প্রাথমিক শিক্ষা হতে হবে আকর্ষণীয়, ভিত হওয়া চাই মজবুত - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা হতে হবে আকর্ষণীয়, ভিত হওয়া চাই মজবুত

মাছুম বিল্লাহ |

Masum Billah-2সরকারের অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে বই প্রদানসহ নানা পদক্ষেপের ফলে শতভাগ শিশুই বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ঝড়ে পড়ার হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু দক্ষ শিক্ষকদের অভাবে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছেনা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক কোন পর্যায়েই। ইউনেস্কোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল ব্যুরো ফর এডুকেশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের অভাবেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রশিক্ষিত শিক্ষকের হার নেপালে ৯০ শতাংশ, পাকিস্তান ও শ্রীলকায় ৮২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৭৮ শতাংশ, আশ্চর্যজনকভাবে মিয়ানমারে ১০০ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষক স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। এর সাথে শিক্ষকদের যেমন পেশার প্রতি আগ্রহ, নীতি-নৈতিকতা ও কমিটমেন্টের প্রশ্ন জড়িত তেমনি প্রাথমিক শিক্ষা কর্তপক্ষের গাফিলতি এবং দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রতিদিন যদি তের শতাংশ শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন তা হলে শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা?[

 বিদ্যালয়গৃহ এবং এর আঙ্গিনার দিকে তাকালে দেখা যায় বাচ্চাদের আকর্ষণ করার মতো কিছুই নেই সেখানে, কেন বাচ্চারা স্কুলে আসবে? শ্রেণিকক্ষ, বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা ও চারপাশ আকর্ষণীয় ছবি, ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে শিশুদের জন্য স্বপ্নপুরীর মতো সাজিয়ে রাখা উচিত। শিক্ষকদের হতে হবে প্রকৃত বন্ধুর মতো। তাদের পাঠ্যপুস্তক হতে হবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও ছবি সমৃদ্ধ। তবেইনা শিশুরা স্কুলের প্রতি আকৃষ্ট হবে। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার দিকে তাকালে এর কোনটিই দেখা যায় না। বর্তমান শিক্ষা নীতি অনুযায়ী সরকার প্রথম শ্রেণিকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে যাচ্ছে। প্রচলিত পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার মান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শ্রেনিকক্ষে উপস্থিতি, শিক্ষাদান পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। এগুলোর কোন সমাধান না করেই প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপ্তি বাড়ানো কতটু যুক্তিযুক্ত সে কথা আমাদের গভীরেভাবে ভেবে দেখা দরকার।

প্রাথমিকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগই কম। ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদনমতে দেশে প্রাথমিকে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের হার ৫৮ শতাংশ, বাকী ৪২ শিক্ষকই অপ্রশিক্ষিত। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার। ২০১৩ সালে রেজিষ্টার্ড, কমিউনিটিসহ বিভিন্ন ধরনের ২৬ হাজার বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয় একযোগে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম-কানুনের বালাই ছিলনা। পরিচালনা কমিটি টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, আর প্রধান শিক্ষকদের এইচএসসি। এখন তাঁরা মূল ধারায় এসে তাল মেলাতে পারছেনা। জাতীয়করণ করার পর এক লাখ চার হাজার শিক্ষকদের দিকে বিশেষ নজর দেয়নি সরকারও। দেশের শিশুদের একটি বড় অংশ পড়ে ৩০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে। তাদের মানও খারাপ। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণই নেই। বেশির ভাগ শিক্ষকই এসএসসি পাশ। তাদের বেতন ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকগন হচ্ছেন বেকার যুবক-যুবতী, গৃহিণী ও শিক্ষার্থীরা। তাদের নেই কোন ধরনের প্রশিক্ষণ।তার ফল হচেছ ১৩ শতাংশ প্রাথমিকের শিক্ষকগন সৃজনশীল প্রশ্ন বোঝেনই না। ৪২ শতাংশ কিছুটা বোঝেন।

রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশনের এক জরিপে প্রাথমিক শিক্ষার এসব দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে। ৪২ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন কিছুটা বোঝেন কিন্তুু শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারেননা। ৪৫ শতাংশ বোঝেন, ৪৭ শতাংশ শিক্ষক গাইডের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৫ সালের এডুকেশন ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয় ১৯৯৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারী শিক্ষকের হার ছিল ৪৮.৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫৭.২ শতাংশ। তবে নতুন জাতীয়করন করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই হার ২৬.১ শতাংশ, উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ে ৮ শতাংশ । কিন্ডারগার্টেন ও এবতেদায়ি মাদ্রাসায় এই হার যথাক্রমে ১৫ ও ৭ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে এসএসসি ও সমমান পাস করা প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক রযেছেন দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন এসএসসি পরীক্ষায় ৫০ নম্বরের রচনামূলক ও ৫০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন হতো এবং নৈর্ব্যক্তিক ৫০০ প্রশ্ন ব্যাংকের মধ্য থেকে আসতো। শিক্ষার্থীদের তখন রচনামূলকে আলাদা পাস করতে হতো না। নৈর্বক্তিকে পাস করলেই পাস। এসব এসএসসি পাস করা শিক্ষকগন প্রাথমিকে শিক্ষকতা করছেন। তাহলে মান যে কি রকম হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে ২৪ ধরণের প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, যার সংখ্যা এক লাখ ছয় হাজার ৮৫৯। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক আছেন পৌনে পাঁচ লাখ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এনজিও পরিচালিত স্কুল, বেসরকারী স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে যাতে প্রায় এক কোটি ৯৫ লাখ ৮৪ হাজার শিশু পড়ালেখা করে। সরকারি প্রাথমিক (৬৩ হাজারের বেশি) বিদ্যালয়ে প্রায় সোয়া তিন লাখ শিক্ষক আছেন যাদের ৬৪ শতাংশই নারী। এত বিশাল সংখ্যক বিদ্যালয় ও শিক্ষকগনের প্রশিক্ষন ম্যানেজ করা হচ্ছেনা কাঙ্খিত মানের তার ওপর আবার আরও তিনটি ক্লাস আমরা প্রাথমিকের অন্তুভুক্ত করতে চাই।

জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এখন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সব বিষয় দেখভাল করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সমন্বয় সভায় এই নীতিগত সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিন্ধান্তের ফলে চার হাজার ৩৬৫টি বেসরকারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। সমন্বয় সভা সূত্রে জানা গেছে উল্লিখিত সিন্ধান্তের ফলে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায় অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি, এরপর একাডেমিক স্বীকৃতি, পরে ওই সব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির সিন্ধান্ত নেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত শ্রেণি খোলা কিংবা বিষয় খোলার প্রয়োজন হলে তার অনুমতিও দেবে তারা। এতদিন পর্যন্ত এসব সিন্ধান্ত দিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ড গুলো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়োর দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর প্রক্রিয়া আগামী (২০১৬) মে -জুন মাসে শুরু হবে। দেশে বর্তমানে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে এক হাজার ৩৮টি। আর পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হচ্ছে তিন হাজার ৩২৭টি। নতুন করে পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে ৯২টি এবং একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছে ৩২টি প্রতিষ্ঠান। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে একাডেমিক স্বীকৃতি ও পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেবে।

inside-ad] ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে আট বছর করা হবে অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। এটি করতে হলে দুটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের একটি হলো অবকাঠামোগত আবশ্যকতা মেটানো এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া ২০১১-২০১২ অর্থবছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিকে অন্তুর্ভুক্ত করার জন্য নতুন পাঠ্যক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক-নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে ছেলেমেয়ে আর্থসামাজিক অবস্থা ও জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর জন্য পর্যায়ক্রমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার জন্য আন্তমন্ত্রণালয় সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ২০১৩ সালে একটি বাসত্বায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিটি কোন সভাই করেনি ।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগী না হওয়ায় এ কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছিল। ২০১৩ সালে ৫০৩ টি উপজেলা বা থানায় ৫০৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চালু হয় ৫৯৬টি। পর্যায়ক্রমে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং এ বছর খোলা হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

কিন্তু এবার জেএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য অনুমতি নিতে হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিলো সংশ্লিষ্টদের। ২০১৫ সালের মধ্যে আরও ১৭৩ টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা কি প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে আসলেই প্রস্তুুত? আমরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সবাইকে এখনও নিয়ে আসতে পারিনি। যাদেরকে পেরেছি তাদের মধ্যে বৃহৎ অংশই পিএসসি পাস করার পর বাংলা ভালভাবে পড়তে পারেনা, ইংরেজি তো নয়ই। সাধারন হিসেব কষতে পারেনা এমনকি একশত পর্যন্ত গণনাও করতে পারেনা। একথা তো স্বয়ং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী গতবার এক সভায় বলেছিলেন। মন্ত্রী মহোদয় না বললেও প্রাথমিকে বাস্তব অবস্থা এদেশের শিক্ষার সাথে জড়িত সবাই জানেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নেওয়া মানে পঞ্চম শ্রেণির কাঙ্ঘিত দক্ষতা আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ে আরও তিন বছর রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রাথমিক শিক্ষার মান কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা, বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত স্কুলগুলো, এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলো জোর জবরদস্তি করে হলেও শিক্ষার্থীদের পড়া গিলিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেড অর্জন করায়। সেখানেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ , নজরদারী কিংবা মনিটরিং কিছুই নেই। এগুলো সব ঠিক না করেই আমরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাকে নিয়ে যাব? তাতে শিক্ষার মান কি আরো কমে যাবে না? প্রাথমিক শিক্ষাকে আমরা যদি ষষ্ঠ শ্রেনি পর্যন্ত করতে পারতাম তাহলে অনেক ঝামেলা এড়ানো যেত এবং মানও ধীরে ধীরে নিশ্চিত করতে পারতাম।

তারপরে আরও কিছু সমস্যার সৃষ্টি হবে। দেশের এক লাখ ছয়হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীতকরণ প্রক্রিয়া তো একটি মহাযজ্ঞ। এটি কি এত তাড়াতাড়ি সম্বব? আবার দেশের প্রায় বিশহাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় যা ষষ্ঠশ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। এখানকার শিক্ষকগন নিজেদের হাইস্কুলের শিক্ষক বলে একটি আলাদা জায়গায় দেখে থাকেন। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক শিক্ষককে প্রাথমিকে আনা হবে আর কিছু সংখ্যক থাকবেন নবম ও দশন শ্রেণিতে পড়ানোর জন্য। শিক্ষার্থীরা নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আবার উচচ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানে ধর্ণা দিবে কারন যেসব স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণি আছে সেখানে তো একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি নেই আবার সেখানকার শিক্ষকগন তো একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য প্রস্তুত নয়।

তাহলে শিক্ষার্থীদের একবার প্রাথমিকে, তারপর মাধ্যমিকে আবার উচচ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য ছুটাছুটি করতে হবে যা বর্তমানেও হচেছ। তাহলে পরিবর্তন কি হলো? স্কুলগুলোকে একবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে, আবার শিক্ষা অধিদপ্তরে ছোটাছুটি করতে হবে। সরকারী দপ্তরে ছুটতে ছুটতে শিক্ষকদের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠে যায় তারপর আবার সেই ছোটাছুটি বাড়ানোরই চেষ্টা?

বেতনের দিক দিয়ে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা এখনো প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। ফলে মেধাবীরা আসছেন না এই পেশায়। তুলনামূলকভাবে মেধাবী কেউ কেউ সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও অল্পদিনের মধ্যেই চলে যান উচচতর বেতনের অন্য চাকরিতে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন ৩৫ হাজার টাকার ওপর এবং তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচচ ডিগ্রীধারী। বাংলাদেশে এতদিন প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা ছিল মেয়েদের ক্ষেত্রে এস এস সি এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে এইচ এস সি। দুই বছর (২০১৪)আগে তা উন্নীত করে মেয়েদের ক্ষেত্রে করা হয় এইচ এস সি এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে স্নাতক। সপ্তাম জাতীয় বেতন স্কেলে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন ছিল প্রায় আট হাজার টাকা। অষ্টম বেতন স্কেলে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে এখন।

রপরেও কি আমরা আশা করতে পারি যে, মেধাবীর এই পেশায় আসবে? যারা আসবে তারা একান্ত ঠেকায় না পরলে আসবে না কারন প্রাথমিক শিক্ষাকে আমরা না শিক্ষকদের জন্য, না শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করতে পেরেছি। মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতো যদি তাদের সামনে উপরে উঠার সিড়ি থাকতো। অর্থাৎ প্রাথমিকের একজন মেধাবী শিক্ষক প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ শিক্ষক হতে পারবেন এবং শিক্ষা বিভাগের সর্বোচচ পদটিও অর্জন করতে পারবেন এই নিশ্চয়তা ও ব্যবস্থা থাকলে অবশ্যই মেধাবীরা প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশায় আসবেন। আর প্রাথমিক শিক্ষার ভিত মজবুত করতে হলে মেধাবীদেরকেই আকষ্ট করতে হবে এই পেশায়।

মাছুম বিল্লাহ : শিক্ষা গবেষক, সাবেক ক্যাডেট কলেজ শিক্ষক, বর্তমানে ব্রাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত।

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076448917388916