ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই ১৫ কলেজ উন্নয়নে ঠিকাদার নিয়োগ - Dainikshiksha

ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই ১৫ কলেজ উন্নয়নে ঠিকাদার নিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

Taka-240ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই ১৫টি কলেজের উন্নয়নে ১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৬ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে। ব্যাংক গ্যারান্টি বা আর্থিক দায়বদ্ধতা ছাড়া কাজ পাওয়ায় মন্ত্রণালয় এখন রীতিমত জিম্মি হয়ে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে।

১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার ১৫টি কলেজের উন্নয়ন কাজ ভাগিয়ে নিয়েছে। এখন আগাম অর্থ ছাড় হলে কাজ হচ্ছে, কিন্তু কাজের মান যথাযথ তদারকি হচ্ছে না। এমনকি ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতাও শিক্ষা প্রশাসনের কাছে নেই। এ অবস্থায় ঠিকাদারদের মর্জিমাফিক কাজ হচ্ছে, অগ্রগতিও নির্ভর করছে ঠিকাদারদের ওপর। অভিযোগ উঠেছে, কমিশন ভাগাভাগির। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) ফরিদপুর অঞ্চল ও এর নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে এই জালিয়াতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া ঠিকাদারদের কাজ দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত (১৫শ) কলেজসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পে বড় ধরনের এই জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. এবিএম শাহজালাল-এর দায় অস্বীকার করে বলেন, ‘এর পুরো দায়দায়িত্ব শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ফরিদপুর জোনের (অঞ্চল)। কারণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে আমরা নির্মাণ কাজের দায়িত্ব ইইডিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। ইইডি তার আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে কাজ করছে। তবে ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেয়া হয়ে থাকলে এবং কাজের মান সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ব্যাংক গ্যারান্টি না নিয়ে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫টি কলেজের উন্নয়ন কাজ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী দেয়ার মো. হানজালা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ তবে ব্যাংক গ্যারান্টি না রেখে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেয়া যায় কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া কার্যাদেশ দেয়ার নিয়ম নেই।’

ইইডি’র ফরিদপুর অঞ্চলের সহায়তায় তৈরি করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরিদপুরের সাতটি কলেজের উন্নয়নের জন্য ২০১৩ সালের ৭ মার্চ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ফরিদপুর সদরের আলহাজ আবদুল খালেক কলেজের উন্নয়ন কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স শাহ আলী ট্রেডার্স’কে, বোয়ালমারি উপজেলার বঙ্গবন্ধু কলেজের কাজ ‘সেমার্স শফিকুজ্জামান চৌধুরী’, মধুখালী উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ আবদুর রউফ ডিগ্রি কলেজের কাজ ‘মেসার্স আলম কনস্ট্রাকশন’, ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের কাজ ‘মেসার্স টুটুল অ্যান্ড ব্রাদার্স’ এবং সালথা উপজেলার সালথা কলেজ, ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা কলেজ ও ভাঙ্গা উপজেলার কাজী মাহবুব উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স এ্যারোমা এন্টারপ্রাইজ’কে। প্রতিটি দরপত্রের মূল্য প্রায় এক কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

এই সাতটি কলেজের কাজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কাজ চলতি অবস্থায় আছে। ফাইল নথিতে কোন ব্যাংক গ্যারান্টি পাওয়া যায় নাই। ব্যাংক গ্যারান্টি যাচাই বা ফেরতের কোন তথ্য নথিতে নাই।’ মেসার্স শাহ আলী ট্রেডার্সকে কাজ দেয়ার বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, ‘নথিতে কনট্রাক্ট অ্যাগ্রিমেন্ট পাওয়া যায় নাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সর্বোচ্চ তিনটি কলেজের কার্যাদেশ পাওয়া ‘মেসার্স অ্যারোমা এন্টারপ্রাইজ’র ম্যানেজার আলী হাসান আজাদ বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স শেখর সাহেবের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা) ছোট ভাই আশরাফুজ্জামান খানের নামে। তবে আমরা ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েই কাজ পেয়েছি।’

একই প্রকল্পের অধীনে একই সময়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজবাড়ী জেলার চারটি কলেজের উন্নয়নের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে রাজবাড়ী সদরে বেলগাছি আলিমুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উন্নয়ন কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স কবির অ্যান্ড কোং’, গোয়ালন্দ উপজেলার রাবেয়া ইদ্রিস মহিলা কলেজের কাজ ‘মেসার্স মুন্সী মো. আনোয়ারুল হক কবির’, পাংশা কলেজের কাজ ‘মেসার্স অনুপম নির্মাতা’ এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর কলেজের কাজ ‘মেসার্স গোলাম মনসুর নান্নু’কে দেয়া হয়। এই চারটি কাজের বিষয়েও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি রাখা হয়নি বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২১ মে বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে ফরিদপুরের আরও চারটি কলেজের উন্নয়নের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে জেলার মধুখালীর হাজী আবদুর রহমান অ্যান্ড আবদুল করিম কলেজের উন্নয়নের জন্য এক কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকার কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স খলিলুর রহমান’, নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৫৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার কাজ ‘মেসার্স অনিক এন্টারপ্রাইজ’, নগরকাম পল্লী ডিগ্রি কলেজের ৫৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার ঠিকাদারি কাজ ‘মেসার্স অনির্বাণ এন্টারপ্রাইজ’ এবং সদরপুর মহিলা কলেজের উন্নয়নের জন্য এক কোটি ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকার কাজ দেয়া হয় ‘মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ’কে। এসব কাজের কার্যাদেশ দেয়ার সময়ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সেলফোনে ইইডি’র ফরিদপুর অঞ্চলে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫টি কলেজের উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ দেয়া সময় অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন সামসুল হুদা। তিনি ফরিদপুর অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। সামসুল হুদা বর্তমানে ইইডি’র রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী।

ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ফরিদপুর ও রাজবাড়ির ১৫টি কলেজের উন্নয়ন কাজ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সামসুল হুদা বলেন, ‘ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া কাজ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ মিথ্যা। ঠিকাদারদের সব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করেই কাজ দেয়া হয়েছিল।’

‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত (১৫শ) কলেজসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। সম্পূর্ণ জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে দুই হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার এই মেগা (বড়) প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি সংসদীয় আসনের পাঁচটি বেসরকারি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কার ও আইসিটি শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে প্রতি কলেজের উন্নয়নে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078339576721191