ভর্তি কোচিংয়ে চাপ ও খরচ বেড়েছে, আছে ধোঁকাবাজি - Dainikshiksha

ভর্তি কোচিংয়ে চাপ ও খরচ বেড়েছে, আছে ধোঁকাবাজি

মোশতাক আহমেদ |

এইচএসসির ফল প্রকাশের দুই মাস বাকি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিংয়ে ভিড়। একজন শিক্ষার্থীর কোচিং ও আনুষঙ্গিক ব্যয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা

রাজধানীর গ্রিন রোডে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের দোতলায় উপচে পড়া ভিড়। আগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য—উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য কোচিং করা। ভর্তি কর্মকর্তাদের কথা বলার সময় নেই। তাঁরা ভর্তি করাচ্ছেন আর টাকা নিচ্ছেন। পাশেই তাঁদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হোস্টেলে থাকার জন্য আগত শিক্ষার্থীদের বোঝানো হচ্ছে। পাঁচ মাসের ‘প্যাকেজে’ সেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

সম্প্রতি দুই দিন ইউসিসিসহ আশপাশের আরও কয়েকটি কোচিং সেন্টারে গিয়েও কম-বেশি একই চিত্র দেখা গেল। জানা গেল, প্রতিটি কোচিং সেন্টার প্রতিবছর ফি বাড়াচ্ছে। এখন আবার বেশি টাকা ফি লিখে ‘মূল্য হ্রাসে’ ভর্তি করছে। এ ছাড়া আগের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একেকজন মেধাবী ছাত্রকে একাধিক কোচিং সেন্টার নিজেদের দাবি করে চটকদার প্রচারণা করছে।

উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেটের (এইচএসসি) ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২৫ মে। ফল প্রকাশের দুই মাস বাকি থাকলেও কোচিং সেন্টারগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেছে। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছে ১১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী কোচিংয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন একটি কোচিং সেন্টারের এক কর্মকর্তা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পাঠ্যবইনির্ভর। একজন শিক্ষার্থী যদি ভালোভাবে পাঠ্যবই পড়েন, তাহলে তার কোচিংয়ে পড়ার প্রয়োজন নেই; বরং মফস্বলের শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীন উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প গবেষণা করে দেখেছে, ভর্তি-ইচ্ছুক একেকজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে (এক সিজন) ভর্তি কোচিং ও আনুষঙ্গিক বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৯২ শতাংশ কোচিং করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালুর লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ওই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগের বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছেন। তাঁদের কোচিং ফিসহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে খরচ পড়েছিল প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এই ব্যয় বেড়েছে।

বর্তমানে ৩০টির মতো কোচিং সেন্টারের সারা দেশেই শাখা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ক্লাসভিত্তিক টাকার বিনিময়ে ক্লাস নেন। ঢাকার বাইরে কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস নেন।

১৬ মে গ্রিন রোডে অবস্থিত ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের ভর্তি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলছিলেন, কোচিং ফি প্রতিবছরই ৫০০ থেকে ১০০০ করে বাড়ানো হচ্ছে। একই দিনে ইউসিসি কোচিং সেন্টারে গিয়ে জানা গেল, শুধু বিজ্ঞান বিভাগে (‘ক’ ইউনিট) কোর্স ফি ১৫ হাজার, মানবিকের (‘খ’ ইউনিট) জন্য ১৪ হাজার, ব্যবসায় শিক্ষার (‘গ’ ইউনিট গণিতসহ) জন্য ১৬ হাজার টাকা। একসঙ্গে একাধিক ইউনিটের জন্য কোর্স ফি আরও বেশি। একজন ছাত্রের অভিভাবক বলেন, তাঁর ভাইকে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের মিরপুর ১০ নম্বর শাখায় ‘গ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটে ২২ হাজার টাকায় ভর্তি করালেও রসিদে ২৪ হাজার টাকা লেখা হয়।

চার থেকে পাঁচ মাস কোচিংয়ে পড়তে হয়। ২২ মে গ্রিন রোডে আইকন কোচিং সেন্টারের সামনে কথা হয় গাজীপুরের ছাত্র নাহিদ হাসানের সঙ্গে। তিনি যে হিসাব দিলেন, তাতে তঁার কোচিং ফি, থাকা-খাওয়াসহ খরচ হবে ৫০ হাজার টাকার মতো।

ধোঁকাবাজি

প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইউসিসির প্রসপেক্টাসে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে দ্বিতীয় হওয়া মো. ইমরুল হককে নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিয়ে ছবি প্রচার করেছে। আবার ইউনিএইড একই ছাত্রকে নিজেদের বলে প্রচার করেছে। একই ইউনিটে ষষ্ঠ হওয়া আরাফাত হোসেনকে দুই কোচিং সেন্টারই নিজেদের দাবি করে প্রসপেক্টাসে ছবি দিয়েছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া শুভ মহাজনকে ‘ত্রি ডক্টরস’ ও ‘কর্নিয়া’ কোচিং সেন্টার উভয়ই নিজেদের ছাত্র দাবি করেছে।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এবারও অনিশ্চিত

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্পের গবেষণায় বলা হয়, গড়ে একেকজন শিক্ষার্থী ৫ থেকে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ফলে তাঁদের প্রচুর অর্থ খরচ ও হয়রানি হয়। তাই একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একেকটি গুচ্ছ করে পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়। সরকার সমন্বিত পরীক্ষার উদ্যোগ নিলেও বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজি হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগ আছে, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফির টাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ভাগ করে নেন। তাই তাঁরা রাজি হন না। সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষার পরপর ভর্তি পরীক্ষা হলে কোচিংয়ের বোঝা ও হয়রানি বন্ধ হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বলেন, ভবিষ্যতে আইন করে সব ধরনের কোচিং বন্ধ করা হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তো দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি। এখন রাষ্ট্রপতি বলার ফলে এই চেষ্টা আরও জোরদার হবে।’ তবে আসন্ন ভর্তি থেকে সেটি চালু হবে কি না, তা বলতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী।

 সৌজন্যে: প্রথম আলো।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072479248046875