ফেসবুক-আসক্তি সত্যিকারের দুর্ভাবনার বিষয়: ড. জাফর ইকবাল - দৈনিকশিক্ষা

ফেসবুক-আসক্তি সত্যিকারের দুর্ভাবনার বিষয়: ড. জাফর ইকবাল

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল |

একটা দৃশ্য কল্পনা করা যাক। আপনি একজন বাবা কিংবা মা। আপনার ছেলেমেয়েরা বড় হয়নি, তারা স্কুল-কলেজে পড়ে। একদিন আপনি বাসায় এসেছেন, এসে দেখলেন আপনার ছেলে বা মেয়েটি টেবিলে পা তুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে সিগারেট টানছে। আপনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করছিস বাবা (কিংবা মা)’? আপনার ছেলে কিংবা মেয়ে হাসি হাসি মুখে বলল, ‘সিগারেট খাচ্ছি  আম্মু (কিংবা আব্বু)!’ তারপর টেবিল থেকে পা নামিয়ে বলল, ‘খাওয়ার পর একটা সিগারেটে টান না দিলে ভালোই লাগে না।’ কথা শেষ করে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে তার নাক দিয়ে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করল। আপনি বললেন, ‘ঠিক আছে বাবা (কিংবা মা) সিগারেটটা শেষ করে হোমওয়ার্কগুলো করে ফেলো।’ কথা শেষ করে আপনি ভেতরে গেলেন, মনে মনে ভাবলেন ‘আমার ছেলেটি (বা মেয়েটি) কতো লক্ষ্মী। বাইরে কোনো ঝুট-ঝামেলায় যায় না। ঘরে থাকে, মাঝে মাঝে সিগারেট খায়!’

আমি জানি, আপনারা যারা স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ের বাবা তারা আমার এই কাল্পনিক দৃশ্যটির বর্ণনা শুনে যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছেন। বলছেন— একজন বাবা কিংবা মা কখনোই তার ছেলে বা মেয়ের এরকম একটা আচরণকে এতো সহজভাবে নিতে পারে না।

অবশ্যই নিতে পারে না এবং কখনো নেয় না। সিগারেট হচ্ছে নেশা। এরকম আরো অনেক নেশা আছে আমরা দৈনন্দিন জীবনে সেগুলো দেখে অভ্যস্ত নই, তাই কাল্পনিক দৃশ্যটিতে অন্য নেশাগুলোর কথা না বলে সিগারেটের উদাহরণটি দেওয়া হয়েছে। আমাদের সন্তান কোনো একটা নেশায় আসক্ত হয়েছে জানতে পারলে আমরা সেটা মেনে নিতে পারব না। আমরা দুশ্চিন্তিত হব, বিচলিত হব এবং সন্তানকে স্বাভাবিক করে তোলার জন্যে পাগল হয়ে যাব। যদি এই বিষয়টা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমরা কীভাবে আমাদের সন্তানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে বসে থাকতে দেই? যে বিষয়টি এতোদিন একটা সন্দেহ বা আশঙ্কা ছিল এখন সেই বিষয়টি গবেষণা জার্নালে বের হতে শুরু করেছে। কোকেনে আসক্ত একজন মাদকাসক্ত মানুষকে যদি মাদক খেতে দেওয়া না হয় তাহলে তার মস্তিষ্কে যে কেমিক্যালগুলো বের হয়ে তাকে অস্থির করে তোলে, ফেসবুকে আসক্ত একজন মানুষকে যদি ফেসবুক করতে দেওয়া না হয় তাহলে তার মস্তিষ্কে সেই একই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ছেলেমানুষী বিনোদন নয়, বিষয়টি মাদকে আসক্তির মতো গুরুতর একটি ঘটনা।

একসময়ে পত্র-পত্রিকায়, রেডিও-টেলিভিশনে সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। এখন বিজ্ঞাপন দিতে দেওয়া হয় না, বরং সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে: ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর’, শুধু তাই নয়, ধূমপানকে নিরুত্সাহিত করার জন্যে ধূমপান করার পর ফুসফুসের কী অবস্থা হয় কিংবা ক্যান্সারের বিকট ক্ষত দেখতে কী রকম তার ছবি সিগারেটের প্যাকেটে দিয়ে দেওয়া হয়। আমার ধারণা আজ থেকে চার-পাঁচ বছর পর সারা পৃথিবীতেই কমবয়সী ছেলেমেয়েদের ফেসবুক জাতীয় অনলাইন সোস্যাল নেটওয়ার্কে নিরুত্সাহিত করার জন্যে আইন-কানুন করা হবে, প্রচারণা করা হবে। ফেসবুকে লগ ইন করার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই এটাতে আসক্ত হয়ে গেলে কী কী ভয়াবহ ব্যাপার ঘটে যেতে পারে সেটা নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চরণ করা হবে।

যতদিন এটি না ঘটছে ততদিন আমাদের পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে সবাইকে এটি নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। কারো কারো কাছে নিশ্চয়ই মনে হতে পারে যে আমার পুরো বক্তব্যটা বুঝি এক ধরনের বাড়াবাড়ি। বিষয়টি মোটেও এমন কিছু গুরুতর নয়। কিন্তু আমি মোটামুটি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি বিষয়টা যথেষ্ট গুরুতর। মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে সেটা যথেষ্ট রহস্যময়। একজন ছেলে বা মেয়ে যখন বড় হচ্ছে সেই সময়টাতে সে কীভাবে তার মস্তিষ্ক ব্যবহার করেছে তার উপর অনেকখানি নির্ভর করে তার মস্তিষ্কের গঠনটি কেমন হবে। তাই একজন বড় মানুষের ফেসবুকে আসক্তি দেখে আমি যতটুকু বিচলিত হই তার থেকে অনেক বেশি বিচলিত হই যদি সেটি হয় কমবয়সী একটি ছেলে বা মেয়ের আসক্তি।

২.

আমরা আসলে একটি ক্রান্তিকালের মাঝে বাস করছি। পুরো পৃথিবীটা আসলে একটা খুব বড় ধরনের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখনো জানি না পরিবর্তনটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে। বিষয়টা অনেকটা তেজস্ক্রিয়তার মতো। বিজ্ঞানী মাদাম কুরী যখন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা করেছেন তখন তিনি এই বিচিত্র রহস্যময় বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটার ভয়াবহতার দিকটুকু জানতেন না। ল্যাবরেটরিতে তিনি দিনের পর দিন তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করেছেন এবং নিজের অজান্তে অদৃশ্য তেজস্ক্রিয় রশ্মি তার শরীরকে বিষাক্ত করে তুলেছে, তিনি শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন সেই তেজস্ক্রিয় রশ্মির কারণে।

আমার বর্তমান যুগের ইন্টারনেট কিংবা ফেসবুক আসক্তি দেখে এই তেজস্ক্রিয়তার কথা মনে হয়। আমরা যখন এর সুযোগ-সুবিধে, বৈচিত্র্য এবং বিনোদনে সম্মোহিত হচ্ছি ঠিক তখন অদৃশ্য তেজস্ক্রিয় রশ্মির মতো কিছু একটা আমাদের ভেতরে গুরুতর একটা পরিবর্তন ঘটিয়ে দিচ্ছে। কয়েক বছর আগেও আমরা অনেক বেশি মনোযোগী ছাত্রছাত্রী পেতাম, এখন তাদের মনোযোগ কেন কমে যাচ্ছে? ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন, ফেসবুকের কি এখানে প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে? আজ থেকে দশ বছর পরে হয়তো আমরা জানতে পারব শৈশব-কৈশোরে মাঠেঘাটে ছোটাছুটি করে খেলাধুলা না করে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ছোট একটা স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার কারণে আমাদের কী ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে আমাদের কিছু করার থাকবে না কিন্তু এই মুহূর্তে একটুখানি কমনসেন্স হয়তো আমাদের অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।

আগেই বলেছি আমরা একটা খুব বড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। একটা সময় ছিল যখন সাধারণ মানুষ তার বক্তব্যটা অন্যদের শোনাতে পারতো না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদের কথা ভেবে বলেছিলেন, “…এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা…।” তিনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। কারণ সত্যি সত্যি একেবারে আক্ষরিক অর্থে মূঢ় ম্লান মূকদের মুখে ভাষা দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যটি অন্যরা শুনবে কী না সেটি ভিন্ন কথা কিন্তু একেবারে সাধারণ একজন মানুষ তার কথাটি কিন্তু ইন্টারনেটের কোনো একটা সার্ভিস ব্যবহার করে সবার উদ্দেশ্যে বলে দিতে পারে। কেউ এর শক্তিটুকু অস্বীকার করতে পারবে না। যদি ফেসবুক কিংবা সোস্যাল নেটওয়ার্ক না থাকতো তাহলে সম্ভবত গণজাগরণ মঞ্চের মতো বিশাল একটা আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হতো না, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সপক্ষে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীর মানুষকে একত্র করা সম্ভব হতো না। কাজেই যারা একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এই প্রযুক্তিকে নিজের কাজে ব্যবহার করছেন আমি তাদের এতোটুকু খাটো করে দেখছি না। কিন্তু এই প্রযুক্তি যাদেরকে ব্যবহার করছে আমার দুশ্চিন্তা তাদের নিয়ে।

সবাই হয়তো জানে না, যারা এই প্রযুক্তি গড়ে তুলছে তাদের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ছলে-বলে-কৌশলে কোনো একজনকে তাদের ওয়েব সাইটে কিংবা ্পোর্টালে নিয়ে আসা এবং যত বেশি সম্ভব তাদেরকে সেখানে আটকে রাখা। যারা আমার কথা বিশ্বাস করেন না তাদেরকে বলব— ‘বিবিসি’-এর মতো কোনো সম্ভ্রান্ত একটা নিউজ মিডিয়ার সাইটে যেতে। আশে-পাশে তাকান আপনি কী দেখবেন? সারা পৃথিবীতে কতো গুরুতর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কিন্তু সেখানে তাদের চিহ্ন নেই। একবারে না দিলেই নয়, সেরকম একটি দুটি ঘটনার পাশাপাশি শুধু রগরগে কিংবা চটুল খবর। তার যে কোনো একটাতে ক্লিক করে দেখেন আপনাকে নিজে থেকে তারা একটার পর একটা ভিডিও দেখাতে শুরু করবে, আপনার মনের জোর যদি যথেষ্ট বেশি না থাকে কিছু বোঝার আগেই আপনি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখে দেখে ঘণ্টাখানেক সময় নষ্ট করে ফেলবেন। আপনি যদি এভাবে সময় নষ্ট করার কারণে অপরাধবোধে ভুগে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন আপনি একা নন, সারা পৃথিবীতে আপনার মতো কোটি কোটি মানুষ এভাবে সময় নষ্ট করছে। আপনি কোন্ ধরনের ওয়েবসাইটে গিয়েছেন সেটি বিশ্লেষণ করে আপনাকে লোভ দেখিয়ে দেখিয়ে সেই ধরনের জায়গায় ঠেলে দেবে! শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তির সেবা গ্রহণ করেছেন বলে এই সাইবার জগত্ কিন্তু আপনার সম্পর্কে সবকিছু জানে। আর মাত্র কিছুদিন, তারপর আপনি অবাক হয়ে আবিষ্কার করবেন আপনি যদি একটা সুপারমার্কেটে যান তাহলে সেখানকার কোনো একটা স্ক্রিনে আপনাকে নাম ধরে সম্বোধন করে বলবে, “অমুক সাহেব, শরীরটা কেমন? পেটের ব্যথাটা কী বেড়েছে? আমরা খুব সস্তায় অ্যান্ডোস্কোপি করছি, চলে আসুন তিনতলায়!”

মজার কথা হলো যারা এগুলো দাঁড়া করছেন তারা কিন্তু বিষয়টাকে খুব আধুনিক একটা প্রযুক্তি জেনেই করছেন। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে যে কিছু থাকছে না সে বিষয়ে কিন্তু কারো এতোটুকু মাথাব্যথা নেই। তবে বিষয়টা যে একেবারে কারো নজরে পড়ছে না তা নয়। আমি সেদিন খবরে দেখছি বড় একটা শহরে একটা রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে সেখানে ওয়াইফাই নেই। কেউ স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ নিয়ে যেতে পারবে না। যারা সেখানে ডিনার করতে যাবে তারা সময়টা কাটাবে সামনা-সামনি বসে গল্প-গুজব করে। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ওয়াইফাই নেই, ইন্টারনেট নেই, কারো সঙ্গে চ্যাট করার চাপ নেই। এই বিষয়টা যে একটা রেস্টুরেন্টের আকর্ষণীয় দিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সেটি কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার!

আমরা এখন সবাই দেখি ইন্টারনেটের কোনো পত্র-পত্রিকায় লেখা বের হবার পর তার নীচে মন্তব্য লেখার একটা সুযোগ থাকে। আমার লেখা বের হবার পরও নিশ্চয়ই কেউ না কেউ সেখানে মন্তব্য লিখে ফেলেন—আমি যথেষ্ট বিনয়ের সঙ্গে বলছি আমি কখনো এই মন্তব্যগুলো পড়ি না, আমার ধারণা আমি যদি সেগুলো পড়ি তাহলে হয়তো নিজের অজান্তেই ভালো ভালো মন্তব্য পাওয়ার লোভে পাঠকদের খুশি করার জন্যে লিখতে শুরু করব।

যখন লেখার পিছনে তাত্ক্ষণিক মন্তব্য লেখার একটা সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল তখন অনেকের ভেতরেই একটা ধারণা জন্মেছিল যে এটি নিশ্চয়ই খুব চমত্কার একটা ব্যাপার। পৃথিবীর অনেক পত্র-পত্রিকা কিন্তু টের পেয়েছে যে বিষয়টা আসলে এমন কিছু আহামরি ব্যাপার নয়। কারণ দেখা গেছে যারা মন্তব্য লেখেন, তারা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে লেখাটার বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করেন তা নয়। বেশির ভাগই যা ইচ্ছা হয় তাই লিখে বসে থাকেন। অপছন্দের মানুষ হলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেও সংকোচ বোধ করেন না। এই বিষয়টা সত্যিকার সামাজিক রীতি-নীতির বিরুদ্ধে—আমরা যত অপছন্দই হোক সামনা-সামনি কাউকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করি না। কিন্তু সাইবার জগতে চোখের আড়ালে থেকে এটি করতে কোনো বাধা নেই।

মানুষজন শুধু যে একটুখানি সময় নিয়ে মন্তব্য লিখতে চায় না তাই নয়, তাদের যেন মন্তব্য লিখতে না হয় শুধু একটা ক্লিক করে ‘লাইক’ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে ফেলা যায় সেই ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছে। ‘লাইক’ দেয়া নিয়ে কিছুদিন আগে আমি একটা সত্যি ঘটনা শুনেছি, একটি বাচ্চা মেয়ে ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুলে কিছু একটা পোস্ট করে দিয়ে অপেক্ষা করে আছে যে সেখানে কেউ ‘লাইক’ দেবে। যখন দেখতে পেলো কেউ তাকে খেয়াল করে ‘লাইক’ দিচ্ছে না তখন সে নিজেই আরো একটা একাউন্ট খুলে সেই একাউন্ট থেকে নিজেকে ‘লাইক’ দিতে থাকলো!

বিষয়টা একটা কৌতুকের বিষয় কিন্তু তার পরেও এটা শুনে আমি কেন জানি একটু আহত অনুভব করেছি। আমার মনে হয়েছে কেন আমার দেশের একটি ছোট মেয়ে জীবনের প্রতি এরকম একটা দীনহীন মনোভাব নিয়ে কাঙালের মতো বড় হবে? কে ঠিক করে দিয়েছে জীবনকে অর্থপূর্ণ হতে হলে ফেসবুকে ‘লাইক’ পেতে হবে?

৩.

কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক ইন্টারনেট-আসক্তি কিংবা আরো নির্দিষ্ট করে যদি বলা হয়, ফেসবুক-আসক্তি একটি সত্যিকারের দুর্ভাবনার বিষয়। যাদের আসক্তি আছে কিন্তু স্বীকার করতে চান না তাদের জন্যে খুব সহজ একটা এক্সপেরিমেন্ট আছে। তারা নিজেরাই বের করতে পারবেন সত্যি সত্যি তারা আসক্ত কী না। তাদেরকে দুই সপ্তাহের জন্যে ফেসবুক থেকে দূরে থাকতে হবে— যদি সেটা করতে পারেন আমার মনে হয় তারা বলতে পারবেন যে তারা শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহার করেন তাদের কোনো আসক্তি নেই।

আমি অনেকের কথা জানি যারা ফেসবুক কিংবা সোস্যাল নেটওয়ার্ক থেকে পৃথিবীর খবর পাওয়ার চেষ্টা করেন, শুধু তাই নয় সেখানে যে তথ্যই পাওয়া যায় তারা সেটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে বসে থাকেন! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা রেডিও-টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা বিশ্বাস করেন না, তারা তাদের আজগুবি বিচিত্র এবং বেশিরভাগ সময়েই আপত্তিকর খবরগুলো অনলাইনের নানা তথ্য থেকে পান। আমরা জানি অনলাইনে আমাদের দেশের স্বাধীনতা-বিরোধীরা খুবই সোচ্চার, তারা নানাভাবে সেখানে প্রচারণা চালিয়ে যায়। আকাশের চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা গিয়েছে— এরকম নির্জলা মিথ্যা প্রচারণা চালাতেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। এই প্রচারণার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেওয়ার মতো তরুণদেরও কোনো অভাব নেই। সত্যি কথা বলতে কী অনলাইন যুদ্ধক্ষেত্রটিতে এতোই উত্তেজনা থাকে যে ‘অনলাইন এক্টিভিস্ট’ নামে একটি নতুন শব্দই তৈরি হয়ে গেছে। কাজেই মোটামুটি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়, আমাদের ধরা যায় ছোঁয়া যায়— এই বাস্তব জীবনের পাশাপাশি যে ভার্চুয়াল অনলাইন জীবনের জন্ম হয়েছে সেটি টিকে থাকার জন্যেই এসেছে। তবে এটি ভবিষ্যতে কোনিদকে যাবে সেটি আমরা জানি না।

আমি তাই সবাইকে মনে করিয়ে দিই, অনলাইন জীবনের পাশাপাশি যে রক্তমাংসের বাস্তব জীবনটি আছে সেটি যেন আমরা ভুলে না যাই।

লেখক :কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042340755462646