বিদ্যালয়ের বিদ্যার বিড়ম্বনা - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যালয়ের বিদ্যার বিড়ম্বনা

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

যে সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা সবুজাভ প্লে-গ্রাউন্ডে খেলে বেড়াচ্ছে, সে সময়ে আমাদের দেশের শিশুদের কাঁধব্যাগে চৌদ্দটা বই। সুখকর কথা হলো, বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে প্রথমেই বলা রয়েছে, বিদ্যার্থীরা বিদ্যালয়ে বিদ্যাগ্রহণ করবে আনন্দের সঙ্গে যা তাদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অথচ ইদানীং বিদ্যালয় ও বিদ্যাশিক্ষাই তাদের মূল বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠছে। কিন্তু কেন?

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে দুটো ধাপে ভাগ করে দেখা যেতে পারে: এক. শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি, যা শহর-গ্রাম-বন্দরে ভালোভাবেই কায়েম করা হচ্ছে; দুই. মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষার প্রকৃত দায়িত্ব অনুসন্ধান করে তার ভিত্তিতে শিশু-কিশোরদের গড়ে তোলা, যেখানে এখনো ব্যর্থতা চরম। ব্যাপকহারে শিশু-কিশোরদেরকে বিদ্যালয়মুখী করা আপাতদৃষ্টিতে সাফল্য মনে হলেও সঠিক ও কার্যকরী শিক্ষার অভাব সুদূর ভবিষ্যতে সুন্দর ফলাফল বয়ে আনে না। যে বয়সে শিশু-কিশোরদের শৈশব-কৈশোরকে আনন্দদায়ক ঘটনায় ভরিয়ে তুলবার কথা সেসময় তথাকথিত প্রতিযোগিতার দরুন তাদেরকে তীব্রভাবে ‘শিক্ষার্জন’ করতে হচ্ছে, যদিও শিক্ষার যথার্থ অর্থ বুঝতে আমরা মোটামুটিভাবে অক্ষম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এই দায় পিতা-মাতার উপরেও বর্তায় কেননা পাশের বাড়ির বাচ্চার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকাতে নিজের সন্তানের মানসিক গড়ন ও বৃদ্ধিকে অগ্রাহ্য করে তাদের সুন্দর সময়গুলোকে ‘সুন্দর ভবিষ্যতের’ অদৃশ্য ফ্রেমে ভরে দুর্দশার দিকে ঠেলে দেন। এমনকি অনেক অভিভাবক নিজেদের অবদমিত ইচ্ছাকে নিজের সন্তানের মধ্য দিয়ে ফিরে পেতে চান যা স্বভাবতই দুঃখজনক আচরণ।

বাল্টিক সাগরের পাড়ের দেশ ফিনল্যান্ড গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে আদর্শ স্কুলব্যবস্থার অধিকারী। সেখানে ছেলে-মেয়েরা স্কুল করে সপ্তাহে মাত্র বিশ ঘণ্টা, যেখানে বাংলাদেশের ‘নামকরা’ স্কুলগুলোতে এই সময়ের পরিমাণ সপ্তাহে ত্রিশ ঘণ্টারও অধিক! হোমওয়ার্ক বলে সেখানের স্কুলগুলোতে কিছু নেই, বরং শৈশব-কৈশোরকে উপভোগ-উপলব্ধি করার উপরই বেশি জোর দেওয়া হয়; স্কুলের শিক্ষকেরা মনে করেন হোমওয়ার্কের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ শিশু-কিশোরেরা সময় কাটাবে তাদের বন্ধুদের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে, স্কুল শেষে তাদের নিজেদের কাজ করবে—গান শুনবে, ছবি আঁকবে, বই পড়বে, ঘুরে বেড়াবে, জীবনযাপন করবে নিজেদের মতো করে। তুলনামূলকভাবে লক্ষণীয়, প্রতিযোগিতার অজুহাতে বাংলাদেশের বিশেষ করে শহুরে স্কুলপড়ুয়ারা স্কুলের পরেও দুই-তিনটা গৃহশিক্ষক এবং কোচিং-এর অনুগত শিক্ষার্থী। নিজের বলতে কোনো সময় তাদের নেই, যা আছে সবই অন্যদের জন্য।

শিক্ষিত শিশু-কিশোরদের নামে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করছে নিম্নশ্রেণির প্রতিযোগী; সাবলীল ও আগ্রহমূলক শিক্ষার বদলে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করছে ‘শিক্ষাখাদ্য’—জোর করে খাচ্ছে, পরীক্ষার হলে বমি করছে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কেবলমাত্র নম্বরভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি মানসিক দিক থেকে বিদ্যার সঙ্গে বিদ্যার্থীদেরকে উত্তর মেরু-বনাম-দক্ষিণ মেরু অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তো, শিক্ষার নামে প্রতারণা করে আমরাই আমাদের শিশু-কিশোরদের শৈশব-কৈশোর চুরি করে নিচ্ছি না তো?

লেখক :শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067801475524902