শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তিতে হয়রানি ও ঘুষ আরও বেড়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম, বয়স ও নানা বিষয় সংশোধন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতেও বিভিন্ন স্তরে ঘুষ দিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতি স্তরে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গুনতে হয় বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে এমপিওভুক্তির জন্য কমপক্ষে পাঁচ স্তরে ঘুষ দিতে হয় একজন শিক্ষককে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ডিজিটালাইজেশন ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না হয়ে বরং কঠিন ও দুর্নীতি যুক্ত হয়ে পড়েছে। কথায় বলে আইন যত কঠিন ও দুরূহ হবে আইন প্রয়োগে ভুক্তভোগীরা ততবেশি দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হবে। ডিজিটালাইজেশন এবং বিকেন্দ্রীকরণ প্রকৃতপক্ষে আইনের সহজ প্রায়োগিক প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোনো সাধারণ নিয়মই কাজ করে না। সেটা আবার প্রমাণিত হলো। একটি স্বচ্ছ আইনের মধ্যেও কিভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করা যায় সেটা দেখা গেল। গল্পে আছে, রাজার দুর্নীতিবাজ আমলা নাকি নদীর ঢেউ গুনেই, রাজকোষে অর্থ আত্মসাৎ করেছিল। এক্ষেত্রেও ব্যাপারটি যেন সেরকম। এমপিওভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের ফলে অনলাইনেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। এর ফলে পুরো প্রক্রিয়াটতে স্বচ্ছতা থাকবেই, সেটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এতে প্রকৃতপক্ষে এমপিওভুক্তি, ডিজিটালাইজেশন ও বিকেন্দ্রীকরণের সঙ্গে সঙ্গে ঘুষ ও দুর্নীতিও ডিজিটালাইজেশন এবং বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। অনিয়মের বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে।
দুর্নীতির এই বিষচক্র থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত নজরদারি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। তবে শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে দুর্নীতির এই বিষচক্র থেকে বেরিয়ে আসা দুরূহ হবে। সে কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতিমুক্ত বা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রিত একটি মান প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এ কাজটি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি না। অন্তত দৃশ্যত এর কোনো প্রমাণ নেই।
পরিস্থিতির হাতে নিয়ন্ত্রণভার ছেড়ে দিলে দুর্নীতি এবং অনিয়ম বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এসব ক্ষেত্রে সক্রিয় এবং আগ্রাসী ভূমিকা পালন করতে হবে। নিয়মিত মনিটরিং, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান এবং সব স্তরে জবাবদিহিতা আদায় হতে হবে মন্ত্রণালয়ের কর্মপদ্ধতি, তাহলেই সম্ভব এমপিওভুক্তিকরণসহ শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা। আমাদের প্রত্যাশা বিলম্বে হলেও অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করবে।
সৌজন্যে: দৈনিক সংবাদ