মাতৃভাষার শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ - Dainikshiksha

মাতৃভাষার শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

মযহারুল ইসলাম বাবলা |

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রধান ত্রুটিটিকে যদি চিহ্নিত করা হয় তাহলে প্রাথমিক ত্রুটিটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যতটা মনোযোগী, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন নিয়ে রাষ্ট্রের উদাসীনতা মোটেও অস্পষ্ট নয়। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনে উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের আস্থা-ভরসা নেই। তারা বেসরকারি বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনকেই যোগ্যরূপে বেছে নিয়েছে। নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সংখ্যাগরিষ্ঠদের অর্থনৈতিক কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতেই ঠাসাঠাসি করে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষক যেমন অপ্রতুল। তেমনি শ্রেণীকক্ষের পরিধিও। মানের বিষয়টিও বিবেচ্য। একটি জাতির শিক্ষা বিস্তারে অবিকল্প শর্তটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ। প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে জাতির শিক্ষা বিস্তারের মূল ভিত। সেটি মজবুত না হলে উচ্চশিক্ষার ভার বহনে সক্ষম হবে না। প্রাথমিক শিক্ষার ভিতের ওপরই ক্রমান্বয়ে উচ্চশিক্ষা ভর করে। অনিবার্য কারণে প্রাথমিক শিক্ষার ভিতটি শক্ত-পোক্ত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষক, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক সহজলভ্যতা সৃষ্টি করা কেবল আবশ্যক নয়, অপরিহার্যও বটে। জাতির শিক্ষার মানদ- বিচারে প্রাথমিকের শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক।

আমাদের এই স্বাধীন দেশে তিনটি ভিন্নমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একটি ইংরেজি মাধ্যম, একটি আরবি মাধ্যম, অবশিষ্টটি মাধ্যমিক স্তর। মাধ্যমিকে মাতৃভাষার প্রাধান্যে অপরাপর ভাষা ও বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এই তিন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একমুখী এবং মাতৃভাষানির্ভর করা সম্ভব না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভাজন এবং বৈষম্য কেবলই বৃদ্ধি পাবে। সমাজে আরো বহুমাত্রিক বিভক্তি-বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করবে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাই রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। সে কারণে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকার। মাধ্যমিকের শিক্ষার অগ্রগতি অতীতের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে হলেও, ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ক্রমান্বয়ে সংকুচিত করা হয়েছে। অতীতে ইতিহাস, ভূগোল, পৌরনীতির পৃথকীকরণ ছিল। এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল ইতিহাস। এখন ইতিহাসকে সংকুচিত করে কোণঠাসা করা হয়েছে। জাতির মনন বিকাশে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণে ইতিহাসের বহুমাত্রিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। ইতিহাস জ্ঞানের অপরিহার্যতার বিকল্প নেই। পাশাপাশি দর্শন এবং মাতৃভাষার সাহিত্য-বিশ্বসাহিত্যের বঙ্গানুবাদও অতি আবশ্যিক। ইতিহাস বর্জিত জাতি কখনোই নিজেদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে ধারণ করতে সক্ষম হয় না। ইতিহাস জ্ঞানের ঘাটতি অপূরণীয় বলেই বিবেচনার দাবি রাখে। আমাদের শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের অবদান অপর দুই ধারা থেকে স্বাতন্ত্র্য। ঐ দুই ধারা প্রকৃতই জাতির জন্য কল্যাণকর অবদান রাখতে অসমর্থ।

শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য প্রবল হয়ে পড়েছে। সমাজের সুবিধাভোগী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বঞ্চিতরা মোটা দাগে বিভাজিত। এই বিভাজন দূর করা সম্ভব না হলে জাতির শিক্ষা বিস্তারে অন্তরায়ের পাশাপাশি বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্র ও সরকারের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়ন্ত্রণ থাকলেও অপর দুই মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। নেই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের সুযোগও। তারা রাষ্ট্র ও সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত বলেই তাদের ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিজাতীয় শিক্ষা প্রদানের সুযোগ পেয়ে বসেছে। শিক্ষা এখন মুনাফার হাতে বন্দী। শিক্ষা এখন ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্যে পরিণত। রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রের ন্যায় শিক্ষাক্ষেত্র থেকেও দায়মুক্তি নেবার তালে আছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষার অধিকার সাংবিধানিক। সেই অধিকার সংকুচিত এবং বিভাজিত। জাতির শিক্ষা বিস্তারে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও অবস্থান সঙ্গতকারণে প্রশ্নবিদ্ধ।

আমাদের সমাজ জুড়ে হেজাবের প্রচলন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও হেজাব পরিধান প্রবলতর এখন। এককথায় হেজাব পরার হুজুগ পড়েছে দেশে। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি শাসনামলেও হেজাবের প্রচলন ছিল না। বয়স্কদের মধ্যে বোরকা পরিধানের রেওয়াজ ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোরকার প্রচলন ছিল অতি নগণ্য। তাদের হাতে গোনা যেত। এখন চারদিকে হেজাব পরিহিতাদের ছড়াছড়ি। হেজাব কি তবে নারীর আত্মরক্ষার ঢাল কিংবা ফ্যাশন? আত্মরক্ষায় হেজাব যথেষ্ট নয়। কিশোরী তনু দেশের সর্বাধিক নিরাপদ স্থানগুলোর একটিতে নৃশংসভাবে ধর্ষিত ও খুন হয়েছে। তনুকে তার হেজাব রক্ষা করতে পারেনি। ফ্যাশনরূপে হেজাবের প্রচলন দেখা যায় পিরামিডের ন্যায় উঁচু খোঁপায় হেজাবে আবৃত করে মাথার বিভিন্ন অংশে কারুকাজ খঁচিত ইমিটেশন জুয়েলারি অাঁটানো। এই হেজাব পরিধানকে কেতাদুরস্ত হওয়া ছাড়া আর কি বলা যায়! ধর্মীয় অনুশাসন পালনকারীরা চোখ দুটি অবশিষ্ট রেখে পা থেকে মাথা অবধি কাপড়ে মুড়িয়ে পর্দা করেন। মুখ-ম-ল উন্মুক্ত রেখে কেবল মাথা ঢাকার এই হেজাব পরিধানকে ধর্মীয় আচার বলা যায় কি? আর এটা তো সত্য আবহমান কালের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে হেজাবের পরিচয়-সম্পর্ক বলে তো কিছুই নেই।

আমাদের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা সিলেবাসকেন্দ্রিক। এজন্য ব্যবস্থা দায়ী। শিক্ষার্থীরা নয়। সিলেবাসকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমের অধীনেই শিক্ষার্থীদের সীমানা নির্ধারিত। এর বাইরে যাবার তো তাদের উপায় নেই। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের পক্ষে একমাত্র সাহিত্যানুরাগী ব্যতীত মাতৃভাষার সাহিত্য পাঠের অবকাশ অন্যদের কোথায়? বিশ্বসাহিত্য বলতে আমরা ইংরেজি সাহিত্য বুঝি। বিষয়টি সঠিক নয়। বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদ এই ধারণার জন্ম দিয়েছে। ইউরোপের একমাত্র ইংরেজি ভাষী দেশ ইংল্যান্ড ব্যতীত দ্বিতীয় কোন ইংরেজি ভাষী দেশ নেই। এমন কি যুক্তরাজ্যের অপরাপর রাষ্ট্র স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েলসও ইংরেজি ভাষী নয়। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডই ইংরেজি ভাষী দেশ। এর বাইরে ক্ষুদ্র দু-একটি রাষ্ট্র থাকলেও তিন মহাদেশের ঐ পাঁচটি দেশই কেবল ইংরেজি ভাষী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশিক শাসন-শোষণে ইংরেজি ভাষার বিস্তার লাভ ঘটেছে। ইংরেজি প্রীতি সঙ্গত কারণে ঔপনিবেশিক মানসিকতা রূপেই গণ্য করা যায়। বিশ্বের অপরাপর রাষ্ট্রের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হলেও সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশিক শাসন-শোষণের অধীনে থাকা দেশসমূহে ইংরেজি ভাষার প্রচলন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এবং বিকল্প ভাষা রূপে ইংরেজি ভাষাকে গণ্য করারও সুযোগ করে দিয়েছে।

মাতৃভাষা হচ্ছে ভাষা-জ্ঞানের ভিত। নিজ ভাষার দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে অন্য ভাষা গ্রহণের যোগ্যতা। ভাষা জানা অপরাধ নয়। সেটা যোগ্যতা ও দক্ষতারই পরিচয়। তবে মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করা অপরাধ। আমাদের তরুণেরা পাঠে নয়, দেখা ও শোনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা সংবাদপত্র পাঠের চেয়ে স্মার্টফোনে, ল্যাপটপে, আইপ্যাড, টিভি মিডিয়ায় নির্ভরশীল। এই প্রবণতা ব্যক্তির নয়। তরুণ প্রজন্মের সমষ্টির। ইন্টারনেটে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ম্যাসেঞ্জার, লিঙ্কইন, ইমু ইত্যাদিতে তারা মাদকাসক্তের ন্যায় আসক্ত। এতে সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা এবং সর্বোপরি সময় অপচয়ের যে করুণ দশা আমরা দেখছি, তাতে হতাশ না হয়ে উপায় নেই। হাস্যকর হলেও মোবাইল ফোনে ঐ সকল ব্যবহারকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমরূপে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বাসে, রিকশায়, গাড়িতে এবং পথে-ঘাটে যত্রতত্র তরুণদের স্মার্ট ফোন হাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। রাত জেগে ফোন হাতে টিপাটিপিতেও তারা একপ্রকার নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এটা অবশ্যই আতঙ্কের বিষয়। বিশ্বের ধনপতিদের শীর্ষ এবং প্রযুক্তি ব্যবসার সেরা ব্যক্তি বিল গেটস্ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পরিণত বয়সের পূর্বে তিনি নিজ সন্তানদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেননি। অথচ প্রযুক্তির এই ব্যবসায় তিনি বিশ্বের সেরা ধনপতি।

আমাদের শিক্ষাক্রমে উন্নতি-অগ্রগতি যে হয়নি, সেটা সত্য নয়। উন্নতি-অগ্রগতি নিশ্চয় হয়েছে। বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে যে অবনতি ঘটেনি সেটাও মিথ্যে নয়। আমাদের শিক্ষাক্রমে মানবিক শাখা অবহেলিত। বিজ্ঞানও বাণিজ্যের দাপটে সর্বোচ্চ স্থানচ্যুত হবার অপেক্ষায়। সাহিত্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা লাভের পর সম্মানজনক পেশায় যুক্ত হবার সুযোগ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। তাই সাহিত্য বিষয়ে আগ্রহের ভাটির টান লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজি সাহিত্যের কদর থাকলেও, বাংলা সাহিত্যের কদর-মর্যাদা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এতে শিক্ষার্থীদের বাংলা সাহিত্যের আকর্ষণ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অগতির গতি বাংলা বিভাগ। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগও নেই। যে ভাষার জন্য এ জাতি প্রাণ দিয়েছিল, করেছিল সর্বোচ্চ ত্যাগ। সে জাতির মাতৃভাষার প্রতি পিছুটান নিশ্চয় কলঙ্কজনক। বিশ্বের অন্য কোন জাতি নিজ মাতৃভাষা রক্ষায় যা করতে পারেনি কিংবা করেনি, আমরা তা করেছি। সেটা আমাদের ঐতিহ্য-অহংকারেরই স্মারক।

আধুনিক এবং সামাজিক শব্দ দুটি আমাদের সমাজ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে আধুনিকতার সংজ্ঞাও পাল্টে যাচ্ছে। বাহ্যিক ধোপ-দুরস্ত পোশাকী আবরণ, মুখে ইংরেজি-বাংলার মিশেলে কথা বলা এখন আধুনিকতার প্রতীক হয়ে পড়েছে। উচ্চশিক্ষা লাভকারী মানুষ মাত্রই যেমন শিক্ষিত রূপে স্বীকৃতি লাভ করে, ঠিক তেমনি। সংস্কৃতিহীন, পশ্চাৎপদ মানুষও ঐ সকল যোগ্যতায় আধুনিক মানুষ হয়ে ওঠে। দৃষ্টিভঙ্গিতে, জ্ঞানে-মননে সংস্কৃতিবান, আচার-আচরণে মানবিক মানুষই প্রকৃত আধুনিক মানুষ। গ্রহণ এবং বর্জনে সমান দক্ষতাও আধুনিকতার পরিচয় বহন করে। সমাজজুড়ে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আধুনিক মানুষ সব সময় এগিয়ে আসে। তেমন অগ্রসর মানুষ আমাদের সমাজে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বলেই বদলে যাচ্ছে আধুনিকতার সংজ্ঞাও। কুসংস্কার মুক্ত সংস্কৃতিবানদেরই আধুনিক মানুষ রূপে গণ্য করা হয়। সামাজিক মানুষকেও তদ্রূপ। দেশে আমাদের ঐতিহ্যপূর্ণ সামাজিকতা এখন লুপ্ত হবার পথে। যারা সামাজিকতাকে এখনও ধারণ করে আছেন তারা নিঃসন্দেহে সজ্জন মানুষ। অন্য প্রাণীর থেকে মানুষ পৃথক তার সামাজিকতার গুণে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সামাজিকতা বিলুপ্তির পথে। যারা আধুনিক এবং সামাজিক তারা তো সমাজের অগ্রগণ্য অংশ। মানুষ যেমন উদ্ভাবনী জ্ঞানের কারণে সকল প্রাণির চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তেমনি সামাজিকতাও মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। মানুষ একাকী মরতে পারে। কিন্তু বাঁচতে হলে সবাইকে নিয়ে বাঁচা চাই। সামাজিকতা মনুষ্য জীবনের অন্যতম প্রধান প্রতিপাদ্য। সামাজিকতা মানুষের জীবনের অনিবার্য বৈশিষ্ট্যও।

একটি জাতি কতটা অগ্রসর, সেটা নিরূপণ হয় জাতির শিক্ষার হারের ওপর। শিক্ষা জাতির জন্য সুযোগ নয়, অধিকার। এই অধিকার সাংবিধানিক। জাতিকে শিক্ষার অভিমুখে সার্বিক সহায়তা প্রদান রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকারকেই বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে দায়মুক্তির সুযোগ নেই। সকল নাগরিকের অভিন্ন শিক্ষার মাধ্যম প্রচলন ও প্রতিষ্ঠার দায়ও তাদেরই। সবার জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা (শিক্ষানীতি) প্রণয়ন স্বাধীন দেশে হয়নি। যে ক’টি হয়েছে তাতে সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়নি। বিপরীতে সংকুচিত করে শিক্ষাকে পাঠানো হয়েছে শিক্ষার বাণিজ্যালয়ে। ধর্মান্ধ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে তাদের মত ও পথ অনুযায়ী অবাধে মাদ্রাসা পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রের ও সরকারের নূ্যনতম নির্দেশনা পালিত হয় না। অথচ রাষ্ট্রীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে মাদ্রাসাসমূহে। এসব ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছাপূরণের অভিলাষ মাত্র। স্বীকার করতে হবে সুবিধাবঞ্চিত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পেশা ও জীবিকার মূলধারায় যুক্ত হতে পারছে না, যোগ্যতার বিচারে। অপরদিকে বিত্তবান এবং মধ্যবিত্ত সুবিধাভোগী শ্রেণী ইংরেজি মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে বিদেশে পাড়ি দিতে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এবং বিদেশে স্থায়ী হওয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অর্থাৎ মেধা পাচার হওয়া।

শিক্ষাক্ষেত্রে সামগ্রিক অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা সর্বোপরি বৈষম্য দূর করা বিদ্যমান ব্যবস্থাধীনে সম্ভব বলে বিবেচনা করা যাবে না। ব্যবস্থাটির বদল না ঘটলে শিক্ষাক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেটা অপসারণ সম্ভব হবে না। তাই ব্যবস্থা বদল অনিবার্য। এই সত্যটি আমাদের আমলে নেয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

[লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত]

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073859691619873