বিভাগীয় পরীক্ষায় ফেল করেও পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ১৫৪ জন! - দৈনিকশিক্ষা

বিভাগীয় পরীক্ষায় ফেল করেও পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ১৫৪ জন!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

গোঁজামিল দিয়ে পদোন্নতি আর লোভনীয় পদে পদায়ন পেতে যেকোনো কিছুই করতে পারেন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকদের অনেকেই। অতীত ইতিহাস ঘেঁটে এমনই তথ্যই পাওয়া যায়। তিন বছর আগে মৃত শিক্ষককেও পদোন্নতি দেয়ার নজির আছে। আবার বছরের পর বছর প্রকল্পে চাকরি  আর বিদেশ ঘুরছেন। শিক্ষক হয়েও ক্লাসরুমে পাঠদান ভুলে গেছেন।

আবার পদোন্নতির দুর্নীতি ও অনিয়মের ‘কতিপয়তন্ত্র’ চালু রয়েছে অন্তত  দুই দশক যাবত। এরই ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় পরীক্ষায় ফেল করা  বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৫৪ শিক্ষককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দু’দফায় এসব শিক্ষকের পদোন্নতি দেয়া হয়। ওই সময়ে আরো ৪৩৩ জনকে পদোন্নতি দিয়ে অধ্যাপক করা হয়।

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অনেকেরই চাকরি স্থায়ী হয়নি। এছাড়া আরও ত্রুটি রয়েছে। এভাবে চাকরিবিধি লংঘণ করে ৬ বছরে প্রায় এক হাজার শিক্ষককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়র অভিযোগ পাওয়া গেছে। ত্রুটিপূর্ণদের পদোন্নতি দেয়ায় বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সরকারের কোটি কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। পদোন্নতিপ্রাপ্তরা সবাই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত।

অভিযোগ উঠেছে, এ ধরনের পদোন্নতির ঘটনার পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একটি সিন্ডিকেট জড়িত।

নাম প্রকাশে অনিচছুক শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজজন শিক্ষক দৈনিকশিক্ষাকে জানান, সব সময়েই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধ পদোন্নতি ও বদলির পেছনে কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে মোটা অংকের অর্থ বিনিময়ের অভিযোগও আছে। এই অবৈধ পদোন্নতির কারণে পদোন্নতি যোগ্য প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সরকার বদলালে সিন্ডিকেট সদস্য বদলায়। অথবা সমিতির নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্যে কেউ কেউ পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যে যুক্ত হন। বিগত বিএনপি জমানায় এটিএম ফজলে রাব্বী ও নাছরিন গং। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে শুরু করে গত বছরের জুন পর্যন্ত মাসুম-আজমতগীর-বশির গংদের হাতে ছিলো পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য। তবে, একই সময়ে সাবেক এপিএসও খাবলা মেরে পদোন্নতি নিয়েছেন ও দিয়েছেন। লোভনীয় পদে বদলিতে তার সুপারিশের জুড়ি নেই!

অনুসন্ধানে জানা যায়, সরাসরি বি সি এস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে প্রবেশ করা ইতিহাসের প্রভাষক আবদুল মালেক বিভাগীয় পরীক্ষায় বহিষ্কার ও ফেল করেন একাধিকবার। ১৮ বছর তিনি শুধু প্রভাষকই ছিলেন। তবে, মামলা মোকদ্দমা আর নানা ফন্দিফিকির করে শেষতক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বাগিয়েই অবসরে যান মালেক।

মালেকের পথ ধরেই অস্বাভাবিকভাব রিজার্র্ভ পদ কেটে, মাউশি অধিদপ্তরে থেকে সম্ভাব্য পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আবেদন হাওয়া করে দিয়ে পদোন্নতি বাগান সমিতির সাবেক নেতা মাসুম ও বশিরসহ অনেকেই।

তবে, শিক্ষা প্রশাসকরা বলে আসছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সাচিবিক কাজ করে মাউশি অধিদপ্তর। তারা যেভাবে তথ্য উপস্থাপন করে, সে অনুযায়ীই পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়। তাই এ ক্ষেত্রে যদি কোনো অনিয়ম বা বেআইনি কাজ হয়ে থাকে, তাহলে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু কখনোই শাস্তি দেয়ার নজির নেই।

জানা যায়, ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২৩ অক্টোবর দু’দফায় ৫৮৭ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০০৬ থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জ্যেষ্ঠতা তালিকা, ফিটলিস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এদের মধ্যে ১৫৪ জন বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। এর আগে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৩৬৭ অধ্যাপকের মধ্যে ২ শতাধিক ফেল করা এবং ১৪৮ জন পদোন্নতির অযোগ্য।

শর্তপূরণ না করায় এদের অনেকের চাকরিও তখন স্থায়ী হয়নি। অথচ তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ২০০৯ সালে সহকারী থেকে যাদের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল, তাদের অনেককে আবার ২০১০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এসব অধ্যাপকের অনেকে আবার নামকরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষা প্রশাসন ও প্রকল্পের বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন।

বঞ্চিতদের একটি দৃষ্টান্তের মধ্যে আছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব আনারুল হক। ১৪তম বিসিএসের ইতিহাস বিষয়ের এ কর্মকর্তা ২০০১ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং ২০০৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনসহ পদোন্নতির আবশ্যিক শর্ত তার পূর্ণ আছে। ১০ বছর আগে এ শিক্ষক অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির জন্য উপযুক্ত হয়েছেন। তার মতো আরও শতাধিক শিক্ষক পদোন্নতি বঞ্চিত বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পদোন্নতি কাজ তদারক করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির তদবিরবাজ অংশটি। ওই সময়ে সমিতির কতিপয় নেতা বেশি সংখ্যক শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রণালয়কে নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে বাধ্য করে। এর মধ্যে প্রশাসনিক পদ অন্যান্য সব পদ পূরণ হয়ে যাওয়ার পরও কিছু শিক্ষককে অনেকটা ‘হাওয়ার’ ওপর পদোন্নতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস অনুযায়ী, পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস বাধ্যতামূলক। ক্যাডার পদে প্রবেশের পর এ পরীক্ষার মাধ্যমেই চাকরি স্থায়ী হয়।

এছাড়া ৫, ৬ ও ৭ ধারা অনুযায়ী সব ক্যাডারের প্রারম্ভিক পদে নিয়োগ প্রাপ্তদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিসকাল ও সন্তোষজনক চাকরিকাল শেষ করলেই শুধু চাকরি স্থায়ীকরণ হয়। যারা এসব যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হবেন তাদের চাকরির মেয়াদ ১৫ বছর পূর্ণ হলে পরীক্ষা প্রমার্জন (ক্ষমা) সাপেক্ষে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হবেন। প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি প্রাপ্ত হলে ৫ বছর ওই পদে কর্মরত থাকার পরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির যোগ্য হবেন। কিন্তু এ ধরনের শিক্ষক কোনোভাবেই অধ্যাপক হতে পারবেন না। যারা যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারাই শুধু সহকারী অধ্যাপক পদে ৩ বছর ফিডার সার্ভিস পূর্তিতে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২ বছর ফিডার সার্ভিস পূর্তিতে অধ্যাপক হতে পারবেন। কিন্তু আইন ভঙ্গ করে ২০০৬ সাল থেকে প্রমার্জিতদের অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

পার্শ্ব (লেটারাল এন্ট্রি) প্রবেশের অর্থাৎ আত্তীকৃত, প্রদর্শক থেকে পদোন্নতিসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষা ক্যাডারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বিধি অনুযায়ী শিক্ষা ক্যাডারের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানের তারিখ থেকে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ বিধানও মানা হয়নি।

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079109668731689