বিতর্কিত সেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রকল্প আজ ক্রয় কমিটিতে - দৈনিকশিক্ষা

বিতর্কিত সেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রকল্প আজ ক্রয় কমিটিতে

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

প্রকল্প পরিচালক দোহাই দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের  দরপত্র ছাড়াই সরকারী ক্রয় নীতি লঙ্ঘন করে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের কাজ দেয়ার সেই বিতর্কিত ইস্যু আজ উঠছে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে। প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা যে কোন কৌশলে আজই মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন চূড়ান্ত করতে চান। ১ জুন  দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাংবাদিক বিভাষ বাড়ৈ। 

বিস্তারিত: তবে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসেইন আজকের বৈঠকের জন্য এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। সকায়েপ প্রকল্পের অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ কমিউনিটি মবিলাইজেশনের কাজ এভাবে একটি অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার অতিতৎপরতা নিয়ে তোলপাড় চলছে। অনৈতিক পন্থায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে কাজ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের স্বনামধন্য প্রকাশকরাও।

এর আগে সোমবার জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘কোন যোগ্যতায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজ পাচ্ছে? শিরোনোমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরো শিক্ষা প্রশাসনে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে কাজ দেয়ার জন্য বিশ্ব ব্যাংক সুপারিশ করেছে- প্রকল্প পরিচালক ড. মাহমুদুল হাসানের এমন বক্তব্যের পর দাতা সংস্থাটির কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার সুপারিশ বিশ্ব ব্যাংক করতে পারে কিনা? কিংবা আদৌ তারা সেটা বলেছে কিনা তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। তবে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার সুপারিশের বিষয়ে মঙ্গলবার এ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের কনসালটেন্ট মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, হ্যাঁ আমরা বলেছি যে ওই প্রতিষ্ঠানটির মাঠপর্যায়ে দক্ষ লোকজন আছে। তারা যেহেতু পাঠাভ্যাস কর্মসূচী ভাল করছে। এই কাজও তাদের দিয়ে ভাল করতে পারে। আমরা এই কথা বলেছি।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রকল্প অফিসে গিয়ে দেখা যায় কর্মকর্তারা সকলে এই ঘটনা নিয়েই আলোচনায় ব্যস্ত। তবে পরিচালক ইতোমধ্যেই কয়েক কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দেয়ার অভিযোগ এনে শাসিয়েছেন। এ অবস্থায় ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে এভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক পন্থায় বাদ দিয়ে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার ছাড়া কোটি কোটি টাকার কাজ দেয়ার ঘটনায় বিব্রত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

অধিদফতরের এক কর্মকর্তাকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বুধবার ইস্যুটি উঠবে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে। সেখাকে কি সিদ্ধান্ত হয় সেটাই দেখার বিষয়। তবে অনুমোদন নেয়ার জন্য সব ধরনের কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, আমরা এ ঘটনা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। যেভাবে পরিচালকসহ অন্য অনেকে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিক বৈঠকে। তবে এখন মন্ত্রিসভায় বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে।

শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসেইন আজকের বৈঠকের জন্য এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তারা। দু’দিন আগেও শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসেই জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, এটি মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠবে। যদি দেয়া সম্ভব না হয় সেখানে অবশ্যই আপত্তি আসবে।

একই প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে পিপিআর লঙ্ঘন করে। এ প্রকল্পের কাজের পরিধি বার বার বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার এ কাজের জন্য প্রতিবারই এর ব্যত্যয় ঘটেছে। দেখা গেছে, ২০১০ সালে টাকার পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৩০ লাখ দুই হাজার ২৩০ টাকা। এরপর ২০১২ সালে বাড়িয়ে করা হয় ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮১৯ টাকা।

২০১৪ সালে করা হয় ৮৭ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ১২৫ টাকা। এরপর এবার প্রস্তাব করা হয় আরও ২১ কোটি ৮৫ লাখা ৪৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকার।

তবে এখানেও অন্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বিশেষ কৌশল নেয়া হয়েছে। আগে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার কাজ থাকলেও এবার টাকা বাড়িয়ে একটি আলাদা বিষয় সেখানে যুক্ত করা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ কমিউনিটি মবিলাইজেশনের কাজ। কিন্তু এ কাজে ওই প্রতিষ্ঠানের নেই কোন অভিজ্ঞাতা। ফলে ওঠে আপত্তি।

এ প্রকল্পের অধীনে বছরের পর বছর ধরে অনৈতিক পন্থায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে কাজ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের স্বনামধন্য প্রকাশকরাও। জানা গেছে, গত দুই বছরে দেশের কয়েকজন নামী প্রকাশক এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব ব্যংকের ভূমিকা ও ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকা-ের কারণে এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা না হওয়ায় তারা হতাশ। ঘটনা সম্পর্কে দেশের স্বনামধন্য সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলছিলেন, ওই প্রকল্পে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও তার কর্ণধারের বিষয়ে আমরা বহু বলেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও লিখিত দিয়েছি।

এখানে অবস্থা এমন হয়েছে যে টেন্ডার হলে যদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সৃজনশীল বই নেয়ার কথা হয় তবে ৮৫ বইয়ের মধ্যে দেখা যাবে ওই প্রতিষ্ঠানের বইই নির্বাচিত হবে ৬২টি। তা কিভাবে হয়? এ প্রশ্নে ওসমান গনী বলেন, হবে না কেন। দেখা যাবে প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধারই ঠিক করেন কোন বই নির্বাচিত হবে। এভাবে হলে ভাল কাজ চলতে পারে? এসব নিয়ে বহু কথা বলেছি সরকারের কাছে। আমি অভিযোগ করেছি বলে আমার ওপরও অনেকে নাখোশ। বিভিন্ন বৈঠকে আমার ওপর অনেকেই তার ক্ষোভ ঝেরেছেন। অভিযোগ আমি যে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধার ‘বিশিষ্ট নাগরিক’র সমালোচনা করেছি। বিশিষ্ট হলে সব করা যায় বলেও হতাশা প্রকাশ করেন আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী।

উল্লেখ্য, অভিযোগ উঠেছে পদ রক্ষায় বিশ্ব ব্যাংককে তুষ্ট করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকায়েপ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের আয়োজন চলছে। এ লক্ষে পকল্পের পরিচালকসহ কয়েক কর্মকর্তার বদৌলতে কোন দরপত্র ছাড়াই সরকারী ক্রয় নীতি লঙ্ঘন করে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ কমিউনিটি মবিলাইজেশনের কাজ দেয়া হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে। অথচ এ কাজের কোন অভিজ্ঞতাই তাদের নেই। এ আয়োজন সফল করতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর জন্য দরপত্র আহ্বান করার পর নির্বাচিত তিন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ যাই হোক প্রকল্প পরিচালক ড. মাহমুদুল হক দাবি করেছেন, টেন্ডার না হলেও সরকারি কোন নিয়ম লংঘন হয়নি। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্প চলে। বিশ্ব ব্যাংকই চেয়েছে এই কাজটা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র করুক। তারা করলে কাজ ভাল হবে বলে বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বলেও দাবি করেছেন পরিচালক। বিশ্ব ব্যাংক চাইলেই কি যার যে কাজের অভিজ্ঞতা নেই টেন্ডার ছাড়া তাকেই সে কাজ দিতে হবে? এমন প্রশ্নে অবশ্য পরিচালক বলছেন, আমরা মনে করি নিয়ম মেনেই হয়েছে। কোন অনিয়ম হচ্ছে না।

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003544807434082