সরাসরি বি সি এস পরীক্ষা ছাড়া কোনভাবেই নতুন জাতীয়কৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা বলে সাফ জানিয়েছে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। একইসাথে শিক্ষা ক্যাডারে সব পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করার পাশাপাশি জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (২২শে অক্টোবর) দেশের ৬৩ জেলায় সমিতির জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ভিন্ন ভিন্ন মতবিনিময় সভায় এসব অভিন্ন দাবীর কথা তুলে ধরেন। সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষকদের সংগঠন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
মতবিনিময় সভায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের স্বার্থ ও মর্যাদা সুরক্ষায় বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে সংশিষ্ট কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভূত রেখে তাদের চাকরির নিয়োগ, পদায়ন, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি ও পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়ন, জাতীয়করণের আদেশ জারির পূর্বেই বিধিমালা প্রণয়ন, সরকারি কর্ম কমিশন গৃহীত প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগে জন্য সুপারিশ ব্যতীত অন্য কোন পথে কোন ব্যক্তিকে ক্যাডারভুক্ত না করার দাবি জানানো হয়।
বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির পূর্ব ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পৃথক পৃথকভাবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেটসহ সমিতির সকল জেলা শাখার আয়োজনে সাংবাদিকদের সাথে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সরকারি কলেজবিহীন উপজেলা সদরে একটি করে বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তালিকা তৈরির পর যথনিয়মের প্রক্রিয়া চালু থাকার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না বি সি এস সমিতির বিরোধীতায়। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করা ২০০০ বিধি অনুযায়ী জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে জাতীয়কৃত হওয়া কলেজ শিক্ষকরা ২০০০ বিধি অনুযায়ী শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকৃত হলেও গত কয়েকমাস যাবত বন্ধ রয়েছে ২৮৩ কলেজ সরকারিকরেণের আদেশ। বি সি এস শিক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে নব্য জাতীয়কৃত ও জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার রেখে একটি বিধিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। ২০০০ বিধি বাতিল করে নতুন বিধি অনুযায়ী শিক্ষদের আত্তীকরণের দাবীতে রিটও দায়ের করেছেন সমিতির কতিপয় নেতৃবৃন্দ।
সরাসরি বি সি এস ছাড়াও ১০ শতাংশ কোটায় এবং পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ করা সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও সরকারি কলেজে তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরিতে প্রবেশ করা প্রদশর্করা পদোন্নতির মাধ্যমে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আসছেন। পদোন্নতি পেয়ে তারা অধ্যাপক এমনকি বোর্ড চেয়ারম্যানও হয়েছেন।
সরাসরি বি সি এস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেয়া শিক্ষকরা বলছেন, তারা প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন। হঠাৎ এক ঘোষণায় বেসরকারি কলেজ শিক্ষকরা ক্যাডাভুক্ত হয়ে যাবেন এটা তারা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, ৩৮ বছর যাবত ক্যাডারে আত্তীকৃত হলেও কেউ জোরালোভাবে বাধা দেয়নি। অতীতে দুচারটি করে কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। তাই খুব একটা প্রতিবাদ হয়নি। এবার একবারে তিনশ কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে এবং দশ হাজারের বেশি শিক্ষক কোনো প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই ক্যাডারভুক্ত হতে চাচ্ছেন।
অপরদিকে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকরা দাবী করছেন প্রচলিত ২০০০ বিধি অনুযায়ী তারা আত্তীকৃত হবেন। এর অন্যথা কিছু হলেও তারাও আন্দোলন এবং প্রয়োজনে আদালতে যাবেন।
সেনা শাসক জিয়াউর রহমান বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার চালু করেছেন। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিক্ষা ক্যাডার বাস্তবায়ন করেছেন। তবে, পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ ও কাস্টমসসহ অন্যান্য অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারের মতো কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাননা শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা। শিক্ষা ক্যাডারের কেউ কেউ কোনো পরীক্ষা ছাড়াই উপ-সচিব হওয়ার চেষ্টা করে সফল হচ্ছেন।
শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টির আগে সরকারি কলেজ শিক্ষকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমান বেতন পেতেন।