নারায়ণগঞ্জের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে চলছে এসব বাণিজ্য। শুধু ভর্তি আর কোচিং বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে অনেকে আবার বই বাণিজ্যের দিকেও হাত বাড়িয়েছেন। এসব বাণিজ্যের কবলে পড়ে অভিভাবক মহল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। বছর ঘুরলেই অভিভাবকদের গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এসব বাণিজ্য বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হলেও নারায়ণগঞ্জে ভর্তি ফি বাবদ আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া ভালো ফলের আশ্বাস দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পর শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে। সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে বিশাল অঙ্কের অর্থের জোগান দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। এমনও অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সোয়েটার কেনা না হলে ছাত্রীদের শরীর থেকে শিক্ষকরা সোয়েটার খুলে নেন।
বিদ্যালয়গুলোতে নির্ধারিত পাঠ্যবই ছাড়াও বিভিন্ন বই পড়ানো হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ ও সাধারণ জ্ঞানের বই। শিক্ষার্থীদের এসব বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। স্কুলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাঠ্য-সহায়িকা বই ছেপে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে।
জানা গেছে, চলতি বছর ফতুল্লার হাজি উজির আলী স্কুল নয় লাখ টাকার, গণবিদ্যা নিকেতন স্কুল চার লাখ টাকার ও মর্গ্যান স্কুল সাত লাখ টাকার ব্যাকরণ বই ছেপেছে, যা তারা শিক্ষার্থীদের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রি করেছেন। এ বাণিজ্য তারা কয়েক বছর ধরে করে এলেও এ বছর তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সূত্রমতে, এ বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের অনেক বিদ্যালয় এমন কাজ করছে প্রতিনিয়িত।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ৩৯ নম্বর আদর্শ শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আইইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ভর্তি ও সেশন ফি নিচ্ছে। বাধ্য হয়ে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ভর্তি ও সেশন ফি দিচ্ছেন। আদর্শ শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু কল্যাণ সংস্থার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও সেশন ফি আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মাহফুজা বেগম বলেন, ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি প্রচণ্ড প্রভাবশালী। আমার কিছু করার নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ছরোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে এ রকম কোনো অভিযোগ আসেনি। সরকারি স্কুলে ভর্তি ফি ও কোচিং বাণিজ্য গুরুতর অপরাধ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।