‘মেয়েরা বিজ্ঞানে, গণিতে বা প্রযুক্তিতে ভালো নয়’- এমন কথা একেবারেই মানতে রাজি নন বাংলাদেশসহ চারটি দেশের মাইক্রোসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির। তিনি নিজে তার কাজ দিয়ে সেটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশে যে কয়জন নারী প্রযুক্তি খাতে খুব উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছেন তিনি তাদের একজন। তার মতে, সেখানে পৌঁছাতে হলে মেয়েদের বিজ্ঞান ও অংক পড়তে হবে। একটা সময় ছিল যখন বলা হতো নারী সাংবাদিক, মহিলা ডাক্তার, নারী উদ্যোক্তা অর্থাৎ পেশা যাই হোক নারী হলে সেই পরিচয়টা তার পেশার সাথে লাগানো থাকতো।
তিনি বলেন, ‘নিজেকে নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ভাবেন নি কখনো। অনেক জায়গায় প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছে। আমি নানা ক্ষেত্রে জিতেছি, আবার কখনো হেরেছি। তবে এটা তো যাত্রাপথের একটা অংশ। হয়ত আমি লাকি ছিলাম। তবে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি।’
সোনিয়া বশির কবির বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও লাওসে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়াও তিনি আরেকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ডেল-এর বাংলাদেশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
প্রযুক্তি খাতে এরকম একটি কোম্পানির চারটি দেশের কর্তাব্যক্তি হতে হলে কি দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার ভিতর থেকে আগে আসতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস থাকতে হবে। ইচ্ছা, আত্মসম্মান এবং সাহস থাকতে হবে। এগুলো যদি থাকে তাহলে লড়াই করে নিজেকে এমন জায়গায় আনা সহজ।
সোনিয়া বশির কবির নিজে বাংলাদেশে দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা করেছেন। বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। প্রযুক্তি খাতে জড়িতদের প্ল্যাটফর্ম বেসিস এর বোর্ডে এ সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি এসব কিছুর জন্য বাবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি দুই ভাইয়ের সঙ্গে বড় হয়েছি। আমার বাবা কোনোদিন আমাকে মনে করতে দেননি আমি মেয়ে। ভাইদের সঙ্গে ফুটবল, ভলিবল খেলে বড় হয়েছি। আবাহনীর মাঠে রোজ বিকেলে গিয়ে খেলা করতাম। বাবা কোনদিন সেভাবে আমাকে আলাদা করেন নি।’
তিনি তার বিয়ের পর স্বামীর কাছে যান যুক্তরাষ্ট্রে যিনি টেকনোলজির রাজধানী সিলিকন ভ্যালিতে সফটওয়ার প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি নিজেও সেখানে গিয়ে সেসব নিয়েই পড়াশোনা করেছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই ওই জগতেই তার প্রবেশ।
সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘আমার বাসায় দুজন গৃহকর্মী আছে। তারা মোবাইল ফোনে যত প্রযুক্তি সব ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগোলেও প্রযুক্তি উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ভারতে একশ বছর আগে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি তৈরি করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। সেখানে আমাদের এখানে প্রযুক্তির পড়াশোনা হচ্ছে বড়জোর পঁচিশ বছর আগে থেকে।’
তিনি উইমেন ইন টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার কারণ হিসেবে বলেন, ‘বাংলাদেশে মেয়েরা অষ্টম শ্রেণির পরই বিজ্ঞান পড়া বন্ধ করে দিয়ে আর্টসে চলে যায়। তাই যদি হয় তাহলে তারা তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না। আমি চেয়েছি মেয়েদের কাছে গিয়ে বলবো- তোমরা সায়েন্স পড়ো, সায়েন্সকে ভালোবাসো। বিজ্ঞান আর অংক অত কঠিন না।’
সোনিয়া বশির কবির একজন অ্যাথলেটও বটে। এক সময় ভলিবল ও ক্রিকেট খেলেছেন। বাংলাদেশে মেয়েদের ভলিবলে প্রথম ক্লাবে খেলেছেন। হকিও খেলেছেন। দৌড়াতে ভালবাসেন।
সূত্র: বিবিসি