শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে কারিগরি শাখার ৮টি বিদ্যালয়ের ৭৮ শিক্ষক ও ১টি মাদ্রাসার ১ জন শিক্ষকসহ ৭৯ জন শিক্ষকের এমপিও স্থানান্তরিতকরণ সংক্রান্ত ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, চলতি বছরের গত ১৯শে এপ্রিল শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত ওই ৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারির এমপিও ফাইলটি কারিগরি অধিদপ্তরে স্থানান্তরের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে প্রেরণ করা হয়।
অভিযোগকারী দাবী করেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে খবর নিয়ে জানা যায়, ফাইলটি গত ২৩শে এপ্রিল মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার রিসেপশনে পৌছায় যার ডকেট/ এন্ট্রি নম্বর ১২৮৬/২৩.০৪.১৭। সেখান থেকে গত ২৫শে এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পৌছায়, যার ডকেট/ এন্ট্রি নম্বর ১৩৩২/২৫.০৪.১৭।
তবে রহস্যজনকভাবে এরপর ফাইলটি কোথায় গেছে সে বিষয়ে আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সচিবের কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে রিসেপশনে পাঠানো হয়েছে কারিগরি শাখায় প্রেরণের জন্য। কিন্তু রিসেপশন থেকে একবার বলা হচ্ছে কারিগরি শাখায় হাতে হাতে প্রেরণ করা হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে সচিবের কাছ থেকেই ফাইলটি আসেনি।
এবিষয়ে বুধবার (১৪ই জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীর দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রতিদিন ডাক ফাইলে অনেক কাগজপত্র আমার এখানে আসে। তবে এর মধ্যে নির্দিষ্ট কোন একটি সম্পর্কে মনে রাখা তো সম্ভব নয়। এসময় তিনি আরো বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ যদি ফাইলটি পাঠিয়ে থাকে তবে পাঠানোর তারিখ ও স্মারক নম্বর আমাকে দিলে আমি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারি যে ফাইলটি মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগে এসেছে কিনা। যদি এসে থাকে তবে অবশ্যই সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে ওই একইদিন মো: আলমগীর দৈনিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করে জানান যে, ৮টি কারিগরি স্কুলের মোট ৭৮জন শিক্ষক-কর্মচারির ফাইলটি মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে এস পৌছেছে এবং ওই ফাইলটি তার সামনেই আছে। এখন এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে জামাল হোসেন নামে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একজন শিক্ষক মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শাখায় একাধিকবার খুঁজেও উল্লেখিত স্মারক নম্বরের কোনো ফাইল পাওয়া যায়নি বলে দাবী করেছেন। কারিগরি শাখা থেকে বলা হয় এধরণের কোন ফাইল এ শাখায় আসেনি বলে জানান অভিযোগকারী।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের কাছে ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর অতিরিক্ত সচিব (বেসরকরারি মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমদের কাছে ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
ভুক্তোভোগীদের প্রশ্ন হলো ৭৯ জন শিক্ষকের তথ্য সম্বলিত এমপিও সংক্রান্ত একটি বড় ফাইল কীভাবে হারিয়ে যায়? এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবহেলা নাকি উদাসীনতা! এখন এর সমাধান কী?
জানা যায়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএ কর্তৃক দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ পেয়েও এমপিও হচ্ছে না তাদের প্রতিষ্ঠান মাউশি থেকে স্থানান্তরিত হয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে না যাওয়া পর্যন্ত। আবার প্রশাসনিক পদে এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিও নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না স্থানান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই এমপিও ফাইলে দেখা যায়, ৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭৯ জন শিক্ষক কর্মচারির এমপিও বাবদ মোট ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বাজেটে পুন: উপযোজনের অনুমতি প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়।