বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যখন নানা ধরনের আলোচনা চলছে, তখনই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম এবং অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শাখা ক্যাম্পাস বন্ধের যে নির্দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা উচ্চশিক্ষায় শৃঙ্খলা-সুনীতি ফিরিয়ে আনবে কি না, তা নির্ভর করছে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ওপর।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন বরাবরই ছিল। বিশেষ করে যখন ব্যাঙের ছাতার মতো মফস্বল শহরগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস খোলার হিড়িক পড়ে যায়, তখন নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকার দারুল ইহসান নামের যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বাধিক শাখা খুলে এত দিন শিক্ষা–বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল।
এর আগে সরকার শাখা ক্যাম্পাস বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও তা পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেনি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে শাখা ক্যাম্পাস চালিয়ে আসছিল, তাতের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় সরকারের ঘোষণা কোনো কাজেই আসবে না।
বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতকের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে, যার বেশির ভাগই অনুমোদন পেয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সে ক্ষেত্রে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ভালো হলে যেমন সরকার তার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে, তেমনি মানের অবনতির দায়ও তাকে নিতে হবে। শিক্ষা মানব গঠনের এমন এক উপাদান, যা নিয়ে নয়ছয় করা গুরুতর অপরাধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ করার সর্বশেষ যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটি অনতিবিলম্বে কার্যকর করবে আশা করি।
তবে ওই সব শাখা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা যাতে ক্রেডিট ট্রান্সফার নিয়ে নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হতে দেওয়া যায় না।
(দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকীয়)