পূর্বের নিয়ম অনুসারে বেসরকারি শিক্ষকগণ কল্যাণ-অবসর সুবিধা পাওয়ার আশায় বেসিক বেতনের উপর মোট ৬% হারে মাসিক চাঁদা দিয়ে আসছিলেন। এই চাঁদার বদলে তারা অবসরে গিয়ে সর্বশেষ বেতন বেসিকের মোট ১০০ গুন টাকা পেতেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই তহবিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এই প্রাপ্য টাকা পেতে শিক্ষকগণের অনেক হয়রানি ও বিলম্ব হয়, হচ্ছে। এটি অবশ্যই অমানবিক। এই তহবিলে সরকার কিছু টাকা দিয়েছে। সেজন্য সরকার কিছু ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। তাই বর্তমানে অবসরে যাওয়া শিক্ষকগণের প্রাপ্য পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের উপায় হিসেবে কর্মরত শিক্ষকগণের মূল বেতনের ১০% হারে মাসিক চাঁদা কর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষকগণ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কিন্তু কেনো এত প্রতিক্রিয়া? অগ্রজরা অবসরে যেয়ে প্রাপ্য টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমানরা সহায়ক ভূমিকা রাখবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা ঐক্যহীন শিক্ষকেরা এবং সুবিধাবাদী নেতারা যেহেতু সরকারের কাছ থেকে এই প্রাপ্য আদায় করতে পারিনি। তথাকথিত শিক্ষাসহায়ক সরকার যেহেতু এই নিবেদিতপ্রাণ বেসরকারি শিক্ষকগণের জীবনের শেষ পাওনা টুকু দিতে নারাজ, সেহেতু আমাদের চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে বাড়তি টাকার জোগান দেওয়া হচ্ছে সহজ ফয়সালা!
জানাযায় বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা মন্ত্রণালয়ের সাথে একমত হয়ে করেছেন এই সহজ ফয়সালা। এই খবর চাউর করে ধন্যবাদও নিতে চাচ্ছেন কেউ কেউ। কৈয়ের তেলে কৈ ভেজে রান্নার বাহাদুরি! সারাদেশে কর্মরত সাধারণ শিক্ষকের নিকট থেকে সারাজীবন প্রতিমাসে বাড়তি ৪% হারে টাকা কেটে নিয়ে নেওয়ার মত এত বড় একটি সিদ্ধান্ত এত সহজেই কার্জকর হয়ে গেলো কীভাবে? কী বাড়তি সুবিধা বর্তমানে পেলেন বা ভবিষ্যতে পাবেন এই বাড়তি চাঁদা প্রদানকারী সাধারণ শিক্ষকগণ? কী লাভে এই সিদ্ধান্তে একমত হলেন নেতারা? মোট ৬% হারে মাসিক চাঁদা দিয়ে অবসরে গিয়ে শিক্ষকগণ পেতেন মোট ১০০ বেসিক এর সমপরিমান টাকা। সেই হিসাব অনুসারে মোট ১০% হারে মাসিক চাঁদা দিয়ে দিয়ে অবসরে গিয়ে শিক্ষকগণের পাওয়া উচিৎ মোট ১৮০ বেসিক এর সমপরিমাণ টাকা। কিন্তু শিক্ষকগণ কি তা পাবেন?
[মো. রহমত উল্লাহ্: লেখক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।