মনোবিজ্ঞান পড়াচ্ছি, আজ যখন এই লেখাটি শুরু করি, তখন মনে প্রবল আশা আর দায়িত্ববোধ থেকে লিখছি। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তুমুল প্রতিযোগিতা আর ভাল একটি কর্মের আশায়, চাকরির বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে, প্রত্যয় নিয়ে আমার এগুচ্ছি, সেখানে শিক্ষা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের সঠিক মননশীলতার বিকাশ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কতটা সফল হবে তা ভেবে দেখার বিষয়।
মানব জীবন প্রসরের ১০টি পর্যায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল শৈশব কাল, যার বি¯তৃতি ২ বছর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত। ২ বছর থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুরা পরিবারে বসবাস করে, পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় শিশু তার জীবন ধারণের জন্য মৌলিক প্রাথমিক শিক্ষাগুলো অর্জন করতে শিখে। পরিবারের মধ্যেই তার মননশীলতার বিকাশ শুরু হয়। ৬ বছর পর সে পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে প্রবেশ করে সম্পূর্ণ নতুন একটি বৃহত্তম পরিবেশে। সেখানে তার গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ শুরু হয়। জগতের সকলের সামর্থ্য সমান নয়, বিদ্যা, বুদ্ধি, ধনে, জ্ঞানে মানুষে মানুষে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য, আর এই পার্থক্য আমার শৈশবকালে বেশি লক্ষ্য করি। মনোবিজ্ঞানের বিকাশজনিত জ্ঞান নিয়ে এ সময়টা যদি আমরা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করি তাহলে আমাদের দেশে হয়তো প্রতিবন্ধি এবং স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের ন্যায় গড়ে উঠতে সক্ষম হবে, তারা সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হবে। আর তাদের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে একমাত্র মনোবিজ্ঞান।
উন্নত দেশে যেখানে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর আগে, মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আমাদের দেশের মত ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে মনোবিজ্ঞান চর্চা করা হয়, শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক থেকে øাতক ও øাতকোত্তর পর্যায়ে, তা ও আবার স্বল্প পরিসরে, ব্যাপারটার গাছের গোড়া কেটে মাথায় পানি ঢালার মত। তাই যারা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নীতি নির্ধারণ করেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মনোবিজ্ঞান চর্চা বাদ দিয়ে শিশুদের ভেবে দেখবেন বলে আশা করি।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে তার আবিস্কারক একজন মনোবিজ্ঞানী। তাই শিশুদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বাংলা, ইংরেজি ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ন্যায় মনোবিজ্ঞানকেও আবশ্যিক বিষয় হিসাবে চালু করা উচিত বলে আমি মনে করি।
ইদানিং সামাজিক অবক্ষয় উল্লেখ যোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খুন, ধর্ষণ, মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, কিশোর অপরাধ, নারী নির্যাতনসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা। তাই এখনই যদি প্রয়োজনীয় প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায় তাহলে আগামীতে চরম মূল্য দিতে হবে পুরো জাতিকে। আর এ সকল সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে মনোবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানীরা। সমাজে যারা সচেতন তারা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকালীন সময়ে তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখবেন বলে আশা রাখি। আমার এ ক্ষুদ্র লিখনীর মাধ্যম যদি একজন মানুষকেও সচেতন করতে পারি তাহলে আমি ধন্য।
লেখক : প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান
মনোবিজ্ঞান বিভাগ,কানাইঘাট কলেজ
[ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন ]