একটি দেশের মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। আমরা প্রাচীনকাল থেকে জানি, “ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড” তবে কেমন শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড? এ প্রশ্নের উত্তর বাঙালি জাতি এতদিনে বুঝে গেছে।
এখন বাঙালি জাতি বুঝে যে, “সঠিক শিক্ষাই হল জাতির মেরুদণ্ড।” কারণ এখন সমস্ত পৃথিবীই যে কোন একটি দেশের জন্য কর্মক্ষেত্র। মুখস্ত করে, ভাল রিজাল্ট করলেই ভাল পদে চাকুরি করা যাবেনা, ভাল কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। মুখস্ত বিদ্যার দিন শেষ। বর্তমানে ৪০/৫০ মিনিট ক্লাসরুমে লেকচার দিলে শিক্ষা দান করা হয় না। শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাতে-কলমে ৩০/৪০ মিনিট কাজ করতে হয়। আমি শিক্ষার্থীদের কি শিখালাম তার ফিডব্যাক পাওয়া গেলেই আমার শিক্ষাদান সার্থক হল। আর এটাই হল শিক্ষকের সার্থকতা।
যোগ্য, সার্থক ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে সঠিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে NTRCA-এর মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করে সরকারের তত্ত্বাবধানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি বড় পদক্ষেপ। এটা দেশের জনগনের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল। দাবীটি দীর্ঘদিন পরে পূরণ হলেও অসম্পুর্ণ অবস্থায় রয়ে গেল। জানিনা সরকারের কি পরিকল্পনা আছে। যদি স্বচ্ছতার মধ্যে নিয়োগ কাজটি হয় তাহলে এটি একটি সুন্দর প্রক্রিয়া।
তবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে, শুধু প্রবেশকালিন শিক্ষকগণের জন্য এ নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ এবং সুপারদের এ প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। এ জন্যই আমার লেখার শিরোনামটি হয়েছে, “বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া গোড়াকাটা গাছে পানি ঢালার মত।” এক বালতি দুধের মধ্যে এক ফোঁটা গরুর মূত্র পড়লে যেমন সমস্ত দুধই নষ্ট, তেমিনি প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ এবং সুপারদের নিয়োগ এ প্রক্রিয়ার বাহিরে রাখলে আসল উদ্দেশ্যই নষ্ট হবে। কারণ উনারাই হলেন সকল নষ্টের মূল। তবে সবাইকে বলছি না। এর মধ্যে ভাল মানুষও আছেন।
উনারা বেশিদিন এক প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করলে টাকা ইনকামের কারখান তৈরি করে ফেলেন। তাদের পদকে টিকিয়ে রাখার জন্য যত গভীরে নামার দরকার তত গভীরেই তাঁরা নামতে পারেন। আর বেশি বলে দুর্গন্ধ ছড়াতে চাইনা। যারা আমার এ প্রতিবেদন পড়বেন তাঁরা সবাই জানেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ কি করতে পারেন। আসল কথা হল তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, দোষ হল সিস্টেমের। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ এবং সুপারদের যদি NTRCA-এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এনে সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়োগ দেয়া যায় আর বদলি সিস্টেম করা যায় তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থায় সুষ্ঠ পরিবেশ ফিরে আসতে বাধ্য।আমি এতক্ষণ যে বর্ণনা দিয়েছি তাঁর কোন কিছুই দরকার হবেনা যদি সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে জাতীয়করণ করে ফেলে। আমি আর একটু সুন্দরভাবে বলতে চাই- সব সমস্যার সমাধান বর্তমান সরকার যদি করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ। তাহলেই জনগণ সঠিকভাবে বুঝতে পারবে, শিক্ষা বান্ধব মহান সরকারের কত বড় অবদান!
আমরা সবাই এখন শিক্ষাক্ষেত্রে সব সমস্যার সমাধানের জন্য বর্তমান সরকারের মুখপানে তাকিয়ে আছি। এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে জাতির আসল মেরুদণ্ড এবং প্রকৃত একটি শিক্ষা ব্যবস্থা উপহার দিতে পারে। আর এ সরকার এ কাজটি করতে পারবে বলে আশা রাখি।