বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগের অভাবে হল নির্মাণ হয় না - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগের অভাবে হল নির্মাণ হয় না

মোশতাক আহমেদ ও মুসা আহমেদ |

14068292_1147538961987361_3192250095263460107_n

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের অভাবেই প্রতিষ্ঠার প্রায় ১১ বছরেও কোনো আবাসিক হল হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজ থাকাকালে একসময় ১১টি ছাত্রাবাস (এর বাইরে একটি মাঠ) থাকলেও কাগজপত্র না থাকা বা সংরক্ষণ না করায় তিনটি বাদে বাকিগুলো এখনো বেদখলে। দখলে থাকা তিনটির জায়গাতেও হল করা হচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, সংস্কার না করায় সেগুলোতে থাকার পরিবেশও নেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া, প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান ও  শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর চাওয়া এখন আবাসিক হল। এ নিয়ে তাঁরা প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন।

আবাসিক হল নির্মাণের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্রায় ২৫ বিঘা জমি থাকলেও সেখানে হল নির্মাণ করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ সেখানেই বহুতলবিশিষ্ট কয়েকটি হল নির্মাণ করে আবাসন সংকট অনেকটাই নিরসন করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। অবশ্য একজন কর্মকর্তা জানালেন, আগে না করলেও সম্প্রতি এই জায়গায় ছাত্রদের জন্য ২০ তলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু হল নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

 অন্যদিকে প্রায় দুই বছর আগে বাংলাবাজার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে ছাত্রীদের জন্য ১৬ তলাবিশিষ্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও এখনো নিচতলাই শেষ হয়নি। উপরন্তু নতুন জায়গা চাইছে কর্তৃপক্ষ। আবাসিক ও একাডেমিক কাজের জন্য পূর্বাচলে ৫০ একর জমি চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য রাজউকের অনুকূলে ১৫ লাখ টাকা জামানতও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের খালি জায়গায় হল নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখন এই জায়গায় হল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কারাগারের এই জায়গায় পার্কের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ‘পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা রক্ষা জাতীয় কমিটি’। সরকারেরও ঘোষণা আছে, এই জায়গায় স্মৃতি জাদুঘরসহ খেলার মাঠ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাবেই এখন বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কলেজ থাকার সময় হলগুলো উদ্ধার হলো না কেন? কেরানীগঞ্জে এখনো হল না করে আবার পূর্বাচলেই বা কেন এত পরিমাণ জমি চাওয়া হলো? তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টি কি সেখানে চলে যাবে? তাঁর অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান প্রেক্ষাপটে কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস করা উচিত।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি শুরু থেকে যথাযথ উদ্যোগ নিত, তাহলে এখন হলের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে রাস্তায় নামতে হতো না। অমিত পাল নামের এক শিক্ষার্থী বললেন, ১১ বছরেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল না হওয়াটা মানা যায় না। কয়েকজন ছাত্র বললেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন মেসে তল্লাশির কারণে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। হলে থাকলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না।

 জানতে চাইলে উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, তাঁর সময়কালে প্রশাসনের চেষ্টার কমতি ছিল না। তবে পুরোনো হলগুলোর প্রতিটির পেছনে গড়ে চার-পাঁচটি করে মামলা আছে। এ কারণেই জটিলতা হচ্ছে। পূর্বাচলে জমি চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনার অভাব ছিল। তবে সরকার চাইলে সেটা কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্পেও দিতে পারে।

উপাচার্য বলেন, দখলে থাকা তিনটি জায়গায় হল করার পরিবেশ নেই। দীর্ঘমেয়াদি ইজারা পেলে শিক্ষক বা কর্মকর্তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা যাবে।

২০০৫ সালে দেড় শ বছরের বেশি পুরোনো জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। এখন ৩১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হচ্ছে। আরও তিনটি বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ ১৮ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী পড়ছেন এখানে। শিক্ষক প্রায় ৬০০।

পুরোনো ছাত্রাবাসগুলো গেল কোথায়: বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কলেজ থাকার সময় পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত ১১টি বাড়িকে ছাত্রাবাস বানিয়ে শিক্ষার্থীরা থাকতেন। কিন্তু প্রশাসন কখনো এসব বাড়ির কাগজপত্র সংগ্রহ বা সংরক্ষণ করেনি। কাগজপত্র নিজেদের করার জন্য জোরালো পদক্ষেপও নেয়নি। ফলে একসময় এগুলো বেদখল হতে শুরু করে। বিতাড়িত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্যারীদাস লেনের বাণী ভবন হল, টিপু সুলতান রোডের শহীদ নজরুল ইসলাম হল, মালিটোলার (গোলক লেন) ড. হাবিবুর রহমান হল বা হলের জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নিতে পারছে না। ফলে স্থায়ী ভবনও নির্মাণ করা যাচ্ছে না। গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকলেও সেটির অবস্থাও প্রায় একই। ফলে এগুলো থাকা না-থাকা প্রায় সমান হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাণী ভবন হল নামে এখন আর সাইনবোর্ডও নেই। জরাজীর্ণ ভবনটিকে ‘কর্মচারী আবাস’ বানানো হয়েছে। এখানে প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গাদাগাদি করে থাকেন (ছয়জন পরিবার নিয়ে থাকেন)। একজন কর্মচারী জানালেন, এখন এখানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ নেই। এক নারীকে দেখা গেল লাকড়ি দিয়ে রান্না করছেন। দুজন কর্মচারী জানালেন, ১০ দশমিক শূন্য ৯ কাঠার এই জায়গায় ছাত্রদের জন্য কিংবা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল ভবন করে আবাসন ব্যবস্থা করা সম্ভব।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও হলের কোনো নাম নেই। এই ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ ১৬ জন ছাত্র থাকেন। তবে পুরো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এক অংশে টিনের ছাউনি দিয়ে রাখা হয়েছে। দুপুরে নিচতলার একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাহমুদুল হাসান নামে এই ভবনে থাকা এক ছাত্র বললেন, এখানে খাবারের ব্যবস্থা নেই। বাইরে খেতে হয়। বাথরুম একেবারে অস্বাস্থ্যকর।

গোলক পাল লেনে ৯ দশমিক ৩৯ কাঠার ড. হাবিবুর রহমান হলের সাইনবোর্ডও এখন আর নেই। তবে একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, টিনের ছাউনি দিয়ে বেশ কিছু কক্ষ। একটিতে একজনকে পাওয়া গেল। তিনি বললেন, জায়গাটি দখলে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে প্রায় ১০ জন কর্মচারী থাকেন। কিন্তু কোনো পানি, গ্যাস, বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। বাইরে গোসল ও বাথরুম করতে হয়। এরই মধ্যে জায়গার একাংশে বাইরের লোকেরা একটি টিনের ঘর তুলেছেন।

বেদখলে থাকা ছাত্রাবাসের মধ্যে ওয়াইজঘাটের কুমারটুলীর জি এল পার্থ লেনের তিব্বত ছাত্রাবাসটি এখন সাংসদ হাজি মোহাম্মদ সেলিমের মালিকানাধীন গুলশান আরা সিটি মার্কেটের সঙ্গে একাকার হয়ে পুরোটাই মার্কেট হয়ে গেছে। ছাত্রাবাসের অস্তিত্ব আর নেই। অবশ্য হাজি সেলিম এটিকে তাঁর জায়গা হিসেবে দাবি করেন।

প্রায় ২৬ কাঠা জায়গার ওপর আরমানিটোলার এ সি রায় রোডের আবদুর রহমান ছাত্রাবাসটিতে কয়েকটি পুলিশ পরিবারসহ ২২টি পরিবার বসবাস করে। সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে আর হলের কোনো সাইনবোর্ড নেই। একজন বাসিন্দা জানালেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাঁরা থাকছেন। তবে দাতব্য প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সঙ্গে মামলা চলছে। পাটুয়াটুলীর রমাকান্ত নন্দী লেনে শহীদ আজমল হোসেন ছাত্রাবাসেরও কোনো অস্তিত্ব দেখা যায়নি। সাইনবোর্ডে লেখা আছে রোকেয়া বেগম নামে এক শহীদ পরিবারের নাম।

বংশালের মালিটোলার বজলুর রহমান হলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয় চলছে। আরমানিটোলার মাহুতটুলির শহীদ আনোয়ার শফিক হল, যদুনাথ লেনের সাইদুর রহমান ও আবদুর রউফ হল এবং তাঁতীবাজারের ঝুলনবাড়ীর রাধিকা মোহন বসাক লেনের শহীদ সাহাবুদ্দিন হলটিও বেদখলে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে হল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন জোরদার করলে ছাত্রাবাসগুলো উদ্ধারের লক্ষ্যে স্থানীয় সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে কমিটি করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ছাত্রাবাস বা স্থাপনা স্থায়ীভাবে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ওই কমিটির সদস্যসচিব মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘চেষ্টার কমতি করছি না, তবে এটা বাস্তবতা, এখনো শিক্ষার্থীদের হলে ওঠাতে পারি নাই।’ মেয়েদের হলের নির্মাণকাজের ধীরগতির বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, এখন পুরোদমে নির্মাণকাজ চলছে। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058209896087646