বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের তিনশ কোটি টাকার অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. এ এইচ এম শামছুল আলম বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম এবং অবৈধভাবে প্রায় তিনশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করে দুদকে একটি চিঠি পাঠান গত বছরের ১০ অক্টোবর। দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সেই অভিযোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) বেগম বদরুন নেছা। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হাসপাতাল-২ অধিশাখা) রেহানা ইয়াসমিন ও একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (চিকিত্সা শিক্ষা-১ শাখা) খান মো. নূরুল আমীন। তদন্ত কমিটি গতকাল সোমবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল পরিদর্শন করেছেন। একই সঙ্গে অনেকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন।
দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা অবৈধভাবে মাসিক ভাতা গ্রহণ, লীজ হতে আয়ের অর্থ আত্মসাত্, বেশি মূল্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ক্রয় করা, পেনশন ফান্ডের অব্যবস্থাপনাসহ বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ নানা অনিয়ম ও দুনীর্তির সঙ্গে যুক্ত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত) অনুযায়ী সকল বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মানুযায়ী যথাযথভাবে কলেজ ও হাসপাতালের যাবতীয় লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ করবে। প্রতি আর্থিক বত্সরে কলেজ ও হাসপাতালের বাজেট গভনির্ং বডিতে পাশ করে মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দিতে হবে।
এছাড়া রেজিস্টার্ড অডিট ফার্ম দ্বারা প্রতি আর্থিক বত্সরের হিসাব পরবর্তী আর্থিক বত্সর সমাপ্তির পূর্বেই শেষ করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দিতে হবে। অডিট ফার্ম নিয়োগ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই হবে এবং খরচ কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়/স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রয়োজনে যে কোন সময় কলেজ ও হাসপাতালের যাবতীয় লেনদেন নিরীক্ষা করতে পারবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, অধিভুক্ত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের বাজেটসহ যাবতীয় খরচ কলেজের একাউন্ট থেকে করতে হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে কোন অডিট হয়নি। প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রাস্টি বোর্ডের কোন ইনভেস্ট নেই। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ম মেনে কোন হিসেব দেয় না। গত পাঁচ বছর ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা হয় না। সর্বশেষ ২০১২ সালে বার্ষিক সাধারণ সভা হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে কোন অডিট বার্ষিক সাধারণ সভায় পাশ হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানে কোন কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নেই। গভনির্ং বডি থাকলেও তাদের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না।
প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি প্রফেসর ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী এক প্রতিষ্ঠানের টাকা অন্য প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করতে পারে না। তবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের টাকা অবৈধভাবে উত্তরার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করা হয়েছে। ১০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে অডিট নেই। এসব অন্যায়ের বিরোধিতা করায় একজনকে ইতোমধ্যে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।
ট্রাস্টি বোর্ডের অনারারি সেক্রেটারি প্রফেসর ডা. নিয়াজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা এই প্রতিষ্ঠানের দাতা। আমরা নিয়ম মেনেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি। উত্তরার প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ম মেনেই নেওয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটির কাছে আমাদের স্বপক্ষের ডকুমেন্টস দাখিল করবো।