচ্চশিক্ষা কমিশনের কাজ হবে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার পথকে সুগম করা। স্বায়ত্তশাসিত উচ্চশিক্ষা কমিশনের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম কাজ। আমলাতান্ত্রিকতা স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে বেমানান। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে, আলোচনায় বসলে সুষ্ঠু ও সম্ভাবনাময় পথ বেরিয়ে আসবে।

আগামীতে বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ নেতৃত্ব দিতে পারে। উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষাকে শৈল্পিকমানে উন্নিত করা, শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও জীবন ও জীবিকামুখী করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসন, শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে, যা সমাধান করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কবুতর বা হাঁস-মুরগির খোপের মতো গড়ে ওঠা ক্যাম্পাসবিহীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান উন্নীতকরণ, উচ্চশিক্ষার নামে বাণিজ্যিকীকরণের অপচেষ্টা রোধকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ, উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বহুমাত্রিক ধারায় বিকশিত করার জন্য অধিকতর কার্যকর ও যুগোপযোগী উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানে তুলে আনতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উচ্চশিক্ষা ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল’ গঠনের বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার।

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান : পিএইচডি গবেষক, জেঝিয়াং ইউনিভার্সিটি, চীন এবং শিক্ষক (শিক্ষাছুটি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

 

সৌজন্যে: যুগান্তর

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077059268951416