“আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ শুরু হচ্ছে। এদিন সারাদেশে চলবে বর্ষবরণ উৎসব। তবে এবার অন্যান্যবারের চেয়ে ভিন্নমাত্রায় বর্ষবরণ আয়োজন করা হচ্ছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় চলতি বছর বর্ষবরণের আয়োজনে এ শোভাযাত্রা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আতওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নববর্ষ পালন করতে হবে।”
এইরূপ আদেশের পর দেশের বেসরকারি শিক্ষকগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন অথবা পড়বেন এটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা, দৈনন্দিন শিক্ষাকার্যক্রম ঠিকরেখে দিনের পর দিন অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, রিহার্সাল করিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন এবং ১লা বৈশাখে প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে অনুষ্ঠান সফল করবেন দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ বেসরকারি শিক্ষকগণ কিন্তু ভাতা পাবেন না। আর এই ১লা বৈশাখের ভাতা পেয়ে, ভালো ভালো খেয়ে, সরকারি ছুটি পেয়ে, সাজানো ঘরে বসে, অধিকাংশ ভিনদেশি টিভি চ্যানেল দেখবেন সরকারি চাকুরেরা!
যারা মিটিং করে আমাদের নেতিয়ে পড়া বাঙালিত্ব জাগ্রত করার জন্য ১লা বৈশাখ উদযাপনে এই নতুনমাত্রা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত অথবা আদেশ দিয়েছেন, তারা তো অতি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি লোক। তারা বললে অনেক কিছুই হয়। অথচ, তাদের বিবেকে কি একবারও একথা জাগ্রত হওয়া উচিৎ ছিলো না যে, যাদের উপর এই জাতিকে জাগ্রত করার গুরু দায়িত্ব দিচ্ছি তারা কারা, তারা কী পায়, কী খায়, কোথায় থাকে? তাদের কি একবারও ভেবে দেখা উচিৎ ছিলো না, যাদের উপর দায়িত্ব দিচ্ছি একযোগে এদেশের সকল শিক্ষার্থী দিয়ে নতুন মাত্রায় ১লা বৈশাখ উদযাপন করানোর জন্য তারা সবাই কি আমাদের মত এই দিবসের ভাতা পায় কি না? তিনারা সবই জানেন। কিন্তু তিনারা বেসরকারিদের কাজের সময় দরকারি আর বেতনভাতার সময় বেসরকারি ভাবেন। শিক্ষক কাজও করবেন, বঞ্চিতও থাকবেন, তাতো কোন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার হতে পারে না।
এমতাবস্থায় আসন্ন ১লা বৈশাখের আগে বৈশাখী ভাতা দেওয়া না হলে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ যদি এই সরকারি আদেশ অনুসারে অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দিয়ে আসন্ন ১লা বৈশাখের আয়োজন সফল করতে অনিহা দেখায় তাহলে কি খুব বেশি অপরাধ হবে?
মো. রহমত উল্লাহ্: শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ,কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।