বিদ্যালয়ের সেশন ফি, ভর্তি ফি এবং এক মাসের বেতন পরিশোধ করা না হলে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি বই দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোকছেদুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে শর্ত দিয়ে বই বিতরণ করা বেআইনি। সেশন ফি, ভর্তি ফি ও মাসিক বেতনের বিষয়টা আলাদা। এর পরিমাণ বিদ্যালয়ভেদে আলাদা হতে পারে। কিন্তু বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ফির হার অস্বাভাবিক।’ তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বড়াইগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলবেন বলেও জানান।
বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে বই পাবে—এমন বিধান থাকা সত্ত্বেও কেন টাকা আদায়ের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে এবং প্রতিবছর খেলাধুলার অনুষ্ঠান করতে হয়। এসব কাজের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা দরকার হয়। এ সময় (বই দেওয়ার সময়) এসব টাকা আদায় করা না হলে খরচের টাকা আসবে কোথা থেকে? তাই অভিভাবকদের বলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ মফস্বলের বিদ্যালয়ের এত বেশি টাকা সেশন ফি ও বেতন কেন নেওয়া হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানকার অভিভাবকেরা এটা দিয়ে অভ্যস্ত হয়েছেন। অসুবিধা হয় না।’
তবে অসুবিধার কথা জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী। সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমিনুল ইসলাম জানান, মাসের শুরুতে প্রধান শিক্ষক জোর করেই তাঁদের কাছ থেকে একসঙ্গে সব টাকা আদায় করেছেন। টাকা না দিলে বই দেওয়া হবে না। বাধ্য হয়ে পরে টাকা দিয়ে ছেলেকে তিনি বই নিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা রীতিমতো আমাদের জন্য একটা জুলুম। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
একই শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রণজিৎ কুণ্ডু জানান, ছেলেমেয়েরা তো বিদ্যালয়েই থাকছেন। তাহলে বই দেওয়ার জন্য কেন শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘টাকা না দিতে পারলে তাহলে কি ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকবে?’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক দায় এড়াতে টাকা গ্রহণের রসিদ সরবরাহ করলেও তা বই দেওয়ার সময় কেড়ে রেখে দিয়েছেন। যেন এর প্রমাণ না থাকে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সরকারি বই বিতরণের জন্য সেশন ফি, ভর্তি ফি এবং এক মাসের বেতন পরিশোধ করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরা নিরুপায় হয়ে বই নেওয়ার জন্য ষষ্ঠ শ্রেণিতে সেশন ফি ৫০০ টাকা, ভর্তি ফি ৮০ টাকা এবং এক মাসের বেতন বাবদ ৮০ টাকা করে পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
একইভাবে সপ্তম শ্রেণির জন্য সেশন ফি ৫০০ টাকা, ভর্তি ফি ৯০ টাকা এবং এক মাসের বেতন বাবদ ৯০ টাকা, অষ্টম শ্রেণির জন্য সেশন ফি ৫০০ টাকা, ভর্তি ফি ৯০ টাকা ও এক মাসের বেতন বাবদ ৯০ টাকা এবং নবম শ্রেণির জন্য সেশন ফি ৫০০ টাকা, ভর্তি ফি ৯০ টাকা এবং এক মাসের বেতন বাবদ ৯০ টাকা পরিশোধ করে বই সংগ্রহ করেছেন।