গুম-খুনের পাশাপাশি নিখোঁজ হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ নিয়ে মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্কও কাজ করছে।
নিখোঁজ হওয়া মানুষের মধ্যে পরে কারো কারো লাশ মিলছে, কেউ কেউ ফিরেও এসেছে, কাউকে কাউকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার করেছে, আবার কারো কারো কোনো হদিসই মিলছে না। একই ধারায় গত মঙ্গলবার নিখোঁজ হয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোবাশ্বার হাসান। মঙ্গলবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছেন। বিকেল ৪টায় পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা বলেছেন। এর পর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব তাঁর খোঁজ করছে। এখনো তাঁর কোনো হদিস কিংবা তাঁর নিখোঁজ হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
কিন্তু শিক্ষক হাসানের ঘটনাটি সে রকম নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পরিবারের কাছে কেউ কোনো ধরনের মুক্তিপণও দাবি করেনি। জানা যায়, শিক্ষক হাসান বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছিলেন; যদিও সেটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে, না প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে, তা প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়নি। তবু সে কারণে তিনি জঙ্গিদের টার্গেটও হয়ে থাকতে পারেন। আবার তাঁর পারিবারিক জটিলতা ছিল বলেও জানা যায়। সব কারণ মাথায় নিয়েই তদন্ত এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আবার কোনো বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছে কেউ কেউ; যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। আমরা চাই, দ্রুত তাঁর নিখোঁজ রহস্যের কূলকিনারা হোক। ড. হাসান দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরে আসুক।
অনেক দিন থেকেই নিখোঁজ বা অন্তর্ধানের এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। এর মধ্যে যেমন অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনা ছিল, তেমনি স্বেচ্ছা-অন্তর্ধানের মতো ঘটনাও ছিল। নিকট-অতীতে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের একাধিক তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। সেসব তালিকায় থাকা অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেও অনেককে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ড. হাসানের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে আমরা জানি না।
তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী, এমনকি কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, কয়েক দিন আগে ছাত্র পরিচয়ে এক যুবক তাঁর বাসায় গিয়েছিল, যখন তিনি বাসায় ছিলেন না। বিষয়টি জানার পর তিনি কিছুটা আতঙ্কিতও ছিলেন। সব মিলিয়ে তাঁর নিখোঁজ পরিস্থিতি নানা রকমের আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। আমরা আশা করি, পুলিশ দ্রুত এই রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ