লেখাপড়া করে আলোকিত হতে চেয়েছিলেন।একমাত্র মেয়েকে ঘিরে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্ন ছিলো মেয়ে শিক্ষিত হয়ে তাদের ঘরে ‘আলো’ জ্বালাবে। তাইতো পড়ালেখায় মন দিয়েছিলো বিলকিস।
কিন্তু মেয়েটির স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এক বখাটে। ওই বখাটে বেশকিছু দিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।শুধু তাই নয়; মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার পথে প্রায় উত্ত্যক্ত করতো। কিন্তু মেয়েটি বার বার প্রত্যাখ্যান করে আসছিলো।এতে ক্রমান্বয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই বখাটে।
শেষ পর্যন্ত ওই বখাটে মেয়েটিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো দুঃসাহস করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে একা পেয়ে মেয়েটিকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে ওই বখাটে। ধারালো ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত বিলকিস এখন মৃত্যু পথযাত্রী। বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বেডে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। চিকিৎসকরা মেয়েটিকে সুস্থ করে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বখাটের পরিবারের হুমকিতে টানা দুইদিন ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলেনি বিলকিসের অভিভাবকেরা। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের টাকায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে ম্যানেজ করেছে। তবে শনিবার সকালে বিলকিসের বাবা সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন।
চিকিৎসকরা জানান, ছুরির আঘাতে বিলকিসের বাম হাতের পাঁচটি রগ কেটে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সে কারণে দু’দিনের চিকিৎসায়ও মেয়েটি ৮০ শতাংশ অচেতন রয়েছেন। তার জরুরি ভিত্তিতে উন্নত অস্ত্রোপচার দরকার।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় হাসপাতালের বারান্দায় বিলকিসের বাবা মোক্তার আহামদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সামান্য মুদি দোকানী। অতি কষ্টে সন্তানদের লালন-পালন করছি। বিলকিসকে অস্ত্রোপচার করতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কক্সবাজারের প্রাইভেট হাসপাতালে দেখেছি। তারা দু’লাখ টাকা চেয়েছে। কিন্তু আমি এতো টাকা পাব কোথায়?’
হাসপাতালে এসে বখাটের বাবা আবুল কাশেম বিষয়টি সম্পর্কে কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দিয়ে গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেব না শর্তে জোর করে খালি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্ঠা করে। আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠুক। তারপর ওই বখাটের বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করব।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পরই ছুরিকাঘাতকারী বখাটে মিনহাজকে স্থানীয়রা আটক করে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মিনহাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছাড়া পেয়ে ওই বখাটেসহ তার পরিবারের লোকজন বিলকিসের পরিবারকে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিচ্ছে।
সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা সিলেটের খদিজার ঘটনার সঙ্গে বিলকিসের ঘটনার তুলনা করে স্থানীয়রা বলেন, খদিজা আলোচনায় আসলেও বিলকিস আসেনি। কারণ তারা গরীব। এ ধরণের বর্রবরোচিত হামলার ঘটনা নিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বখাটে মিনহাজকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর মিনহাজকে আটক করে স্থানীয় মেম্বারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। তবে ওই ছাত্রী সুস্থ হলে শালিসের মাধ্যমে মিনহাজের বিচার হবে।
জানা যায়, কোণাখালী সেনঘোনা এলাকার মোকতার আহমদের মেয়ে ও কোনাখালী হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী হুরে জন্নাত বিলকিছ (১৫) গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে মাদ্রাসার যাওয়ার পথে উৎপেতে থাকা কোণাখালী খাতুরবাপের পাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের পুত্র ও মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী বখাটে মিনহাজ উদ্দিন বিলকিসকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে।
চকরিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। ঘটনাস্থলে আমি পুলিশ পাঠাচ্ছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।