‘বৈশাখি ভাতা’ নিয়ে এসো হে বৈশাখ - দৈনিকশিক্ষা

‘বৈশাখি ভাতা’ নিয়ে এসো হে বৈশাখ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

গত প্রায় একটা বছর ধরে ‘বৈশাখি ভাতা’ নিয়ে লেখালেখির শেষ নেই । সচেতন লেখকমাত্র না লিখে বসে থাকতে পারেন না । বসে থাকার কথা  নয় । কেননা, যারা লিখেন তারা মানুষের কল্যাণে লিখেন । অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লিখেন। স্বাধিকার রক্ষার জন্য লিখেন । দেশের পাঁচ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ন্যায়সঙ্গত দাবি বৈশাখি ভাতা নিয়ে নিত্য লিখার তাগিদে লিখেন । তারা  নিজের দায়বোধ থেকে লিখেন । কিন্তু, যারা সেটি মিটিয়ে দেবার কথা -এদের কি তিলমাত্র কর্তব্যবোধ নেই ? এরা কী জন্য কার স্বার্থে কাজ করে ? এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সময়মত বৈশাখি ভাতা না দেয়ায় এদের বিরুদ্ধে কী কর্তব্য কাজে অবহেলার অভিযোগ আনা যায় না ? একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এদের জবাব দিতেই হবে। এরা বিবেকের তাড়নায়  এতটুকু বিদ্ধ হয় না কেন ?   ধিক্কার এদের বিবেক ও কর্তব্যবোধকে । দেশের আপামর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখি ভাতা প্রদান করা গোটা জাতির দায় । জাতীয় কর্তব্য । দিন- সপ্তাহ- মাস পেরিয়ে ঘুরেফিরে আরেক বৈশাখ হাতের কাছে । নতুন বছরে নতুন করে জীবন শুরু করার স্বপ্নে বিভোর সবাই । কিন্তু, বেসরকারি শিক্ষক- কর্মচারীদের সে স্বপ্নে আজ ও ‘বাড়া ভাতে ছাই’ কেন ?

বৈশাখি ভাতার দাবি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের  অলীক স্বপ্ন কিংবা অযৌক্তিক চাওয়া নয় । বাঙ্গালি মানসে বৈশাখের শেকড় তাদের হৃদয় ও আত্মায় গেঁথে আছে । বাঙ্গালি চাকুরিজীবীর বৈশাখি ভাতা-সে তাদের একান্ত অর্জন ও ন্যায্য পাওনা । এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জাতি গঠনের সুকঠিন কর্মের স্বীকৃতি ও মর্যাদার সাথে জড়িত এ বৈশাখি ভাতা । এ মর্যাদাটুকু জোর করে কে কতদিন আটকে রাখতে পারে ?  অর্থের হিসেবটা মুখ্য নয় । মর্যাদার প্রশ্নে এটি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সবার আগে মিটিয়ে দেবার কথা । কিন্তু, সেটি না দিয়ে এক বছর ধরে তাদের মনোকষ্টে রাখা হয়েছে । সে কষ্ট তাদের অস্তিত্বের আশংকা থেকে । বাঙ্গালীত্ব হারাবার ভয় থেকে । এ তাদের নিজস্ব জাতীয়তাবাদের চরম অপমানের বেদনা থেকে ।

বাংলা নববর্ষকে কারা পহেলা বৈশাখে উৎসবে-আনন্দে উজ্জীবিত করে রাখে ? কাদের জন্য গানে গানে বৈশাখের প্রথম দিনটি এত প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ? কারা পহেলা বৈশাখে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনার বীজটি নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে বপন করে দেয় ? সে তো শিক্ষক -ভিন্ন কেউ নয় । এ দেশে শিক্ষক বলতে কাদের বুঝায় ? শতকরা পঁচান্নব্বই জন এমপিওভুক্ত শিক্ষককেই বুঝায় । তবু তাদের প্রতি এত অবজ্ঞা ও উদাসীনতা কেন ?

 দেশে শিক্ষার মুল চালিকা শক্তি বেসরকারি শিক্ষক সমাজ । তারা যে কোন জাতীয় দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন । যে কোন রকমের নির্বাচনে-স্থানীয় কিংবা জাতীয় যেটির কথা বলিনা কেন, সবার আগে ডাক পড়ে তাদের । যে কোন পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন,পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মুল্যায়ন ও এর ফল দেয়া পর্যন্ত সকল কাজে বেসরকারি শিক্ষককে সবার আগে থাকতে হয় । সরকারের যে কোন কর্মসুচি প্রতিপালনে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন তারা । বিনামুল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ তথা বই উৎসবে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত করে সরকারের কর্মসুচি সাফল্যে পৌঁছে দেন এ শ্রেণির শিক্ষক-কর্মচারী । এই তো মাত্র ক’মাস আগে এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ জেগে ওঠেছিল,  এদের দমনে সরকারের কর্মসুচিকে কারা ষোল আনা সমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে উঠে পড়ে লেগেছিল ?  কাদের জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এ দেশে এতটুকু  ঠাঁই পায় নাই  ? প্রকৃতপক্ষে সরকারের এমন কোন কর্মসুচি নেই, যেখানে দেশের শিক্ষক সমাজ বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ নেই । এ দেশে যত ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন-সংগ্রাম ও উন্নয়ন সংগঠিত হয়েছে, তার সবকিছুতে তাদের গর্বিত অংশ গ্রহণ । সুতরাং, তাদের বৈশাখি ভাতা প্রদানে অহেতুক আর বিলম্ব  সমীচিন নয় ।

আরেকটি বৈশাখ অত্যাসন্ন । প্রকৃতিতে এর পুরো  আমেজ । মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ । বৃষ্টির ছোঁয়ায়  নতুন দুর্বা ঘাসে উচ্ছসিত মাঠ-ঘাট-প্রান্তর । কিন্তু, এবার ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বৈশাখি ভাতা পাবেন কীনা-সে বিষয়টি তবু অস্পষ্ট । গত ক’দিন থেকে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণ বৈশাখি ভাতা পেতে যাচ্ছেন ‘ মর্মে যে সংবাদ কয়েকটি পত্রিকায় বেরিয়েছে, তা কতটুকুই বা সত্য ? সংবাদের ভেতরের সংবাদটি পড়ে এর সত্যতা পাওয়া কঠিন । শিরোনামটি নতুন বটে । কিন্তু ভেতরে পুরনো সংবাদের গন্ধ । দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক- কর্মচারীদের ঘুম পাড়ানোর অপচেষ্টা করার কী দরকার ?  তারা তো এমনিতেই কষ্টের মাঝে হলেও ঘুমিয়ে আছেন ।

আসন্ন বৈশাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নববর্ষ ভাতার সওগাত নিয়ে হাজির হউক ।  অবসান ঘটুক সব অনিশ্চয়তা ও দুর্ভাবনার-সে প্রত্যাশা আজ কেবল শিক্ষক-কর্মচারীর নয়, পুরো দেশের মানুষের ।

[ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।]

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036590099334717