মতিঝিল আইডিয়ালে ভর্তি বাণিজ্যের নতুন কৌশল! - দৈনিকশিক্ষা

মতিঝিল আইডিয়ালে ভর্তি বাণিজ্যের নতুন কৌশল!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে এবারও ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, এবার তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন  অভিভাবক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, এবার ভর্তি বাণিজ্য হয়েছে নতুন কৌশলে। গত দেড় মাসে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে অবৈধভাবে। ওই ৫০০ শিক্ষার্থীর প্রতিজনের ভর্তির জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অভিভাবকদের অভিযোগ, এবার দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি বাণিজ্যে নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের বলা হয়েছে—অবশ্যই ভর্তি ফরম কিনতে হবে এবং লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে, যা আগে লাগত না। পরে ওই সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার উত্তরপত্রে টেম্পারিং বা কারসাজি করে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কিছু না লিখলেও তাদের উত্তরপত্র পুরোটাই লিখে দেওয়া হয়েছে। এতে খুব সহজেই ওই শিক্ষার্থীরা মেধাতালিকার প্রথম দিকে অবস্থান করেছে এবং সহজেই ভর্তি হয়ে গেছে।

জানা যায়, প্রথম শ্রেণিতে যেহেতু লটারি হয় তাই এই শ্রেণিতে অবৈধভাবে ভর্তি করালে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। ভর্তির লটারির দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকেন। তাই এই শ্রেণিতে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী অবৈধভাবে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে এবার দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্তই বেশি ভর্তি করানো হয়েছে অবৈধভাবে। আর এ ধরনের বেশির ভাগ ভর্তিই হয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে।

জানা যায়, স্কুলের মতিঝিল শাখার কর্মকর্তা এবং বনশ্রী শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মূলত অবৈধ ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী জোগাড় ও অর্থ সংগ্রহ করেন। মতিঝিল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে টেম্পারিংয়ের কাজ করেন। আর সব কাজের বিস্তারিত তদারকি করেন গভর্নিং বডির ওই সদস্য। তবে অবৈধভাবে ভর্তির বিনিময়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার ভাগ আরো বিভিন্ন স্থানে দিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। এ জন্য বনশ্রী শাখার একজন সহকারী প্রধান শিক্ষককে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। বনশ্রীর একটি ওষুধের দোকানে বসে এই টাকার লেনদেন হয়। আমাদের জানানো হয়, তিনি মিডিয়া হিসেবে মাত্র ২০ হাজার টাকা পাবেন। আর বাকি তিন লাখ অন্যদের দিয়ে দিতে হবে। ’

আরেকজন অভিভাবক জানান, তিন লাখ টাকা দিয়ে তিনি তাঁর সন্তানকে স্কুলের মতিঝিল শাখায় সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অভিভাবক বলেন, ‘আমি টাকা দিয়েছি মতিঝিল শাখার এক কর্মকর্তাকে। আমাকে বলা হয়েছিল, ফরমও কিনতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিতে হবে। তবে পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখলেও চলবে। সে অনুযায়ীই আমার ছেলে ফাঁকা খাতা জমা দিয়ে এসেছে। এর পরও ফলাফলে দেখলাম আমার ছেলের রোল নম্বর প্রথম দিকেই রয়েছে। ’

অবৈধভাবে ভর্তির এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মতিঝিলের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, ‘এবার আমাদের মেরিটের বাইরে একজনও ভর্তি করানো হয়নি। তবে গত বছর হয়েছিল, সেটা আমরা স্বীকারও করেছি। আসলে মানুষ কিছু না পেলে অনেক ধরনের কথাই বলে। ’

জানা যায়, কিছু অভিভাবক নামধারী রয়েছেন যারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখানোর হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেন।

জানা যায়, গত বছরও মাউশি অধিদপ্তরের এক তদন্তে এই স্কুলের তিন শাখায় এক হাজার ৯৮১ জন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী অবৈধভাবে ভর্তি করানোর প্রমাণ মিলেছিল। এমনকি ভর্তি ফরম না নিয়েই ওই সব শিক্ষার্থী সরাসরি ভর্তি করানো হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিভাবকদের দাবি, গত বছর ধরা পড়ে যাওয়ায় এবার অবৈধভাবে ভর্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। একবারে না করে ধীরে ধীরে করা হয়েছে।

মাউশি অধিদপ্তরের একজন পরিচালক বলেন, ‘গত বছর মতিঝিল আইডিয়ালের বিরুদ্ধে অবৈধ ভর্তির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এবারও যদি অবৈধ ভর্তির অভিযোগ ওঠে অবশ্যই বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ভর্তি তদারকি টিমও রয়েছে, তাদের নজরেও ব্যাপারটি আনা হবে। ’

জানা যায়, বর্তমানে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মোল্লা জালাল উদ্দিন ওই অ্যাডহক কমিটির সভাপতি। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হলেন সদস্যসচিব। এ ছাড়া আছেন অভিভাবক প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং শিক্ষক প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম। গত ৩০ আগস্ট এই চার সদস্য নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়। নিয়মানুযায়ী চলতি মাস পর্যন্ত এই কমিটির মেয়াদ আছে।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038309097290039