বিশাল সমুদ্র অঞ্চল ঘিরে কেবলই নির্দেশনা - দৈনিকশিক্ষা

বিশাল সমুদ্র অঞ্চল ঘিরে কেবলই নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানোর জন্য বড় কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দেশের সমুদ্রে মৎস্যসম্পদ, খনিজ সম্পদ, নৌ চলাচলসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯টি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি সামান্যই। অথচ বিশাল সমুদ্র অঞ্চল ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা গেলে দেশের অর্থনীতির চিত্র আমূল পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের সমুদ্রভাগে আবিষ্কৃত হয়েছে তেল-গ্যাসসহ খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব। এ সমুদ্রেই রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ রত্নভাণ্ডার। এ ছাড়া সমুদ্র ঘিরে বৃহৎ অর্থনৈতিক বলয় গড়ে ওঠারও সুযোগ রয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ। ভারতের সঙ্গে বিরোধ মিটেছে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই। নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিসি আদালতের রায়ে ওই বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে বিশাল অঞ্চলের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাংলাদেশের। এতে বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সি, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর অধিকার পেয়েছে। এই বিশাল সমুদ্র অঞ্চলে বিভিন্ন খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু সমুদ্র অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ এখনো বড় ধরনের কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ফলে সম্ভাবনাময় ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি থাকছে অধরা। অথচ বঙ্গোপসাগর ঘিরে ভারত ও মিয়ানমার গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের মতো ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে ডিপার্টমেন্ট ও পেট্রোবাংলা যৌথভাবে একটি জরিপ চালায় বাংলাদেশে তেল-গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে। ওই জরিপ মতে, অগভীর সমুদ্রে সাড়ে আট ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস রয়েছে। তবে এ জরিপে গভীর সমুদ্রের তেল-গ্যাস সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কম্পানি কনোকো-ফিলিপস জানিয়েছে, গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে পাঁচ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। গ্যাস কেনার দামের বিষয়ে একমত না হওয়ায় কনোকো-ফিলিপস ব্লক দুটি ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে। তবে ভারতীয় কম্পানি ওএনজিসি এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক কম্পানি কৃশকে একটি করে ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করছে।

বাংলাদেশে সাগরবক্ষ থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চললেও মিয়ানমারের সাগরবক্ষ থেকে এরই মধ্যে চারটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। উভয় দেশের সাগরবক্ষ একই ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তবে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলেও গ্যাস পাওয়া যাবে। আর ভারতের কৃষ্ণা গোধাবেরি বেসিনে ১০০ টিসিএফ গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদের কথা জানিয়েছে সেখানে কর্মরত বিদেশি কম্পানি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানি ওএনজিসি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘মিয়ানমারের সাগরবক্ষের ধারাবাহিকতা হলো বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনসের সাগরভাগ। এই অংশটা একই ভূ-তাত্ত্বিকভাবে গঠিত। মিয়ানমারে যেহেতু গ্যাস পাওয়া গেছে, আমাদের এখানেও গ্যাস পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমার গ্যাস অনুসন্ধান করছে, তারা গ্যাস উত্তোলন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ করছে না। ’ বাংলাদেশের সাগরভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান না করাটা ঠিক হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন ড. বদরুল ইমাম।

রত্নভাণ্ডারে পূর্ণ বঙ্গোপসাগর : সমুদ্রের তলদেশকে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ছাড়াও জানা-অজানা নানা ধরনের সম্পদের আধার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাগরে ফসফরাইট, ইভাপোরাইট, পলিমেটালিক সালফাইড, ম্যাঙ্গানিজ নোডোলস, গ্যাস হাইড্রেট, ম্যাগনেসিয়াম ও লবণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্বে যা ম্যাগনেসিয়াম আছে, তার অর্ধেকেরও বেশি আসে সমুদ্র থেকে। এসব রত্নভাণ্ডারের পাশাপাশি দেশের সমুদ্র অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মৎস্যসম্পদ রয়েছে। থাইল্যান্ড প্রতিবছর ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের মাছ আহরণ করে সাগর থেকে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে উন্নত ফিশিং ট্রলারের মাধ্যমে মৎস্য আহরণ করে নিয়ে যায় থাইল্যান্ডের জেলেরা।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রতিবছর ৮০ কোটি টন মাছ ধরা পড়ছে। এর মধ্যে মাত্র দশমিক ৭ লাখ টন মাছ ধরে থাকে বাংলাদেশের জেলেরা। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের বিশাল মৎস্যসম্পদের ১ শতাংশও বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারছে না শুধু উন্নত ধরনের জাহাজ ও প্রযুক্তির অভাবে।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১৩ রকমের ভারী খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইলমেনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, গার্নেট, কোবাল্টসহ আটটি অত্যন্ত মূল্যবান। এসব মূল্যবান সম্পদ সঠিক উপায়ে উত্তোলন করতে পারলে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

সমুদ্র গবেষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘স্থলভাগের প্রধান প্রধান সম্পদ ক্রমেই নিঃশেষ হবে। সমুদ্রই থাকবে একমাত্র ভরসা। এটি মিয়ানমার উপলব্ধিতে এনেছে বলে মনে হচ্ছে; কিন্তু বাংলাদেশ শুধু সমুদ্রে তেল-গ্যাসের ব্লক বরাদ্দ নিয়ে উত্তেজনা ছাড়া অন্য সব বিষয়েই চুপ। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সমুদ্রে রয়েছে অঢেল সম্পদ। এ মুহূর্তে দরকার সমুদ্রসম্পদের জরিপ করে বের করা সেখানে কী কী সম্পদ কত পরিমাণ আছে। এরপর এ সম্পদ কিভাবে কাজে লাগানো যাবে তা ঠিক করা। সম্পদের হিসাব-নিকাশ কাজে লাগাতে গেলে দরকার হবে সমুদ্রবিদ্যা, যা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ’

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032219886779785