মানসম্মত শিক্ষার জন্য দরকার  শিক্ষকের জীবন মান উন্নয়ন - দৈনিকশিক্ষা

মানসম্মত শিক্ষার জন্য দরকার শিক্ষকের জীবন মান উন্নয়ন

বিশ্বজিৎ রায় |

অতি অল্পসময়ের মধ্যে আমাদের এই সোনার  বাংলাদেশ তার নির্দিষ্ট লক্ষ অর্জন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বীকৃতি লাভ করেছি। জিডিপি ৭ শতাংশের উপরে।  সরকার আশা করছে আগামী বছর জিডিপি ৭ দশমিক ৮৭ হবে। ২০২১  সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে যাবে আমাদের এ সোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। হবে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনীতির পরাশক্তি। সংসদে প্রধানমন্ত্রী তার দেওয়া বক্তৃতায় বলেছেন আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা  অর্জন করেছি আর ২০৩০ এর মধ্যে এম, ডি, জি অর্জন করে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী  ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ  দিয়েছেন। এ যাবৎ কালের মধ্যে দেওয়া সর্বোচ্চ বাজেট। মাথা পিছু আয় ১৬০২ মার্কিন ডলার। বেকার সমস্যা সমাধান কল্পে ১০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ চলছে। আরও ১০০টি অর্থ নৈতিক অঞল গড়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

পদ্মা বহুমূখী সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নুতন সংযোজন। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে অভূত পূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদানের জন্য শিক্ষমন্ত্রী ব্যাক্তিগত ক্যাটাগরিতে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল এওয়ার্ড ২০১৭ পাচ্ছেন। প্রতিবছর ১লা ৩৬ কোটি বই শিক্ষার্থীর হাতে পৌছিয়ে যাচ্ছে। মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ পৃথিবীর ১৮৮ দেশের মধ্যে ১৩৯তম। ১লা  জানুয়ারি বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসংশনীয়। এমনই একটি গর্বিত দেশের নাগরিক হয়ে দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের বেহালদশা ভাবাই যায়না। জুন মাসের বেতনের অর্ডার হয়েছে গত ২৪ জুলাই ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ জুন ও জুলাই এ দু মাস  বেতন পায়নি বেসরকারি  শিক্ষরা। যারা মুলত শুধুমাত্র সরকারি বেতন ভাতার উপর নির্ভরশীল তারা কী ভাবে  চলেছে তা ভাবার বিষয়। সামাজিক ভাবে যেমন বৈষম্যে স্বীকার হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবে তো আছে। একই সিলেবাস পড়িয়ে সরকারি বেসরকারি বেতন বৈষম্য স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও থাকবে তা ভাবা যায়না। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্রনোদিত হয়ে সাবর্বজনীন বৈশাখী ভাতা প্রচলন ঘটিয়েছিলেন।

প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা কর্মচারি এ ভাতা পেয়ে মহা আনন্দে বৈশাখ উদযাপন করলেন। আর বেসরকারি  শিক্ষকরা  ভাতা ছাড়া আড়ম্বরে বৈশাখী  উৎসব পালন করল। লজ্জ্বায় মাথা নত হলো তাদের। অভিভাবকের বঞ্চনা পরিবার পরিজন দেখল। এ বঞ্চনা উত্তরণের কোন উপায় নেই তার হাতে। এ বঞ্চনা সরকারের উচ্চ মহলে জানানোর কম চেষ্টা করেনি তারা। সরকারের কিছু কিছু কর্তাব্যক্তি এ নিয়ে মন্তব্য করলেও তা কাজে আসেনি। আমরা বেসরকারি  শিক্ষরা আসান্বিত হয়েছিলাম সেই দিন যে দিন অর্থমন্ত্রী নিজেই বৈশাখী ভাতা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন “বেসরকারি  শিক্ষকদের বৈশাখী  ভাতা পাওয়া উচিৎ”। ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারিরা পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা পচ্ছেনা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানতে পারলাম যে বেসরকারিদের জন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেওয়ার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু ৩ শতাংশ দেওয়ার বিষয়টি ২০১৫ এর বেতন গেজেট এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কী না প্রশ্ন থেকে যায়? টাইমস্কেল হোক আর অটোমেশন হোক সরকারি চাকুরীজীবীরা পেলেও বেসরকারি শিক্ষকরা না পাওয়ায় হাজার শিক্ষক আজ দুশ্চিন্তা গ্রস্থ। টাইম স্কেল বিষয়টি  মিমাংসিত বিষয়।

২০১৫ এর বেতন গেজেট প্রকাশের ফলে বিষয়টি অমিমাংসীত হয়েছে যার জট এখনও খুললো না। বদলি  হওয়াটা খুবই জরুরী। বদলী ব্যবস্থা না থাকায় জড় পদার্থের মত অবস্থা হয় বেসরকারি শিক্ষকদের।  পেশায় কোন বৈচিত্র নেই। সম্প্রতি  উদ্ভট এক সমস্যা শিক্ষদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সমস্যাটি হল কল্যাণ ও অবসর হতে ৪ শতাংশ অতিরিক্ত কর্তন। ক্ষোভে দু:খে ফেটে পড়েছিল শিক্ষক সমাজ। বিভিন্ন শিক্ষকসংঘঠনগুলো কর্মসূচি আওড়ালো। কিছু সংগঠন এখনো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক সংগঠন গুলোর প্রতিনিধিদের নেওয়া সিদ্ধান্ত গুলো মানতে পারছেনা সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ। সর্বশেষ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত  হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকসংগঠন গুলো তা মানতে পারছেনা, তাদের দাবী কর্তনের প্রজ্ঞাপন একেবারে বাতিল হোক। শিক্ষকনেতাদের বক্তব্য, ক্ষমতার মসনদে থেকে যে নেতা শিক্ষদের কিছু দিতে  পারছেনা, তারা আবার নেওয়ার প্রস্তাব দেয় কী করে। বর্তমানে বাজারে চালের দাম ৫০ টাকা, খাসীর মাংস ৭৫০টাকা সোয়াবিন ১০০টাকা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশ চুম্বি। উচ্চ মূল্যের বাজারে ১২ হাজার ৫০০টাকার স্কেলে একজন শিক্ষকের মানসম্মত ভাবে বেচে থাকা কঠিন কাজ তারপরও বেতন সঠিক সময়ে আসেনা। ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেলের একজন শিক্ষক সর্বসাকুল্যে বেতন আসে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা যা একজন সরকারি পিয়ন থেকে অনেক কম। বর্তমান বাজরে দ্রব্যমূল্যের দাম যে ভাবে চড়া তাতে একজন রেজি:প্রাথমিকে যারা শিক্ষকতা করত তারা সম্মানি পেত ৫০০টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০টাকা।

আজ জাতীয়করণের পর তারা একজন বেসরকারি গ্রাজুয়েট  শিক্ষকের চেয়ে বেশী বেতন পাচ্ছে। সে জন্যেইতো সাবেক  শিক্ষাসচিব ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরের  কিউরেটর এন আই খান মহোদয় বরাবরই সরকারি -বেসরকারি বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণের কথা বলেছেন এবং তার বিদায়ী স্বাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয়করণের একটি হিস্যা দিয়েছিলেন। তার বিদায়ের পর বিষয়টি একেবারে এগোয়নি। ৩১ জুন প্রকাশিত এক সংবাদে শিক্ষার মান নিয়ে কুমিল্লার বোর্ডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার মানের জন্য রাষ্ট্র, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছেন  অর্থাৎ আরও আরও রাষ্ট্রকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক টিভি টক শোতে মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নের কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন সময়মত বেতন না পাওয়াটাও মান সম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রেও একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। বিষয় গুলির প্রতিশিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টিআকর্ষন করছি।

বিশ্বজিৎ রায়: শিক্ষক, তালা, সাতক্ষীরা।

[মতামতের জন্য সম্পাদক]

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058619976043701