প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থার যে রুগ্ণ চিত্র শনিবার একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থা থেকে এ–যাবৎ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র ১৭১। গত এক যুগে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ২৪টি। বিভিন্ন বিভাগের গবেষণা জার্নালগুলো নিয়মিত প্রকাশিত হয় না। যে কয়টা প্রকাশিত হয়, সেগুলোও প্রকাশনা সংস্থায় পাওয়া যায় না। কেবল সংশ্লিষ্ট অনুষদের শিক্ষকদের মধ্যে তা বণ্টন করা হয়। নিজস্ব ছাপাখানা থাকলেও তার আধুনিকায়ন ঘটেনি। ফলে নিজস্ব গ্রন্থ মুদ্রণের কাজটি সারা হয় বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে।
যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের উৎসাহিত করে তাঁদের রচিত গ্রন্থ প্রকাশ করা এবং বিপণন করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এর কোনোটিই ঠিকভাবে করা হচ্ছে না। এখান থেকে বই প্রকাশিত হলে সেটা প্রচারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। লেখকদের সম্মানীও যথাযথভাবে দেওয়া হয় না।
বই প্রকাশনার নিয়মেও রয়েছে গলদ। পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়ার পর তা পর্যালোচনা ও একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে সিন্ডিকেটের অনুমোদনের পর ছাপা হতে প্রায় দুই বছর লেগে যায়। অথচ বর্তমানে প্রযুক্তি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে পাণ্ডুলিপি পর্যালোচনা করে একটি বই ছাপা হতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। দীর্ঘমেয়াদি এ প্রক্রিয়ার কারণে লেখকেরাও আগ্রহ দেখান না। তাঁরা তাঁদের লেখা ও অনুবাদ অন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশ করেন।
দেশের প্রাচীনতম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার এ দৈন্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দায় যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্যরাও এ জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি থেকে প্রকাশনা সংস্থাটির উত্তরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনকে এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আধুনিক ছাপাখানা স্থাপন করাসহ প্রকাশনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
সৌজন্যে: প্রথম আলো