আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দের কোনো খবর নেই। ১ জুন বসছে বাজেট অধিবেশন। ২ জুন অর্থমন্ত্রী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। প্রস্তাবিত বাজেটের যাবতীয় ডকুমেন্ট ইতিমধ্যে ছাপা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতার শেষ সময়ের খসড়া ঘষামাজা চলছে। ছাপাখানায় পাঠানো দু’একদিনের মধ্যে।
অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দৈনিকশিক্ষাকে নিশ্চিত করেছেন যে, নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবনার খবর অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় থাকছে না। অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বরাবরই বাছবিচাহীন ঢালাও এমপিও পদ্ধতির বিপক্ষে।
তারা আরো জানান, শিক্ষা আইন পাসের আগে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিপক্ষে মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ। তাদের মতে, একবার এমপিওভুক্ত হয়ে গেলে শত অন্যায় করলেও তাদেরকে আর বাদ দেয়া যায় না। বাদ দিলে আদালতের দ্বারস্ত হয়। আইনের অভাবে আদালতে জিতে যায় প্রতিপক্ষরা। অন্যদিকে শিক্ষা আইনের খসড়ার কয়েকটি বিধান ও ধারা নিয়ে কয়েকটি পক্ষ ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ১৬২৬টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। এর আগে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে গোটা দশেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়।
২০০৭-২০০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আশায় হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান কয়েকশ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি, সমিতির নেতা ও দালালদের। ওইসবই কর্মকর্তাদের অনেকেই বদলি হয়ে গেছেন। কেউ কেউ অবসরেও গেছেন।
এদিকে এমপিওভুক্তির আশায় রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন/ধর্মঘট ইত্যাদিতে রয়েছেন কয়েক ধরণের কয়েকহাজার শিক্ষক-কর্মচারী। মূলত: বাজেটকে সামনে রেখেই তাদের এ কর্মসূচি। তারা মরিয়া হয়ে আন্দোলন করছেন এই আশায় যে আন্দোলনের তীব্রতায় হয়তো বাজেটে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সরকার।
বাংলাদেশ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি সৈয়দা দিল আশরাফী বলেন, অবস্থান ধর্মঘটে আছি, অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। সারাদেশে আমরা মাত্র কয়েকশ শিক্ষক নন-এমপিও। আমাদের জন্য খুব কম টাকার দরকার হবে।
আন্দোলনরত আইসিটি শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় যেন বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বরাদ্দ থাকে সে লক্ষ্যেই আন্দোলন করছি।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মো. এশারত আলী বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ দেবেন অর্থমন্ত্রী এমন আশা তাদের। তিনি বলেন, আট হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষক বিনা বেতনে বছরের পর বছর পাঠদান করিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব দৈনিকশিক্ষাকে জানান, অনেক অযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের এমপিও থাকা উচিত নয়। এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থী ২০ জন কিন্তু এমপিওভ্ক্তু শিক্ষক-কর্মচারী ২৫ জন। আবার বছরের পর বছর পাবলিক পরীক্ষায় শূন্য পাস। আবার শূন্য শিক্ষার্থীও রয়েছে কয়েকডজন প্রতিষ্ঠানে।
তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এমপিও নির্দেশিকা ও নীতিমালা হালনাগাদ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।