ভারতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ অর্ধেক - দৈনিকশিক্ষা

ভারতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ অর্ধেক

বিভাষ বাড়ৈ |

ভারতে বিশ্বমানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চশিক্ষা খরচ বর্তমানে দেশের ভাল মানের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও কম। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভারতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার খরচ প্রায় অর্ধেক। এছাড়া শিক্ষাও মেলে আন্তর্জাতিক মানের। আবার উচ্চশিক্ষা শেষে সেদেশেই মিলছে আকর্ষণীয় সব চাকরি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দু’দিনব্যাপী ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক শিক্ষা মেলার শেষ দিনে এমন সব তথ্যই দিলেন আয়োজকরা। তথ্য পেতে মেলায় আগত শিক্ষার্থীদের আগ্রহও ছিল ব্যাপক। শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এ মেলার উদ্বোধন করেছিলেন। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসিক স্কুলগুলোতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সহজে অধ্যয়নের তথ্যাদি জানাতেই এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং আবাসিক স্কুল অংশ নেয়। মূল উদ্দেশ্য ভারতে অধ্যয়নে ইচ্ছুক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সহজে সঠিক তথ্য দেয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন।

প্রথম দিনেই আয়োজকরা জানিয়েছিলেন, মেলায় কোর্স ফি, ইন্সটলমেন্ট সিস্টেম, কোর্সের ডিমান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকছে। শেষদিন শনিবার মেলায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় ছিল। মেলায় সব বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্যই স্টল নিয়ে বসেছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ছোটদের জন্যও যেমন বিভিন্ন স্কুল এসেছে, তেমনি ওয়ার্ল্ডক্লাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসেছিল। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্টলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাওয়ায়, ভারতে পড়াশোনার জন্য ছেলেমেয়েকে পাঠাতে অভিভাবকদের আগ্রহ বেড়েছে। সন্তানকে ভারতে পড়ালেখা করাতে ইচ্ছুক অভিভাবক আসনাহেনা বলছিলেন, বাংলাদেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়ালেখার খবচ অনেক বেশি। সে হিসাবে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ কম। তাই ভাবছি ছেলেকে ভারতে পাঠাব।

ক্যামব্রিজ কারিকুলাম, ব্যাকলোরেট কারিকুলাম কিংবা ইন্ডিয়ান কারিকুলাম তিন মাধ্যমেই পড়ার সুযোগ দিয়েছে মেলায় অংশগ্রহণকারী স্কুলগুলো। স্কুলের প্রধানরা মেলায় আগত অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। স্ট্যান্ডার্ড টু থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত ভর্তি নেয় স্কুলগুলো। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, প্যারা মেডিক্যাল, ডেন্টাল, নার্সিং, বায়ো টেকনোলজি, ফার্মেসি, আইটি, এমবিএ, বিবিএ, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, জার্নালিজম, আর্কিটেকচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্পট এ্যাডমিশনের সুযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অংশ-গ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সারদা বিশ্ববিদ্যালয়, অমিতি বিশ্ববিদ্যালয়, এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয়, আচার্য ইন্সটিটিউট, মানব রচনা বিশ্ববিদ্যালয়, এ্যালায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, লাভলি প্রফেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, মোদি বিশ্ববিদ্যালয়, অপিজয় সত্য বিশ্ববিদ্যালয়, এইমস ইন্সটিটিউট অন্যতম।

মেলাতেই অনেকে ভারতের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বুকিং দিয়েছেন। ব্যাঙ্গালুরুর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা মোস্তফা জাভেদ শুক্রবার দুপুরের দিকে বলছিলেন, এবারের মেলায় তাদের প্রতিষ্ঠানে ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় অভিভাবকদের আগ্রহ বেড়েছে। আশা করছি ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী আরও বাড়বে।

ভারতে উচ্চশিক্ষা নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিলা আখতার। তার আগ্রহেই তার বাবা সুকুমার চক্রবর্তী মেলায় এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমাদের দেশের ভাল মানের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ অনেক বেশি। অথচ মেলায় এসে দেখলাম ভারতে তার চেয়ে ভালমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খবচ অনেক কম। সে তুলনায় ভারতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খরচ প্রায় অর্ধেক। তাই ভারতেই উচ্চশিক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

অনেক অভিভাবকই ভারতে সন্তানকে পড়ালেখা করানো ছাড়াও সেখানে ভাল চাকরির আশাও করছেন। অভিভাবকদের একজন রাজিব। মেয়ের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে করতে তিনি বলছিলেন, ভারতে উচ্চশিক্ষা নেয়ার একটা বড় সুবিধা হলো-সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির যোগাযোগ থাকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্পট ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করে কর্মী নিয়োগ দেয়। এতে ভালরা সহজেই জব পেয়ে যায়।

ভারতের ভাল কোন স্কুলে সন্তানকে পড়ানোর আশায় অনেকেরই বাবা-মা একসঙ্গে এসেছেন মেলায়। এমন এক দম্পতি আহসান ও লিটা রহমান। তারা বলছিলেন, একমাত্র ছেলে রুবেলকে আমরা ভারতে পড়াতে চাই। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ভারতের যে স্কুলটা ভাল হবে সেটাতেই ছেলেকে ভর্তি করাব বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দেবদাস মজুমদার তার মেয়ে রাখিকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। ভারতের কোন স্কুলে মেয়েকে পড়ানোর আগ্রহের কথাই বললেন এ অভিভাবক। কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সন্তান ভারতের সাগর স্কুলে পড়ালেখা করছে। আমার সন্তানকেও সেখানে পড়াতে চাই। সেজন্য তথ্য সংগ্রহ করতে মেলায় এসেছি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যও সংগ্রহ করছি।

জানা গেল, দ্যা সাগর স্কুল ২০১০ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে উইনার অব ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। মেলায় স্টল নিয়ে ভাল সাড়া ফেলেছেন এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা। এ্যাডমিশন অফিসার গুরসিমরান সিং বলছিলেন, এ স্কুলে শুধু পাঠ্যসূচীর মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে না। এখানে সফট স্কিল হিসেবে গান, বাজনা, খেলাধুলা, বিভিন্ন দর্শনীয় ও শিক্ষণীয় স্থান পরিদর্শন ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া হোস্টেলে হাউসপ্যারেন্টের মাধ্যমে সঠিক কেয়ার নেয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ফলে ছেলে-মেয়েদের বিকাশ ভাল হয়।

মেলা আয়োজনের বিষয়ে আগের দিনই ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছিলেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভারতের উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে। আমরা ভিসা প্রক্রিয়া অনেক সহজ করেছি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভিসা নিতে এখন আর দুর্ভোগে পড়তে হয় না। বাংলাদেশ ভারতের সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র। দ্’ুদেশের খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি ও ভাষার ঐতিহ্যে অনেক মিল। এই শিক্ষা মেলা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভারতে পড়ার অনেক সুযোগ করে দেবে। ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে উভয় দেশে সোনালী অধ্যায় শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ভারতের হাইকমিশনার।

আয়োজকদের প্রত্যেকেই জানালেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ ভারত। প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতে যান।

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065238475799561