মাদ্রাসা কখনও জঙ্গি সৃষ্টি করে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, সুবিধাবাদী সন্ত্রাসীরা ইসলামের নাম ভাঙিয়ে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে।
বুধবার সকালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা একাডেমির (নায়েম) কনফারেন্স হলে আয়োজিত মাদরাসা শিক্ষা ধারার জন্য উন্নয়নকৃত ইন্টার্যাকটিভ ডিজিটাল টেক্সটবুক (আইডিএমটি) রিভিউ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা দেশে অরাজকা সৃষ্টি করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নামে দুর্নাম ছড়ায়। মাদ্রাসা জ্ঞান অর্জনের জায়গা, জ্ঞানে ভাণ্ডার। কিন্তু নীরিহ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা টার্গেটে পড়ে যায়। ইসলাম শান্তির ধর্ম, প্রকৃত মানুষ হওয়ার নির্দেশনা ইসলাম ধর্মে আছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ইসলাম জ্ঞান অর্জনের ধর্ম। প্রকৃত মানুষ হওয়ার মূলমন্ত্র ইসলামে আছে। সর্বোপরি ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সঠিক পথে পরিচালনা করার পাশাপাশি অন্যকেও সঠিক পথের দিশা দেখাতে হবে।
জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পশ্চাৎপদের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে আমাদের সমাজ। আল্লাহর আইন, সৎ লোকের শাসনের নামে দুর্নীতির শাসন চালিয়েছে তারা। তাদের সময়ে কোনো মাদরাসায় একটি ইট পর্যন্ত লাগেনি। আমরা ৩৫টি মাদরাসা নিয়ে একটি মডেল প্রকল্প শুরু করেছি। ফলাফলের ভিত্তিতে মাদরাসাগুলোকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এমপিওভুক্ত মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন কয়েকগুণ বাড়িয়েছি। আপনারা টেনশন করবেন না। পাস করিয়ে যেহেতু নিয়ে আসতে পেরেছি কার্যকরও করতে পারবো।তিনি রসিকতা করে এসময় বলেন, আমার তো মনে হয় আর কিছু দিন পরে হলে আরো ভালো হতো। কারণ, টাকাগুলো জমা হতো। একসঙ্গে অনেক টাকা আপনারা তুলতে পারতেন।
টেক্সটবুক ডিজিটালাইজড করার পথ মসৃণ ছিলো না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, প্রথম কুরআন-হাদিস ডিজিটালাইজড করার সিদ্ধান্ত নিলে, বহু মানুষ নানা কথা বলেছে। তারা বলেছে, কুরআন-হাদিস মেশিনে ঢুকিয়ে দিয়েছে! আমরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে, সংশয়ে ছিলাম। এখন সেসব বাধা-বিপত্তি থেকে আমরা বেরিয়েছি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো ভালোভাবে কুরআন-হাদিস এবং ফিকাহ শেখা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
ডিজিটালাইজড বইগুলো যেন স্বচ্ছ এবং নির্ভুল হয় সেদিকে নজর দিতে আলেমদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, কিছু লোক হাঙ্গামা করার সুযোগ খোঁজে। আপনারা যারা আলেম আছেন তারা প্রতিটি শব্দ চয়নে গভীরভাবে পর্যক্ষেণ করবেন। যাতে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু না থাকে।
এ কর্মসূচির আওতায় ষষ্ঠ শ্রেণির চারটি বই ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যের প্রয়োজনীয় অর্থ, বাস্তব উদাহরণ, বিশেষ সাংকেতিক চিহৃ, অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশনসহ বিশেষ ডিজিটাল সুবিধা নির্দিষ্ট বর্ণে ক্লিক করে খুঁজে নিতে পারবে।
সঠিকভাবে পড়া, দেখা এবং শোনার জন্য ওভারেল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্পের উপস্থাপক বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. অনিন্দ্য ইকবাল বলেন, ইন্টারনেটে এপ্রিলের মধ্যে এ চারটি বই উন্মক্ত করে দেয়া হবে। চাইলে যে কেউ বইগুলো ডাইনলোড করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবে। টেক্সটে যে কোনো আন্ডার লাইন করা যাবে। এবং সেখানে প্রয়োজনীয় বিষয়াদী লিখে শিক্ষককে মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে পারবে।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফ উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, অতিরিক্ত শিক্ষা সচিব (মাদরাসা) এসএম এহসান কবীর। আরো উপস্থিত ছিলেন- নায়েমের মহাপরিচালক হামিদুল হক।
কর্মশালা ২৩ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে (২৬ মার্চ ব্যতিত)। এ পাঁচ দিনব্যাপী ষষ্ঠ শ্রেণির চারটি বইয়ের ডিজিটালাইজড সংস্করণের ওপর আলোচনা-পর্যালোচনা করা হবে।উল্লেখ্য সেসেপ এবং বুয়েটের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
এ সংক্রান্ত আরো খবর: