শিক্ষাদান ও মানব সম্পদ তৈরিতে অবদান রাখেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ, যা শতকরা হারে ৯৬ ভাগের বেশি। অথচ সব ধরনের অবিচার-বঞ্চনা ভর করে এই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর।
বর্তমানে ২৬ হাজার ৮১টি সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা, ৭৭৫টি কারিগরি কলেজ এবং কারিগরি স্কুলসহ প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। মাউশি-র হিসাবমতে প্রতিদিন ৪০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যান। বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার অবসরভোগী শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর আবেদন অনিষ্পত্তি রয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধা কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ডে যথাক্রমে ৪% ও ২% কর্তন করে অবসরের সময় মোট ১০০ মাসের সুবিধা প্রদান করার নীতিমালা কার্যকর রয়েছে। অথচ গত ১৫ জুন হঠাত্ করে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ যথাক্রমে ৬% ও ৪% কর্তন করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই হিসেবমতে একজন শিক্ষক যদি ৩৫,৫০০ টাকা মাসিক বেতন পান তাহলে প্রতি মাসে ৩,৫০০ টাকা কাটা হবে আর বছরে বেতন পাবেন ১০ মাস। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী ১০০ মাসের সুবিধা দেওয়া হবে। যা শুধু অমানবিকই নয়, রীতিমত চালাকিও। বস্তুত প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকা দেওয়া না হলে এই কর্তিত টাকারও সংস্থান হবে না।
অবসর সুবিধা প্রদান নিয়মিত করতে হলে প্রতিশ্রুত প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকা দিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার দুর্নীতি, ঋণখেলাপির কারণে মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য যদি জনগণের করের টাকা দেওয়া যায় তাহলে ন্যায্য পাওনা পরিশোধে অনীহা কেন? কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন প্রদত্ত টাকার ১৪ গুণ বা ১৬ গুণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে—এটাও অমানবিক। অবসর সুবিধার জন্য কোনো চাঁদা প্রদানের নিয়ম নেই।
গত পে-স্কেল ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল—প্রতি বছর শতকরা ৫ টাকা হারে প্রবৃদ্ধি যোগ হবে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। সরকার ঘোষিত বৈশাখীভাতা, পূর্ণাঙ্গ বোনাস, চিকিত্সাভাতা ও পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়াও দেওয়া হচ্ছে না। অথচ নির্ধারিত স্কেল থেকে কর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সরকারি-বেসরকারি পার্থক্যও আকাশ পাতাল। মূল স্কেলের শতভাগ প্রবৃদ্ধিবিহীন, ২৫% উত্সবভাতা, চিকিত্সাভাতা ৫০০ টাকা, বাড়িভাড়া ১,০০০ টাকা। বৈশাখীভাতা, প্রভিডেন্ড ফান্ড নেই। এই চিত্র চরম মানবাধিকার লংঘন। এই অবস্থায় বেসকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বর্ধিত কর্তনের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে পূর্ণাঙ্গ বোনাস, ৫ ভাগ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, প্রভিডেন্ড ফান্ড, অনুপাত প্রথা বাতিল, কমপক্ষে ৪০% বাড়িভাড়া, প্রমোশনের সুযোগ প্রবর্তন করা হোক! আর অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ড পুনঃগঠন করা জরুরি।
বরিশাল