বেসরকারি শিক্ষকদের বেহাল দশায় ঈদ   - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের বেহাল দশায় ঈদ  

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম |

শৈশবে ঈদ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা থাকতো। নতুন জামা কবে কেনা হবে? কোথায় কোথায় বেড়াবো? পটকা ফুটাতে হবে ইত্যাদি। অনেক কষ্টে ইচ্ছেগুলো পূরণ হতো। শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো। বেসরকারি শিক্ষকের পরিবার বলে কথা! সেই সময় শিক্ষকদের বেতন ছিল অনেক কম। কিন্তু তাতে কি? দ্রব্যমূল্যের দামও অনেক কম ছিল। যেমনঃ গরুর মাংস ছিল ত্রিশ টাকা কেজি। যা বর্তমান সময়ে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

কথায় বলে রিজিকের মালিক আল্লাহ্‌। তিনি বাবার মতো আমাকেও শিক্ষক বানিয়েছেন। বাবার তুলনায় বেতনও আমার অনেক বেশি। তবে আমি কেন ঈদ দেখে ভয় পাই! ঈদ আসলেই কেন চিন্তিত চেহারাকে পরিবারের সবার চোখের আড়াল করে রাখতে হয়?

অনেক চাওয়া-পাওয়া আর ত্যাগের মাধ্যমে আমরা পালন করি পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর। মুসলিম জাহানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ধর্মের প্রতি একাগ্রতা, সুস্থ চিন্তা-চেতনা, উর্বর নৈতিকতা আর সংযমের সার্বজনীন শিক্ষা আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধকে দৃঢ় করে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই চায় ঈদকে খুশির জালে জড়িয়ে রাখতে। শিশুরা চায় নতুন জামা-কাপড়; মা-বাবা পোশাকের সাথে সাথে সাধ্যমতো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের সন্তানদের কাছে ঈদকে উৎসবমুখর করে তোলেন। একজন খেটে খাওয়া বেসরকারি শিক্ষকেরও একই কামনা থাকে ঈদের প্রস্তুতিতে। ঘনিয়ে আসা ঈদের দিনকে সামনে রেখে ছোট্ট শিশুটির শিক্ষক বাবার কাছে আবদার, “বাবা! আমাকে নতুন জামা কবে কিনে দিবে? ঈদের বাজার কবে করবে? ঈদের দিন আমরা সবাই সেমাই, গোশত, পোলাও খাব, তাই না বাবা?” এসব কথা শুনে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র শিক্ষক জনগোষ্ঠীর প্রতিটি প্রতিভূর বুকের মধ্যকার অদৃশ্য কষ্টের আহাজারিতে খোদার আরশ কেঁপে উঠে। ঈদকে তারা ভাবে দারিদ্র্যের অভিশাপ।

এরপরে আবার রমজান মাসে সবকিছুর মূল্যই নিন্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য বাদ দিলে দুঃখ ও আনন্দের যে অনুভূতি তা তো ধনী দরিদ্র- সকলের কাছেই সমান। বেসরকারি শিক্ষকরা কি আজীবন এই বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবেন?

শিক্ষকরা নাকি মানুষ গড়ার কারিগর? যদি তাই হয়, তাদের অবশ্যই সামাজিক মর্যাদা প্রয়োজন। জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার দুঃসাধ্য কাজটি তারা করেন। তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়ার কাজটি সরকার, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সবাই মিলেই করতে হবে। দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের পেছনে শিক্ষকদের অসামান্য অবদান আপনারা অস্বীকার করতে পারবেন? আপনার বিবেক যদি বৈষম্যহীন হয়, তবে সেই বৈষম্যহীন বিবেককে প্রশ্ন করে দেখার বিনীত অনুরোধ রইলো।

একজন নেশাখোর একজোড়া স্যান্ডেল চুরি করে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের সামনে বিক্রির জন্য বসে আছে। সে-ও চায় ঈদে একটি নতুন লুঙ্গি কিনতে! কারন নেশাখোর হলেও ঈদের আনন্দের অনুভূতি তার মধ্যে আছে। বেসরকারি শিক্ষকরা ধর্মীয় উৎসবের অনুভূতিকে পাথর চাপা দিয়ে কৃত্রিম হাসিতে সবার চোখকে ফাঁকি দেয়। পেটে ক্ষুধা থাকলেও চক্ষু লজ্জায় তা প্রকাশ করতে পারেনা।

বড় বড় সরকারী চাকরিজীবীরা শতভাগ সরকারী বোনাসের সাথেসাথে বেসরকারি বোনাসও পান। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীগণও বেসরকারি বোনাস থেকে বাদ পড়েন না। অন্যদিকে, বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিও, ননএমপিও শিক্ষকরা যা পায়, তাতে তারা পরিবারে সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারে কি? বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত করে পেটে লাথি দিয়েছেন।

ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু মরে যাইনি। বেঁচে আছি দেশের সেবা করার জন্য। আমরা মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন । শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন কাজ করতে বিবেক সায় দেয় না। অষ্টম পে-স্কেল আওতাধীন সবাই ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন শুধুমাত্র বেসরকারি শিক্ষকরা ছাড়া। কবে পাবো তাও জানিনা। আমরা আসলে কী? এ প্রশ্নের উত্তরও আমরা জানিনা।  ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ। এখানেও বড় ধরনের বৈষম্য। মুসলিম জাহানের বৃহৎ এই উৎসবে সরকারি বেসরকারি শিক্ষকদের অন্ততঃ এক চোখে দেখতেন? এভাবেই কি চলতে থাকবে বেসরকারি শিক্ষকদের জীবন? বছরে অন্ততঃ একটি দিন শিক্ষকরা তাদের না বলা কষ্ট ভুলে থাকতে পারবেনা?

 

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039770603179932