বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা - Dainikshiksha

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা

ড. শামসুল আরেফিন |

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে উচ্চশিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষার্থী সংখ্যা বত্রিশ লাখের বেশি। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের এই সাফল্য ও ইতিবাচক দিকটিতে কতিপয় মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীর চোখ পড়ে। তারা এটিকে ভিন্নখাতে পরিচালনায় লিপ্ত হন। দারুল ইহসান নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য শাখা ক্যাম্পাস খুলে উচ্চশিক্ষার এই জায়গাটিকে কলঙ্কিত করেছে। বার বার সর্তক করে দেওয়ার পরও তারা নিজেদের সংশোধন করেননি। উল্টো কোর্টে রিট করে দীর্ঘদিন তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। অবশেষে ২৫ জুলাই ২০১৬ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের প্রদত্ত রায়ের আদেশবলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শুধু দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশে আরও কিছু এরকম বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের কাছে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা মোটেও নিরাপদ নয়। তাদের আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের ওপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা কীভাবে এহেন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে সমাজের সচেতন মহল ভীষণ উদ্বিগ্ন।

উচ্চশিক্ষার দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষার্থীদের দেখেশুনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে জনস্বার্থে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডিপ্লোমা পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা অনুসরণ করার আবশ্যকতার দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তার দায়ও ঐ শিক্ষার্থীকে বহন করতে হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও কিছু কিছু অনিয়ম দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরিপত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে নতুন অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার বা কোর্স খোলা ও জনবল নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। ইউজিসি’র পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার বা কোর্স খোলা ও জনবল নিয়োগ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে। এছাড়া এখান থেকে যে সকল শিক্ষার্থী পাস করে বের হবেন, তার দায়-দায়িত্বও কমিশন বহন করবে না।

উচ্চশিক্ষা প্রসারে দেশীয় কিছু অসাধু চক্রের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি চক্রও সক্রিয় রয়েছে। তাদের হাতেও পাতা আছে প্রতারণার নানা ধরনের ফাঁদ। বিশ্বের অনেক নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাসের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই দেশের মূল্যবান সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে লুটেরাদের পকেটে। ২৪ জুলাই ২০১৭ জনস্বার্থে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অদ্যাবধি কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস, স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্তৃক দেওয়া হয়নি। সঙ্গত কারণেই বিজ্ঞপ্তি দেখে কোনো বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখা বা ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার না হওয়ার জন্যও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। জাতিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হলে অচিরেই বন্ধ করতে হবে সব ধরনের অবৈধ শিক্ষা বাণিজ্য। দুষ্টচক্র যতো শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো জরুরি। সরকারের পাশাপাশি দেশের সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা রোধ করা সম্ভব।

লেখক: গবেষক

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064198970794678