মাধ্যমিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ব্যবধান বাড়ছে : ঝড়ে পড়ছে দশ লাখ - দৈনিকশিক্ষা

মাধ্যমিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ব্যবধান বাড়ছে : ঝড়ে পড়ছে দশ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতের ব্যবধান প্রতিবছরই বাড়ছে। যদিও প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে তা কমছে। মাধ্যমিকে ২০১১ সালে গড়ে ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক ছিলেন। পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালে এসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হয়েছে ৪২: ১ । যদিও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী, আগামী বছরের মধ্যে মাধ্যমিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৩০ করার কথা রয়েছে। শিক্ষার গুণগত মানের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই অনুপাত কমার পরিবর্তে প্রতিবছরই বাড়ছে।

নানাবিধ পদক্ষেপ সত্ত্বেও মাধ্যমিকে ঝড়ে পড়ার হারও কমছে না। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষকের সংখ্যাও নির্ধারিত কোটার চেয়ে কম। গত পাঁচ বছরে ঝড়ে পড়ছে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী।

সরকারের বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ‘শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০১৬’ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

রোববার বিকেলে রাজধানীর ব্যানবেইস ভবনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে মাধ্যমিক স্তরে বেশ কিছু ইতিবাচক দিকের উন্নতিও হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, মাধ্যমিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের হার এক বছরের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে, ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বিন্দু। তবে এখনো ২৯ শতাংশ শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাননি। এ ছাড়া ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট, নিরাপদ পানি, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, মাল্টিমিডিয়া সুবিধা ক্রমে বাড়ছে। বেশির ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখন এই সুবিধা আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ আরও বেশি চ্যালেঞ্জ। এটা ঠিক যে এই স্তরে ঝরে পড়ার হার এখনো বেশি। আগে আরও বেশি ছিল।

জানতে চাইলে সাবেক শিক্ষা সচিব মো: নজরুল ইসলাম খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, “শিক্ষা প্রশাসনে বেসরকারি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। মাধ্যমিক স্তুরের সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের পরামর্শ দেয়ার মানুষের অভাব।”

“শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাদের কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হবে। সমস্যা সমাধানে মাথা খাটাতে হবে। নতুন কিছু করার জন্য সময় দিতে হবে। কারণে-অকারণে গণমাধ্যমে হাজির হলে আসল কাজ করার সময় পাওয়া যায় না,” যোগ করেন সাবেক এই শিক্ষাসচিব।

কারিগরিতে শিক্ষার্থী কমছে

সরকার ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে এই হার কমেছে। ২০১৫ সালে ছিল ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সেটা ২০১৬ সালে সামান্য কমে হয়েছে ১৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলম দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শাখায় দুর্নীতিবাজদের আখড়া্। কারিগরি বোর্ড ও অধিদপ্তরে জেঁকে বসেছে একাধিক সিন্ডিকেট। স্টেপ নামের প্রকল্প চলছে বিশ্বব্যাংকের টাকায়। সেখানেও লুটপাট চলছে। কিন্তু অনেকেই মুখ খুলছেন না নানা কারণে।

তিনি বলেন, কারিগরি খাতের উন্নতির নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব বছরের বেশিরভাগ সময়ই বিদেশে ঘুরে বেড়ান। আজিজ গ্রুপ আর নজমুল গ্রুপ নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে কারিগরি শিক্ষাখাত।

৪০ শতাংশ ছাত্রী ঝরে পড়ছে

মাধ্যমিকে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রী ভর্তি হয় বেশি। ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হারও বেশি। এখন মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ৪২ শতাংশ ছাত্রী দশম শ্রেণি শেষ করার আগেই ঝরে পড়ছে। অবশ্য এই হার এক বছরের ব্যবধানে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার গড় হার ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে মাধ্যমিক পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পৌঁছালে এই হার কমে। উচ্চমাধ্যমিকে ২০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। তবে ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার প্রায় ২৪ শতাংশ। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ১৯ শতাংশের কিছু বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে ২০০৮ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ২০০৯ সালে ৫৫ দশমিক ৩১, ২০১০ সালে ৫৫ দশমিক ২৬, ২০১১ সালে ৫৩ দশমিক ২৮, ২০১২ সালে ৪৪ দশমিক ৬৫, ২০১৩ সালে ৪৩ দশমিক ১৮, ২০১৪ সালে ৪১ দশমিক ৫৯, ২০১৫ সালে ৪০ দশমিক ২৯ এবং ২০১৬ সালে ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০১৫ সালে ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ ছেলে এবং ৪৫ দশমিক ৯২ শতাংশ মেয়ে ঝরে পড়েছে। এ হিসাবে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে এবং মেয়েদের তিন দশমিক ৭৩ শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ঝরে পড়ার হার সাত দশমিক ০৬ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে পাঁচ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অষ্টম শ্রেণিতে নয় দশমিক ৯১ শতাংশ, নবম শ্রেণিতে আট দশমিক ৯১ শতাংশ এবং দশম শ্রেণিতে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

উচ্চ মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার চিত্র

ব্যানবেইসের এ প্রতিবেদন বলছে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০০৮ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ২০০৯ সালে ৪২ দশমিক ১১, ২০১০ সালে ৩৭ দশমিক ৩৬, ২০১১ সালে ৩৭ দশমিক ১৩, ২০১২ সালে ২১ দশমিক ৮০, ২০১৩ সালে ২১ দশমিক ৬০, ২০১৪ সালে ২১ দশমিক ৩৭, ২০১৫ সালে ২২ দশমিক ৭০ এবং ২০১৬ সালে একটু কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে ঝরে পড়ার হার যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ছাত্রী ঝড়ে পড়ার অন্যতম কারণ বাল্যবিবাহ। গবেষণায় দেখা গেছে, অষ্টম শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি ছাত্রীর বিয়ে হয়। এ ছাড়া ছাত্রী উপবৃত্তি প্রকল্পে রয়েছে দুর্নীতি। আরও রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাসহ আরও কিছু বাস্তবসম্মত কারণ।

এনজিওগুলোর ভূমিকা প্রসঙ্গে মাজহারুল হান্নান বলেন, গণ সাক্ষরতা অভিযান হলো শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সবগুলো এনজিওর মোর্চা। গত ৩০ বছর যাবত তারা কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে থেকে এনেছেন কিন্তু কোনো খাতে কোনো উন্নতির চিহ্ন নেই। যা কিছু কাজের কাজ করছেন সরকারগুলোই। এনজিও প্রধানদের দেখি জনপ্রিয় গণমাধ্যমে বক্তৃতা দিতে। সব বিষয়েই তারা বিবৃতি দেন কিন্তু বিদেশে থেকে শিক্ষার উন্নতির নামে আনা টাকা কোথায় খরচ করে কতটুকু উন্নতি করলেন তা বলছেন না। শিক্ষা সাংবাদিকদের উচিত এসব এনজিওর কাজকর্মের ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা।

তবু নারী শিক্ষক কম

১৯৯৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) নারী শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। এতে অন্তত ৩০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, ২০১০ সালে হাওর-বাওরসহ  আট জেলায় ৩০ শতাংশ নারী শিক্ষকের বাধ্যবাধকতা শিথির করেছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, এই ৩০ শতাংশ কোটা পূরণ হচ্ছে না। মাধ্যমিকে মোট বিদ্যালয়ের প্রায় ৯৫ ভাগই বেসরকারি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কোটা নেই।

২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যানবেইসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছয় বছরে প্রাথমিক-পরবর্তী শিক্ষার স্তরে নারী শিক্ষকের হার মাত্র আড়াই শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক-পরবর্তী শিক্ষার স্তরে মোট শিক্ষকের মধ্যে নারী ২২ দশমিক ১০ শতাংশ। বাকি সবাই পুরুষ। আলাদাভাবে মাধ্যমিক স্তরে নাদেরী শিক্ষকের হার ২৫ শতাংশের কিছু বেশি। তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক এখন নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি (৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ)। শিক্ষার এই স্তরে ৬০ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080380439758301